শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল দুই পথে


প্রকাশিত:
২৭ আগস্ট ২০২০ ২২:৪৬

আপডেট:
১৩ মার্চ ২০২৫ ১০:২৫

 

প্রভাত ফেরী: শোভন চট্টোপাধ্যায়কে হারাতে চায় না বিজেপি। তাই শোভনের ওয়ার্ডে তৃণমূলের দায়িত্ব থেকে তাঁর স্ত্রী রত্নাকে সরিয়ে দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসে গেরুয়া শিবির। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দলে ফেরাতেই তৃণমূল রত্নাকে শোভনের ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভেবেছিল বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। এর পরই বিজেপি ঝাঁপিয়ে পড়ে শোভনকে ধরে রাখতে। তাই রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ইচ্ছে বা অনিচ্ছেকে একেবারেই পাত্তা না দিয়ে একই সঙ্গে আসরে নেমে পড়েন বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং দলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা অরবিন্দ মেনন।

গত সোমবার রাতে নাগাদ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গোলপার্কেক ফ্ল্যাটে চলে যান অরবিন্দ মেনন। পারিবারিক এক সদস্যের অসুস্থতার কারণে সরাসরি সেখানে হাজির হতে পারেননি কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। তবে ফোনে সবসময় যোগাযোগ রেখে গিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ মেননের সঙ্গে। সূত্রের খবর, রাত পৌনে বারোটা পর্যন্ত বৈঠক চলে শোভন চট্টোপাধ্যায়, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ মেননের। বৈঠক সম্পর্কে শোভন বা অরবিন্দ, কেউই মুখ খোলেননি। তবে বৈশাখী জানিয়েছেন, খুব ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। বলেছেন, ‘সময় এলেই সব জানতে পারবেন।’ অবশ্য বৈশাখীর কথা বিজেপির পক্ষেই বলে ধারণা রাজনীতি বিশেষজ্ঞ মহলের।

অবশ্য বিজেপি সরাসরি এই বৈঠক সম্পর্কে সরকারি ভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। দলের এক নেতা জানিয়েছেন, শোভন চট্টোপাধ্যায় তাঁদের দলেরই একজন নেতা। তাই এই বৈঠক অস্বাভাবিক কিছু নয়। আগে থেকেই স্থির ছিল, ২২ থেকে ২৪ আগস্টের মধ্যে যে কোনও দিন কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেননের তাঁর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেনন যে নিয়মিত শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বয়ং শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, শোভন চট্টোপাধ্যায় একটু একটু করে ততই বিজেপির দিকেই ঝুঁকে পড়ছেন।

এদিকে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ফের বিজেপির দিকে ঝোঁকার একটি অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছে তৃণমূলের একটি সূত্র। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দলে ফেরাতে নারাজ তৃণমূলের পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর (‌পিকে)‌। প্রথমে শোভনের ফেরার পথ সুগম করে দিতেই রত্নাকে তাঁর ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। সে কথা প্রকাশ্যেও চলে আসে। যদিও সেই খবরের প্রতিক্রিয়ায় রত্না দেবী সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল সরাসরি তাঁকে এমন নির্দেশ দেয়নি। দলনেত্রীর নির্দেশ পেলে তিনি অবশ্যই সরে যাবেন। সেইজন্য রত্না কিন্তু ওই ওয়ার্ডে এখনও নিজের দায়িত্ব সামলেই চলেছেন।

কিন্তু রত্নাকে সরিয়ে দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই পিকের টিম নাকি তীব্র আপত্তি জানায়। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করে তারা জানায়, এখনই তাঁকে তৃণমূলে ফেরালে তা দলের পক্ষে ইতিবাচক ফল নাও দিতে পারে। তাই এখনই তাঁকে যেন তৃণমূলে ফেরানো না হয়। পিকের টিমের এই নির্দেশ পেতেই শোভনের দিক থেকে হাত গুটিয়ে নেয় তৃণমূল। ফলে রত্নাকে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব ছাড়ার কোনও নির্দেশও দলের তরফে সরকারি ভাবে দেওয়া হয়নি। তাই রত্না চট্টোপাধ্যায় ওই ওয়ার্ডে নির্বিবাদে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন।

রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, পিকের আপত্তির কথা জানতে পেরেই শোভন ফের বিজেপির প্রতি নরম মনোভাব দেখাতে বাধ্য হন। কারণ, এখনও দুই নৌকোয় পা দিয়ে চললে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎই অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। তাই একটি দিক বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সেইজন্য অরবিন্দ মেনন এবং কৈলাশ বিজয়বর্গীয় সক্রিয় হতেই আর উদাসীন থাকেননি শোভন। তাই মনে করা হচ্ছে, রাজ্য রাজনীতিতে বড় কোনও অঘটন না ঘটলে বিজেপির হয়েই এবার রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে দেখা যাবে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top