সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


চেতনার বাতিঘর জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চিরবিদায়


প্রকাশিত:
১৫ মে ২০২০ ১০:৪৭

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:১৮

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

 

প্রভাত ফেরী: বাংলা একাডেমির সভাপতি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার ছেলে আনন্দ জামান সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ৪টা ৫৫ মিনিটে তার বাবার মৃত্যু হয়।

তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। হৃদরোগ, কিডনি ও ফুসফুসে জটিলতা, পারকিনসন্স ডিজিজ এবং প্রোস্টেটের সমস্যার পাশাপাশি শেষ দিকে তার রক্তেও ইনফেকশন দেখা দিয়েছিল। অসুস্থতা বাড়তে থাকায় গত ২৭ এপ্রিল জাতীয় অধ্যাপককে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৯ মে তাকে নেওয়া হয়েছিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। তার মৃত্যুর সঙ্গে যবনিকা ঘটল এক কিংবদন্তির জীবনের।

তিনি স্ত্রী সিদ্দিকা জামান, দুই মেয়ে এবং এক ছেলে সহ অংসখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি শোকবার্তায় বলেছেন, ‘ড. আনিসুজ্জামান ছিলেন বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলাদেশে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে তিনি অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। তার মৃত্যু বাংলাদেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে। ৪৭-এর দেশভাগের পর তাঁর পরিবার প্রথমে বাংলাদেশের খুলনায় আসেন। পরে ঢাকায় স্থায়ী হন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স ও ১৯৫৭ সালে এম.এ. পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন আনিসুজ্জামান। এই ভূখণ্ডে ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদবিরোধী নানা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তার।

আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯) ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তাঁর গবেষণা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

আনিসুজ্জামান শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। প্রবন্ধ গবেষণায় অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। শিক্ষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ পদক প্রদান করা হয়।

সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাঁকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ ছাড়া তিনি ১৯৯৩ ও ২০১৭ সালে দুবার আনন্দবাজার পত্রিকা কর্তৃক প্রদত্ত আনন্দ পুরস্কার, ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট ডিগ্রি এবং ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন কিন্তু সাহিত্য- গবেষণা, লেখালেখি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য তাঁর ভূমিকা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তার রচিত ও সম্পাদিত বহু বাংলা ও ইংরেজি বই, শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসের বিবেচনায় খুবই গুরুত্ব বহন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি ভাবনার ক্ষেত্রে চেতনার বাতিঘরের ভূমিকা পালন করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। একজন শিক্ষক, একজন সমাজ-মনস্ক মানুষ, প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী একজন অনন্য সাধারণ মানুষ হিসেবে তাকে আমরা সব সময় বিবেচনা করি। ১৯৬১ সালের রবীন্দ্র জন্ম-শতবর্ষ অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top