সংক্ষিপ্ত হবে এবারের বাজেট অধিবেশন, মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব


প্রকাশিত:
১৩ মে ২০২০ ২০:৪৭

আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ০২:৪৫

ফাইল ছবি

 

প্রভাত ফেরী: করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষায় আগামী মাসে বসছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরই মধ্যে বাজেট উত্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বাজেট অধিবেশনের প্রস্তুতি শুরু করেছে সংসদ সচিবালয়। সংসদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি না বদলালে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে সংক্ষিপ্ত হবে আসন্ন বাজেট অধিবেশন। তালিকা তৈরি করে এমপিদের অধিবেশনে আসতে বলা হবে। সে ক্ষেত্রে দুজন এমপির মধ্যে যাতে যথেষ্ট দূরত্ব থাকে সেটা নিশ্চিত করা হবে।

সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষায় মহামারীর মধ্যে ১৮ এপ্রিল বসেছিল জাতীয় সংসদের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন। সংবিধানের ‘নিয়ম রক্ষার’ ওই সপ্তম অধিবেশন মাত্র ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট পরই সমাপ্তি হয়। অধিবেশনে অংশ নেওয়া প্রধানমন্ত্রীসহ সব সদস্যই মাস্ক ও গ্লাভস পরেছিলেন। অনেকের মাথায় সার্জিকাল টুপিও দেখা গিয়েছিল। আসন্ন বাজেট অধিবেশনেও মাস্ক, গ্লাভস পরে নিরাপদ দূরত্বের আসনে বসবেন সংসদ সদস্যরা।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৮ এপ্রিল ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন বসে জাতীয় সংসদে। যেখানে আইনপ্রণেতাদের বসানো হয় দূরত্ব বজায় রেখে। কিন্তু অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের ফর্দ যেখানে তুলে ধরা হবে, বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ সেই অধিবেশনটি কেমন হতে যাচ্ছে তা নিয়েই চলছে বিশ্লেষণ। সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর মতে আগামী অধিবেশন কীভাবে আয়োজন করা হবে তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের যেহেতু এই পরিস্থিতিতে একটি অধিবেশন করার অভিজ্ঞতা আছে প্রয়োজনে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাব। সব কিছু নির্ভর করছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর।

সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোজার ঈদের আগেই অধিবেশন আহ্বান করা হতে পারে। বাজেট অধিবেশন সাধারণত দীর্ঘ হয়। অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাবের পর তা নিয়ে পুরো অধিবেশন জুড়ে আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। গত বছর বাজেট অধিবেশন ২১ কার্যদিবসের ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংসদের একজন হুইপ বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যদি ভালোর দিকে না যায় তাহলে একটা তালিকা তৈরি করে এমপিদের অধিবেশনে আসতে বলা হবে। সে ক্ষেত্রে দুজন এমপির মধ্যে যাতে যথেষ্ট দূরত্ব থাকে সেটা নিশ্চিত করা হবে। কোরাম পূর্ণ যাতে হয় সেটা অগ্রাধিকারে রাখা হবে। অধিবেশনে কার্যদিবস ও আসনের দূরত্ব অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের বৈঠকে থাকতে বলা হবে। একজন হয়তো পরপর দুদিন সংসদে যোগ দিলেন না। এভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এমপিদের সংসদে আনা হবে। ওই হুইপ আরও বলেন, এ বিষয়ে আগামী মাসের শুরুতে সিদ্ধান্ত হবে।

সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিলের অধিবেশনে মোট ১৩৫ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন। করোনাভাইরাসজনিত কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে পূর্ব পরিকল্পনা মতোই তুলনামূলক কম সদস্য বৈঠকে অংশ নেন। সংসদ বৈঠকের কোরাম পূর্ণ হওয়ার জন্য ন্যূনতম ৬০ জন বা তার কিছু বেশি সদস্য অধিবেশনে উপস্থিত থাকবেন বলে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সংসদ কক্ষে আইন প্রণেতাদের আসনের মাঝে দূরত্বও রাখা হয়। ওই অধিবেশনে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতেও লাগাম টানা হয়। শুধু যাদের প্রয়োজন তাদেরকে সংসদকে ঢুকতে দেওয়া হয়। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অনুযায়ী বাজেট অধিবেশন চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেহেতু বাজেট অধিবেশন একটু দীর্ঘ হয়, সে জন্য সংসদ সদস্যদের আসনে বসানোর বিষয়েও দূরত্ব বজায় রাখা হতে পারে।

বাজেটের নথি বিতরণ, সংসদ সদস্যদের জন্য বিভিন্ন নথি সংসদ কক্ষে পৌঁছানো, গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মধ্যে নথি বিতরণসহ বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে বেশ কিছু প্রস্তুতি নিতে হয় সংসদ সচিবালয়কে। এসব কাজে কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে সংসদের গণসংযোগ শাখার পরিচালক তারিক মাহমুদ বলেন, অধিবেশন আহ্বান করার পর কর্তৃপক্ষ এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, আগামী ১১ জুন সংসদে বাজেট উত্থাপন হবে এমনটা ধরে নিয়েই তাদের প্রস্তুতি চলছে। এর আগে ওইদিন সংসদে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেওয়া হবে। প্রতিবছরই বাজেট পেশ করার আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নেওয়ার সুবিধার্থে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক আয়োজন করা হয় এবং রাষ্ট্রপতির সুপারিশ নেওয়ার সুবিধার্থে সংসদ ভবনে তার উপস্থিতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এবারও তাই হতে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস সঙ্কট পরবর্তী অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের (৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়) তুলনায় এর আকার প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। এটি হবে স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৯তম বাজেট এবং বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট।


বিষয়: করোনা


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top