সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১


মারির মধ্যেও সৃজনে মগ্ন লেখক প্রণব মজুমদার : দিলারা মেসবাহ


প্রকাশিত:
১৪ নভেম্বর ২০২০ ২১:৫৩

আপডেট:
২ মে ২০২৪ ১৮:৫৮

ছবিঃ দিলারা মেসবাহ ও প্রণব মজুমদার

 

বাঙালী হিসেবে ইলিশ মাছ কার না পছন্দ? এর প্রতি আমার প্রচ- লোভ রয়েছে! ইলিশ নিয়ে সাম্প্রতিককালে লেখা আমার একটি গল্পের নাম - এক জোড়া পয়মন্ত ইলিশ। এই নামে আমার গ্রন্থও বের হয়েছে। ইলিশ এবং এ সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় এলে উৎসাহ বোধ করি।


ইলিশের রাজধানী চাঁদপুরের সন্তান প্রণব মজুমদার। মেঘনার ঢেউ গুণে বেড়ে ওঠা তাঁর। তিনি একাধারে লেখক এবং সাংবাদিক। প্রণবের লেখার জগতটা বহুমুখী। প্রবন্ধ, গল্প, নাটক, সাহিত্য সমালোচনা লিখছেন। অনুবাদ সাহিত্যেও যুক্ত তিনি। ছড়া, কবিতায়ও তাঁর সফল পদচারণা। এই মারির কালে এই লেখকের কলমে সাহিত্য ধরা দিয়েছে বর্ণাঢ্য সৃজনশীলতায়। প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে গল্পের ইশকুল (শিশুতোষ), জীবনের গল্প (স্মৃতিকথা), বিস্মৃত পলক (গল্পগ্রন্থ), বরেণ্য প্রিয়জন (খ্যাতিমানদের সাক্ষাৎকার), পদ্য গদ্যর অবয়ব (প্রবন্ধ), কবিতার বাড়ি (কাব্যগ্রন্থ)। বিস্ময়কর বটে! এর আগে আছে তিনটি গ্রন্থ। হুলস্থুল (গল্পগ্রন্থ), টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে (ছড়াকাব্য) এবং সুখ দুঃখের পদাবলি (কাব্যগ্রন্থ)।


তাঁর লেখায় যাপিত জীবনের এক বহমান আখ্যান পরিব্যাপ্ত। প্রগতি ও সাম্যের জয়গান তাঁর সাহিত্যে পরিস্ফুট। আছে প্রাণময়তা আর সঘন রসবোধ। ভাষাভঙ্গি নির্মেদ গতিশীল। লেখকের আন্তরিক পর্যবেক্ষণ দরদী যথোপযুক্ত কথামালার বুননে হয়ে ওঠে মানসম্পন্ন সাহিত্য কর্ম। প্রণব মজুমদার তেমনি ধারার একজন লেখক। বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন তিনি। খেলাঘর, উদীচী, চাঁদের হাট ইত্যাদি। লেখার জগতে আগমন আশৈশব। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন দৈনিক সংবাদে তাঁর প্রথম লেখাটি ছাপা হয়।

 

পেশাগত জীবনে সাংবাদিক। অর্থকাগজ নামের পাক্ষিকের সম্পাদক প্রণব। জাতীয় দৈনিক শিরোনাম এবং জার্মানি থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজি দৈনিকের বাংলাদেশ সংবাদদাতা। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের স্থায়ী সদস্য। ঢাকা সাংবাদিক পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্য। ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ঢাকার কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সদস্য। বাংলাদেশ শিশুসাহিত্যিক ফোরামের সহ সভাপতি ইত্যাদি বেশ কিছু সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন শিক্ষক। প্রণব মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। নৃত্যকলা এবং ফাইন এন্ড পারফর্মিং আর্টসে স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে তাঁর।
 লেখক বেড়ে উঠেছেন পারিবারিক সুশিক্ষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ পরিমন্ডলে। মা নীলিমা মজুমদার শিক্ষিতা ও স্বীকৃত রত্নগর্ভা। এন্ট্রান্স পাশ করে এই জননী দশটি সন্তানের দেখভাল করেও সমাজের বহুজনকে শিক্ষা লাভে সহযোগিতা করেছেন।


পিতা বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. কালী কৃষ্ণ মজুমদার ছিলেন অবিভক্ত বাংলার ত্রিপুরা জেলার বিশিষ্ট নাট্যশিল্পী। ব্রিটিশ বিরোধী ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। কন্যা প্রমিতি পুত্র প্রত্যয় এবং সাহিত্য সমঝদার সহধর্মিণী মারিয়া সাহাকে নিয়ে তাঁর যাপিত জীবনের পথচলা। এই লেখকের জন্ম ১৯৬৩ সালের ১৫ নভেম্বর।


তাঁর সামাজিক যোগাযোগ বেশ বিস্তৃত এবং নিবিড়। প্রণব মজুমদারের মনোযোগ কৌতূহল বলতে পারি মানবজীবনের অন্ধি সন্ধিতে। প্রকৃতি, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় তাঁর মননের অনুকূল প্রেক্ষাপট। পরিপূর্ণ জীবনবোধ নিত্যদিনের জীবন জিজ্ঞাসা তাঁর সাহিত্যের অসামান্য সংযোজন। যে কারণে সাহিত্য পাকা ধানের মৌতাতে আর পান্থজনের ঘামের নোনায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। যাপিত জীবনের রথযাত্রায় শৈশব থেকে তিনি ছুটছেন- ঘর্মাক্ত লড়াইয়ে লেখক পিছিয়ে যাননি। যে কোন সফল মানুষ আলাদীনের আশীর্বাদে আচমকা সোনার চাবিকাঠি পেয়ে যান না। পর্যাপ্ত শ্রম, নিষ্ঠা এবং কৌশল তাকে সফল করে তোলে। এই যতো নিয়ত লড়াই উৎরে গেছেন তিনি বলা যায়।


সামনে রয়েছে নব্য আলোকজ্জ্বল পথের চিহ্ন। জন্মের শুভক্ষণে প্রত্যাশা করি বাকি স্বপ্নগুলো তাঁর পূর্ণ হোক। সুস্থ সুন্দর সৃজনশীল হোক সামনের দিনগুলো। প্রতিদিনের সূর্যোদয় সফল হোক। মাতৃভূমির ঋণ শোধ হবার নয়! তবু থাকুক অপার প্রেম।

 

দিলারা মেসবাহ
কবি কথাশিল্পী, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের সভাপতি

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top