সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকাল


প্রকাশিত:
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:২০

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২:২২

 

প্রভাত ফেরী: হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে তিনি পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর খবর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। আজ দুপুর ২টায় হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন  আল্লামা শফী। মধ্যরাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেডিকেল বোর্ডে বসেন। পরে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয় তাকে। শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় দুপুরের দিকে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে হেলিকপ্টারে করে আল্লামা শফীকে ঢাকায় আনা হয় শুক্রবার বিকালে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন হেফাজতের আমিরের শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটে। এমনটাই জানান সেখানের চিকিৎসকরা। পরে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তিনি মারা যান। এর আগে গত ১১ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে ১৫ দিন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন শাহ আহমদ শফী। এরপর ৭ জুন ও ২১ জুলাই আরও দুদফা চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। কওমি মাদ্রাসার শীর্ষ এই আলেমের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খেলাফত মজলিশ, বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ আরও অনেকে। তার মৃত্যুর পর আজগর আলী হাসপাতাল এলাকায় শত শত আলেম-ওলামা ও ভক্তদের ভিড় জমে।

এদিকে একদল শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা সদস্যদের বৈঠকে আল্লামা শফী এই ঘোষণা দেন। তবে বৈঠকে তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসার উপদেষ্টা হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মাদ্রাসার মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী। এর আগে বুধবার দিনভর হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে ‘সম্মানজনকভাবে’ অব্যাহতি দিয়ে নতুন একজনকে নিয়োগ, আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানিকে মাদ্রাসা থেকে অপসারণসহ ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন মাদ্রাসার একদল শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে মাদ্রাসার সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দিয়ে মাদ্রাসার ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় মাদ্রাসার ভেতর ভাঙচুরের অভিযোগও উঠে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুধবার রাতেই আনাস মাদানিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মজলিশে শুরার এক বৈঠকে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ওপর ‘নির্যাতন’ বন্ধ করার অঙ্গীকারসহ কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়া হয় ওই বৈঠকে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে ফের বিক্ষোভ, ভাঙচুর করেন একদল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আহমদ শফী মূলত আলোচনায় আসেন ২০১১ সালে। ওই বছর নারী উন্নয়ন নীতিমালা করার পর এর বিরোধিতা করে চট্টগ্রামে কর্মসূচি ডাকেন তিনি। যদিও ওই আন্দোলনে দৃশ্যত বিক্ষোভ-প্রতিবাদে বেশি কার্যকর ছিলেন ঢাকার আলেমরা। পরে ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দারের (থাবা বাবা) ব্লগিংকে কেন্দ্র করে সারা দেশেই বিক্ষোভে নামেন কওমি মাদ্রাসার আলেম ও শিক্ষার্থীরা। তবে ঢাকায় জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের আলেমদের অনুপস্থিতিতে পুরো দেশের আলেম সমাজের নেতৃত্বে চলে আসেন আহমদ শফী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নামেন তিনি।

সারা দেশে নানা সময়ে আলোচিত আল্লামা আহমদ শফী ১৯২০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আহমদ শফীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। তার বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক। ছোট ছেলে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। ১০ বছর বয়সে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন আল্লামা শফী। ১৯৪১ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে চার বছর হাদিস, তাফসির, ফিকাহ শাস্ত্র অধ্যয়ন করে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। ১৯৪৬ সালে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানের মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পান। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে শায়খুল হাদিসের দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

২০০৮ সালে তিনি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি দারুল উলুম হাটহাজারী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করা হয়। তিনিই এর প্রতিষ্ঠাতা আমির মনোনীত হন।

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ১১ এপ্রিল ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে এমএ (আরবি-ইসলামিক স্টাডিজ)-এর সমমান ঘোষণা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি-নাতনি রয়েছে। আল্লামা আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, আল হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের সভাপতি।

 


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top