সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


আজ শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস


প্রকাশিত:
১৭ মে ২০২০ ১৯:১৯

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৩৬

ফাইল ছবি

 

প্রভাত ফেরী: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সপরিবারে অন্য সদস্যদের হত্যার সময় স্বামীর চাকরি সূত্রে জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। স্বামী-সন্তানের পাশাপাশি ছোট বোন শেখ রেহানাও সে সময় জার্মানিতে তার সঙ্গে অবস্থান করায় বেঁচে যান তারা। এরপর ছয় বছর এ দেশে-ও দেশে কাটিয়ে দেন শেখ হাসিনা-ড. ওয়াজেদ দম্পতি। দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফেরেন। এদিন তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিকালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকায় নামলে বিমানবন্দরে লাখো মানুষ তাকে স্বাগত জানান।

দিনটি উপলক্ষে প্রতিবছর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু এ বছর বৈশি^ক মহামারি করোনার কারণে সৃষ্ট সঙ্কটে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সব ধরনের জনসমাগমপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করে আসছে আওয়ামী লীগ। ফলে ঘরে বসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনায় পরম করুণাময়ের নিকট প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে এ দেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সেদিনের দিনটি এমন নিষ্কলুষ ছিল না। রাজনীতির মতোই প্রকৃতিও সেদিন ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ।

১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ওই দিনটি ছিল রোববার। সারা দেশ থেকে আসা লাখো মানুষ সেদিন তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান, ভালোবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত লাখো মানুষের ঢল নামে। সেদিনের মেঘের গর্জন, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বদলা নেওয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল, আর অবিরাম মুষলধারে ভারি বর্ষণে যেন ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার মাটিতে পিতৃহত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন।

ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে সেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সব হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। তিনি বলেন, আমার আর হারাবার কিছুই নেই। বাবা-মা, ছোটভাই রাসেলসহ সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।

কিন্তু ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পথ মসৃণ ছিল না। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে তাকে। একবার নয়, দুবার নয়, শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কখনও নিজ বাসভবনে, কখনও জনসভায় আবার কখনও তার গাড়িবহরে, ক্ষমতায় যাতে শেখ হাসিনা কোনোভাবে যেতে না পারেন। ষড়যন্ত্রের গোপন জাল বিছিয়ে রেখেছিল রাষ্ট্র ক্ষমতার ভেতরে মুখ লুকিয়ে যারা বেঁচেছিল। গোটা আশির দশক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

কিন্তু আন্দোলনের কোনো ফসলই তাকে ঘরে তুলতে দেয়নি নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারী মহল। যার ফলশ্রুতিতে ’৯১-এর জাতীয় নির্বাচনে পরাজয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সর্বাধিক ত্যাগ স্বীকার করার পরেও এ পরাজয় অপ্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে ১৯৯৪-১৯৯৬ সালে বিএনপিবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা। তার আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং ২৩ জুন ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এরপরের ইতিহাস সবারই জানা। দেশ ও জনগণের কল্যাণে অভূতপূর্ব অবদান রাখায় দেশের মানুষ তাকে পরপর টানা তিনবারসহ মোট চারবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top