সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

চিঠি দিও প্রতিদিন : ডা: মালিহা পারভীন


প্রকাশিত:
৮ মার্চ ২০২৩ ০২:৫৭

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৫৬

 ছবিঃ ডা: মালিহা পারভীন

রাস্তার মোড়ে গায়ে লাল কোট মাথায় সাহেবি কালো টুপি পড়ে সে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে । রোদবৃষ্টিতে ভ্রুক্ষেপ নেই কোনো । বুক পকেটে ঝুলে আছে জং ধরা তালা। শুন্য উদর। অভুক্ত ধুলিধূসর ইস্পাতের ঠোঁট।
এর ধারে কাছে খুব একটা দেখা যায় না কাউকে। দু 'একজন পথচারী কখনো হয়তো করুনা নিয়ে তাকায় ওদিকে ।
আমিও দেখি এই লাল বাক্সটিকে মাঝামধ্যে । ওর চোখে চোখ রাখতেই হুড়মুড়িয়ে আসে আমাদের কৈশোর -যৌবনকাল, নীল সাদা রঙ মুখবন্ধ খাম, সোনালি পিয়ন, লুকিয়ে চিঠি পড়ার সেই বিবশ অপরাহ্ন।!
কালির কলমে গোটা গোটা অক্ষরে নিজের নাম লিখা হলুদ খাম চোখে ভাসে এখনো ! প্রতি অক্ষরে মিশে থাকতো চিঠির প্রেরক বাবা, মা, ভাই, বোন, প্রিয়জনের মুখ - সম্পর্কের সেতু।
চিঠির বাক্সটি দেখলে মনে পড়ে স্নেহ ভালবাসার সেইসব সম্বোধন , 'পর সমাচার এই যে' 'কেমন আছো' , 'শরীরের যত্ন নিও'' ‘পত্রের উত্তর দিও' --এইসব সরল মায়ামাখা শব্দগুলি। মন কেমন করে উঠে !
আমাদের যুগের অনেকেরই সংগ্রহে আছে হয়তো আজো সেইসব মূল্যবান চিঠি যার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া বাবা মা ভাইবোন প্রিয়জনের গন্ধ পাই, স্পর্শ পাই। খুঁজে পাই হারানো দিন। ।
বর্তমানেরর মেসেজ, অন্তর্জাল, ফেসবুক, মেইল, ইনবক্স কত কি প্রকাশের মাধ্যম ! ছকে বাঁধা যান্ত্রিক জীবনের মত ছকে বাঁধা কুশল, ভাব বিনিময়। হাতে লিখা চিঠির সেই মন কেমন করা আবেগ নেই। নেই কাব্যিকতা, গভীরতা, স্থায়িত্বও !

আমরা এখন চিঠি লিখিনা, পাইনা। অথবা লিখলেও ধৈর্য নিয়ে তা কেউ পড়বে কিনা বিশেষ করে এখনকার প্রজন্ম তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
তবু থাকুক পথের মোড়ের ওই মরচে পরা লাল কালো টুপি পরা চিঠির বাক্স। স্মৃতিসিন্দুক হয়ে মাঝেমাঝে ফিরিয়ে দিক সোনালি সেইসব হিরন্ময় মুহুর্ত কিছু !
সহসা বেজে উঠুক অন্তরে সেই গান --'চিঠি দিও প্রতিদিন, নইলে থাকতে পারবো না --'

 

ডা: মালিহা পারভীন
কবি ও কথা সাহিত্যিক

সেগুনবাগিচা, ঢাকা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top