সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা: বাংলাদেশে পাঁচ জেলার আট লাখ মানুষ পানিবন্দি


প্রকাশিত:
৫ জুলাই ২০২০ ২২:১৯

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০০

ফাইল ছবি

 

প্রভাত ফেরী: সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মুন্সীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জের কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। জামালপুর ও কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও এই দুই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। পাঁচ জেলায় এখনও আট লাখের মতো মানুষ পানিবন্দি। এ ছাড়া রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। জেলাভিত্তিক খবর-

সিরাজগঞ্জ : জেলার যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পাঁচ উপজেলার প্রায় ৩৩ ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ৩৫৬৫ হেক্টর জমির ফসল। অন্যদিকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পানিবন্দি মানুষ বিভিন্ন বাঁধের ওপর আশ্রয় নিচ্ছে। সে সঙ্গে গবাদিপশু নিয়ে পড়েছে বিপাকে। গবাদিপশু নিয়ে রাত কাটাচ্ছে এক সঙ্গে। জেলার পাঁচ উপজেলার ৩৩ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ২১৬টি গ্রামের ৩৪ হাজার ৬৮৪টি পরিবারের ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০৬০টি ঘরবাড়ি, সাড়ে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা ও বাঁধ তলিয়ে গেছে এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।

টাঙ্গাইল : জেলার নদীগুলোতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের ৪০টি স্থানে লিকেজ দেখা দিয়েছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানায়, শুক্রবার সকাল ৬টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া একই দিন সকাল ৯টায় ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ও ঝিনাই নদীর পানি ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবার পানি বাড়তে থাকে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

ইতোমধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলার ১০১টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গ্রামের অভ্যন্তরীণ কাঁচা সড়কগুলো তলিয়ে মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি লিকেজ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে তাড়াই ও গাড়াবাড়ি সড়কে ১০টি পয়েন্ট অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভূঞাপুর উপজেলার তাড়াই, গাড়াবাড়ি, চুকাইনগর, অর্জুনা ও কুঠিবয়ড়াসহ ৭টি গাইড বাঁধ পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ লিকেজ বন্ধ করতে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড দিন-রাত কাজ করছে। পাউবোর কর্মীরা লিজেক বন্ধে বালি ও জিওব্যাগ ব্যবহার করছে।

জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কে বালি ও জিওব্যাগ মজুদ করে রাখা হয়েছে। এ সড়ক ভেঙে গেলে টাঙ্গাইলের গোপালপুর, ঘাটাইল, মধুপুর ও কালিহাতী এ চারটি উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। টাঙ্গাইলের সব নদীতে আবার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, গোপালপুর ও নাগরপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্ন ও চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

দোহার-নবাবগঞ্জ : পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঢাকার দোহারের নয়াবাড়ী ধোয়াইর বাজার সংলগ্ন পদ্মা রক্ষা বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ফলে পশ্চিম ধোয়াইর এলাকার বাসিন্দারা চরম ঝুঁকিতে রাত-দিন পার করছে। স্থানীয় জনসাধারণের দাবি, এলাকাটিকে পদ্মার হাত থেকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অচিরেই পদ্মা নদীর পেটে চলে যাবে ধোয়াইর বাজারসহ আশপাশ এলাকা।

ধোয়াইর বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদী শাসনে বাঁধ নির্মাণকাজ চলমান থাকলেও ধীরগতিতে কাজ করার কারণে নয়াবাড়ীর ধোয়াইর বাজারসহ স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা ও কৃষিজমিগুলো চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় এসব গ্রামীণ অবকাঠমো পদ্মা নদীগর্ভে চলে যেতে পারে বলে মনে করেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দা পিরু মিয়া জানান, এমনিতেই করোনাভাইরাসের কারণে দোহারের চরাঞ্চলের অভাবি মানুষগুলো চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করছে, তার মধ্যে কয়েক দিন ধরে ধোয়াইরে বাঁধ অতিক্রম করে তীব্র বেগে গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের এমনিতেই কাজ নেই, এখন কী করবে তারা।

কোথায় যাবে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করলে। নয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নান বলেন, চলমান মৌসুমে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাঁধ অতিক্রম করে পানি গ্রামে প্রবেশ করেছে। এখনও মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

মুন্সীগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির তীব্র স্রোত টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পদ্মা নদী দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ফলে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্রতিনিয়ত পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। সে সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে পদ্মা নদীর তীর অঞ্চলে ভাঙন। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও, হাসাইল, কামাড়খাড়া দীঘিরপাড় ইউনিয়নের ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরেজমিন টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাইয়ারপাড় এলাকায় দেখা গেছে, হাইয়ারপাড় জামে মসজিদটির ৮০ ভাগ এলাকা পদ্মা নদীর মধ্যে চলে গেলেও মসজিদটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদের ফ্লোরের অনেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

জামালপুর : যমুনা নদীর পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাওয়ায় জামালপুরে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলায় ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে শুক্রবার বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে জেলার সাতটি উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৪৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম : ব্রহ্মপুত্রের পানি ধীরে ধীরে কমলেও ধরলা নদীর পানি আবারও বাড়তে থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম নদ-নদীর পানি প্রবাহের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হাজার হাজার ঘরবাড়ি আটদিন ধরে বানের পানিতে ডুবে আছে। জেলা প্রশাসন সূত্রমতে, জেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৯টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। প্রায় ১৭ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার হয়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। আর বেসরকারি হিসাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২ লাখের ওপর।

আরও চার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা : রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আপার মেঘনা অববাহিকার সুরমা নদীর পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি সমতলে স্থিতিশীল আছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় এই প্রধান অববাহিকার নদীগুলোর পানি সমতলে হ্রাস পেতে পারে। অন্যদিক পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টের পানি স্তর আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তিস্তা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ধরলা নদীর পানি সমতলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top