লঞ্চ ও গণপরিবহন চালু, কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি


প্রকাশিত:
১ জুন ২০২০ ২২:০৮

আপডেট:
১ জুন ২০২০ ২২:২০

 

প্রভাত ফেরী: জরুরি পরিসেবা ছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো অফিস, দোকানপাটসহ সবকিছু। গতকাল রোববার থেকে সবকিছু চালু করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। কিন্তু শর্ত ছিলো সবকিছুতে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। আর সেই শর্তে অনুমতি দেয়া হয়েছিল গণপরিবহন চালুর। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় তা মানা হচ্ছে না। অল্পসংখ্যক গণপরিবহনে শুধু শারীরিক দূরত্বে বসার মাধ্যমেই স্বাস্থ্যবিধি সীমাবদ্ধ থাকলেও বেশিরভাগ গণপরিবহনে সেটিও মানা হয়নি।

বিশেষ করে সরকারি পরিবহনেও সিট ফাঁকা রেখে বসতে দেখা যায়নি। বাসে ছিল না হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশকের মতো কোনো সুরক্ষা সামগ্রী। যেটুকু সতর্কতা ছিল তা শুধু যাত্রীদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে। কমলাপুরসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানা হলেও সারাদেশে যাত্রীবাহী নৌযানে উপেক্ষিত ছিল শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে পুরোদমে চালু হচ্ছে বাস চলাচল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানোসহ শর্তসাপেক্ষে বাস ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে রোববার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। আজ ১ জুন থেকে সারাদেশে এই ভাড়া কার্যকর হবে।

গণপরিবহন পরিচালনা ক্ষেত্রে সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু কারিগরি নির্দেশনা দিয়ে বলেছে, পরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রাখার পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশনে আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা মাপার জন্য স্টেশনে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার রাখতে হবে। প্রতিবার বাস, ট্রেন বা লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার আগে সিট, কেবিন, পরিবহনের মেঝে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জনগণের জন্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলো পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সিট কাভারগুলোকে প্রতিনিয়ত ধোয়া, পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যাত্রীদের অপেক্ষা করার স্থানে মাস্ক, গ্লাভস ও জীবাণুমুক্তকরণ দ্রব্যাদির পর্যাপ্ত মজুত থাকতে হবে। সব পরিবহনে হাতে ধরা থার্মোমিটার থাকতে হবে। সারিবদ্ধভাবে ওঠা এবং নামার সময় যাত্রীদের পরস্পর থেকে এক মিটারেরও বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।

কিন্তু সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গণপরিবহনে চলতে দেখা গেছে। কোনো কোনো পরিবহন ভাড়া বাড়ালেও মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। বেশিরভাগ বাসে ছিল না হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশকের মতো কোনো সুরক্ষাসামগ্রী। এমনকি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাসের অধিকাংশেই ছিল না শারীরিক দূরত্ব। গাড়ির প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক রাখার কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ১১-০৩০৬ নম্বর গাড়িতে আসন ফাঁকা রেখে শারীরিক দূরত্ব মানা হয়নি। যানবাহনটিতে প্রতি আসনেই যাত্রী দেখা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি স্টাফ বাসেও একই চিত্র দেখা গেছে। সকালে ফকিরাপুল মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, একের পর এক সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাস আসছে। বাসগুলোর অধিকাংশেই ছিল না সামাজিক দূরত্ব। পাশাপাশি থাকা দুটি আসনেই যাত্রী বসানো হয়েছে। গাড়ির প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক রাখার কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি। কিছু গাড়ি ব্যতিক্রম থাকলেও তাতে শুধু আসন ফাঁকা ছাড়া অন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের গাড়িগুলোর অধিকাংশই লিজের মাধ্যমে নেওয়া।

আর গাড়ির আসনগুলো একেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে বরাদ্দ। তাই কেউ তার আসন ফাঁকা রাখতে চায় না। সবাই উঠে বসে যায়। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করবেন। নগরীতে চলাচলকারী বেসরকারি বাসগুলোতে অর্ধেক আসন ফাঁকা না রেখে প্রায় সব আসনেই যাত্রী নিতে দেখা গেছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, বাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না কেউ। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। জীবাণুনাশক স্প্রেও করা হচ্ছে না।

সোমবার সকালে খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় দেখা গেছে গণপরিবহনের সংখ্যা খুবই কম। তবে যেক’টি ছিল সেগুলোর আসন ভর্তি। এ অবস্থায় পরিবহনগুলোর হেলপাররা যাত্রী ডাকতে থাকলেও সাধারণ মানুষকে বাসগুলোতে উঠতে কম দেখা গেছে। তুলনামূলক অল্প দূরত্বে অনেকেই হেঁটে অফিসের উদ্দেশে যাত্রা করেন। আবার কেউ কেউ রিকশা কিংবা সিএনজিতে অফিসের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বাসাবো এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কর্মজীবীরা পরিবহনের জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করছেন। এ এলাকাটি থেকে শহরের রাজারবাগ, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা ও গুলিস্তান রুটে ছোট লেগুনা চলাচল করে। এই পরিবহনগুলোতে কোনো আসন ফাঁকা নেই। যাত্রীরা গাদাগাদি করে বসেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসন ফাঁকা রেখে অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

তবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে আগের থেকে দ্বিগুণ। রোববার রাজধানীতে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু হলেও আজ সোমবার থেকে পুরোদমে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, সোমবার থেকে পরিবহন চালু করব। স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারের অন্যান্য নির্দেশনা মানার প্রস্তুতি হিসেবে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েই আমরা যানবাহন নামাব।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানোসহ শর্তসাপেক্ষে বাস ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। সোমবার থেকে সারাদেশে এই ভাড়া কার্যকর হবে। রোববার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে সরকার আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে বাস/মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে গত ৩ মে প্রজ্ঞাপনমূলে উল্লিখিত বিদ্যমান ভাড়া যাত্রীপ্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ১ টাকা ২৪ পয়সা থেকে ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস-মিনিবাস চলাচলে বিদ্যমান ভাড়া যাত্রীপ্রতি কিলোমিটারে ৫ ও ৭ টাকা থেকে ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলা (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলে বাস ভাড়াপ্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৬০ পয়সার ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top