সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


গ্যাসের কারনেই বিস্ফোরণ, তবে দায় মসজিদ কমিটিরও আছে: তদন্ত কমিটি


প্রকাশিত:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৯

 

প্রভাত ফেরী: নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় একই দিনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তিন কমিটি। অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হওয়া গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস নিজেদের দায় চাপিয়েছে খোদ মসজিদ কমিটির ঘাড়ে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের দাবি- জমে থাকা গ্যাসের কারণেই ঘটেছে বিস্ফোরণ। তবে নিজেদের প্রতিবেদনে এককভাবে কাউকেই দোষারোপ করেনি জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।

বৃহস্পতিবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের তদন্ত কমিটি সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। নিয়ম-কানুন না মেনে নির্মাণের কারণেই মসজিদে এরকম ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে বলে দাবি করেছে তিতাস গ্যাসের তদন্ত কমিটি। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদটি নির্মাণের সময় গ্যাসের পাইপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাবি করে দুই গ্রাহক গোপনে মাটির নিচ দিয়ে গ্যাসের রাইজার টেনে নিয়েছিল বলেও জানানো হয় তিতাসের তদন্ত প্রতিবেদনে। এ সময় তদন্ত কমিটি প্রধান আব্দুল ওয়াহাদ বলেন, তিতাস গ্যাসের নিয়ম-কানুন না মেনে, অবহিত না করে গ্রাহক নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে তাদের রাইজারগুলো নরমালভাবে প্লাগ এবং সকেট দিয়ে স্থানান্তর করে। এটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা। আর আমাদের এ লাইনগুলো ১৯৯৬ সালে দুর্ঘটনাস্থলের নিচে বসানো ছিল। তারা আমাদের নিয়ম না মেনে লাইনের নিচে দিয়ে বেইজমেন্ট করেছে। এ ছাড়া ২০০০ সালের নিয়ম না মেনেই মসজিদটি স্থাপন করে। মসজিদটি তৈরি করার সময়ই তারা লাইনগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর এশার নামাজের সময় তল্লার মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩৭ জন দগ্ধ হন। শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন মারা গেছে ৩১ জন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ যখন তিতাসের দিকে আঙুল তুলছিল এরকম সময় তারা মসজিদ কমিটির ওপর আগুনের দায় চাপিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিল নির্দিষ্ট সময়ের এক সপ্তাহ পর।

তবে গ্যাস জমে থাকার কারণেই বিস্ফোরণ হয়েছে দাবি করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তদন্ত কমিটি বলছে, ওইদিন মসজিদের একটি সুইচ চাপ দেওয়ার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়। তখন মসজিদের ভেতর জমে থাকা গ্যাসে ওই আগুন ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে আগুনের উৎপত্তি হয়। সেই আগুনের কারণেই বিস্ফোরিত হয় এসিগুলো এবং ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে পাইপ লিকেজের ফলে মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমাট বাঁধে। আর তা থেকেই আগুনের সৃষ্টি ও পরবর্তী সময়ে এসিগুলো বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে মসজিদের ভবনটি তেরি করার সময় বিল্ডিং কোড মানা হয়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাইপ লিকেজের বিষয়টি এলাকাবাসী বা মসজিদ কমিটি তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছে অবগত বা অভিযোগ করেছে এমন কোনো লিখিত দলিল পাওয়া যায়নি। তবে অনেকে কমিটির কাছে বলেছে তারা মৌখিকভাবে তিতাসকে লিকেজের বিষয়ে অবগত করেছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি বিকালে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনে আগুনের কারণ ও সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে তিতাস কর্তৃপক্ষ বা কাউকে এককভাবে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়নি বলে তদন্ত কমিটির প্রধান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের কপি সাংবাদিকদের প্রদান করা হয়নি। কমিটি গঠনের দীর্ঘ ১১ দিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের কাছে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি। এ সময় তদন্ত কমিটির অপর চার সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এটিএম মোশারফ হোসেন, ডিপিডিসির পূর্ব বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ, ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জের উপমহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদন দাখিলের পর তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গণমাধ্যমকে খাদিজা তাহেরা ববি জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে তিতাসের পাইপের লিকেজ, বিদ্যুৎ বিভাগের ত্রুটি, মসজিদ কমিটির গাফিলতি, ভবন নির্মাণে রাজউকের অব্যবস্থাপনা এবং মসজিদের সামনের রাস্তা নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের অবহেলার বিষয়টি এসেছে। এ ছাড়া এসব অনিয়ম রোধে তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে ১৮টি সুপারিশ পেশ করেছে। এর মধ্যে মসজিদ নির্মাণের আগে আর্কিটেক্ট দিয়ে ড্রয়িং ডিজাইন করা, মসজিদ বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন সংযোগের ব্যাপারে ম্যাপ আকারে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া ইত্যাদি। তবে তদন্তে বিস্ফোরণের জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা হয়নি বলেও জানান তদন্ত কমিটির প্রধান।

৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর দগ্ধ ৩৭ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জন মারা গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালটির আইসিইউতে মৃত্যুর যন্ত্রণায় ভুগছে ৫ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ জন। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস থেকে ৪ সদস্যের, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে ৫ সদস্যের ও তিতাস থেকে ৩ সদস্যের তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top