সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কাজী জাকির হাসানের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ


প্রকাশিত:
৩ জানুয়ারী ২০২১ ২৩:০৪

আপডেট:
৩ জানুয়ারী ২০২১ ২৩:০৮

 

প্রভাত ফেরী: স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বেতার ইউনিট কামান্ডের সদস্য কাজী জাকির হাসানের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। লাইব্রেরী অব কংগ্রেস এর মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে নাট্যকার হিসেবে আন্তর্জাতিক খেতাব লাভকারী এই মুক্তিযোদ্ধা ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তাঁর স্ত্রী শাহান আরা জাকির পারুল বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নাট্যকার, লেখক ও গবেষক এবং গীতিকার। তাঁর একমাত্র সন্তান শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় পত্রিকা প্রভাত ফেরীর প্রধান সম্পাদক এবং সিডনিতে অবস্থিত অন্যতম শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলেশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমির সি ই ও এবং ডিরেক্টর। 

কাজী জাকির হাসান ১৯৫৪ সালের ২ মার্চ কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। জাতির পিতা ব্ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ দেশের স্বাধীনতার জন্য তাকে প্রবলভাবে উদ্বুদ্ব করে। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত চলে যান। অতঃপর শিলিগুড়িতে মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষ করে তিনি মুক্তিযদ্ধের ৬নং সেক্টরের লালমনিরহাট সাবসেক্টরে যোগদান করেন।

কাজী জাকির হাসান পঁয়তাল্লিশজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানীর কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। ঐ সময় তিনি বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২ জুলাই ফুলবাড়িয়ার মোগলহাটের গোরপমন্ডল গ্রামে তার নেতৃত্বে একটি বড় ধরনের অভিযান পরিচালিত হয়। সফল সেই অভিযানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পুতে রাখা এক মাইন বিষ্পোরনে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। যার কারনে তার ডান পা হাটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তীকালে দেশের সাংস্কৃতিক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন।

জনাব কাজী জাকির হাসান ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা কেন্দ্রে নাটক বিভাগে যোগদান করে আমৃত্যু সেখানে চিফ স্ক্রিপ্ট রাইটার পদে কর্মরত ছিলেন।তিনি ১৯৭৩-১৯৮০ মেয়াদে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বেতার ইউনিট কমান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কমান্ডার এবং ১৯৮১-১৯৮৭ মেয়াদে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

কাজী জাকির হাসান একজন সফল নাট্যকার হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ বেতারে তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক, অন্যান্য মৌলিক নাটক ও রূপান্তর নাটকের সংখ্যা তিনশতাধিক। ‘মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি’, ‘যুদ্ধের গল্প’, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরের গল্প’ প্রভৃতি তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। কাজী জাকিরের প্রযোজিত নাটকের সংখ্যা প্রায় চারশতাধিক। এছাড়া তাঁর লেখা বেশ কিছু গবেষণাগ্রন্থ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগে রেফারেন্স বই হিসাবে পঠিত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য মরহুম কাজী জাকির হাসানকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার  স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করে।

কাজী জাকির হাসান লাইব্রেরী অব কংগ্রেস এর মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে নাট্যকার হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-  শহীদ বুুুদ্ধিজীবী সম্মাননা (২০০৫), আবহমান সামাজিক সংগঠন সম্মাননা (২০০৯), শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ সংগঠক পুরষ্কার (২০১২)।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top