সিডনী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


‘নব আনন্দে জাগো নব রবি কিরণে’এই গ্রীষ্মে


প্রকাশিত:
২১ মে ২০১৯ ০১:১৫

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ১৩:৪৫

‘নব আনন্দে জাগো নব রবি কিরণে’এই গ্রীষ্মে

শেগুফতা শারমিন : প্রতিদিন সকালে, রোদ তখনো কোমল, রাস্তার মোড়ে একটা আলো ঝলমল সোনাঝুড়ি হাসি ছুঁড়ে দেয়।  রোড ডিভাইডারের অগভীর মাটিতে সারা বছর হাঁসফাঁস করে ধুকতে থাকা, নাগরিক ধুলায় জীর্ণ শীর্ণ ময়লা গাছটার যে জীবন আছে।  বেশ সমৃদ্ধ জীবন, সেটা প্রমাণ মেলে এই গ্রীষ্মে। গ্রামের ঝোপঝাড়ে অনাদরে বেড়ে ওঠা সোনালু বানরের লাঠি যখন এই হৃদয়হীন শহরে হাসিতে সোনাঝড়ায়। তখন বোঝা যায় সোনাঝুড়ি নামটা তার স্বার্থক। আরো স্বার্থক ঢাকার গ্রীষ্ম। সারা পৃথিবীতে ফুলের মৌসুম বসন্ত। আর আমার এ শহর ফুল ফোটায় গ্রীষ্মে। গরম যত বাড়ে, রঙ তত ফোটে। কৃষ্ণচূড়া আগুন লালে লাল হয়। জারুল হয় ঘন বেগুণি। আর সোনাঝুড়ি হয় চকচকে সোনালী। 





এ হৃদয়হীন শহর তো শহর নয়, নাগরিক জঞ্জাল, কংক্রীটের প্রান্তর। এখানে বাগান বলতে অবশিষ্ট শুধু কবরস্থান। আর সব চলে গেছে, অপরিকল্পিত উন্নয়নে, নগরায়নে। শরীরের তুলনায় নিতান্ত মিনি সাইজের ফুসফুস হিসেবে টিকে আছে কিছুটা রমনাপার্ক, কিছুটা ধানমন্ডি লেক, কিছুটা চন্দ্রিমা। ক্রিসেন্ট লেকের পাশের  রোডটা একসময় ছেয়ে থাকতো কৃষ্ণচুড়ায়। নিরাপত্তার অজুহাতে গাছগুলো ছাটতে ছাটতে অবশিষ্ট আছে শুধু কান্ডবিশেষ। তবুও এপ্রিলের পনেরো আসতে আসতে ফুল ফোটায়

নাভিশ্বাস নিতে থাকা গাছগুলো। 

 ছোটবেলার খুব প্রিয় দৃশ্য। একটা লাল ইটের রেল স্টেশন থেকে একটু দূরে মাস্টার সাহেবের লাল বাংলো। তার সামনে বিশাল বৃক্ষ। দুপুর বেলা একটা বড় হলুদ কুটুমপাখী এসে বসে, তার  বেগুনী নীল ফুলের বিছানায়। কতদূর থেকে দেখা যায় সেই বেগুনি আলো। বহুদূরে বহুদিন পরেও সেই স্মৃতি লেপ্টে থাকে চোখে। ক্লাস ওয়ানের  সেই সব দিন ফিরে আসে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। কি অদ্ভুদ সুন্দর লাল কৃষ্ণচূড়া আর বেগুনী জারুলের মিশ্রণে গ্রীষ্ম সেজে ওঠে এখানে।  জারুল রঙ জমিনে কৃষ্ণচূড়া পাড়ের একটা হাতে বোনা শাড়ির স্বপ্ন দেখে কেউ, হয়তো অনেকেই। 



এক সময় স্বপ্ন, সে তো হারিয়ে যায়। নানা রকম নাগরিক ব্যস্ততায়। ক্যাম্পাসের জারুলও দূরে সরে যায়। তার বদলে নিত্যদিন পথের ধারে চোখে পড়ে জাহাঙ্গীর গেটের নবীন সারি। ভালো লাগে, আবার ভয় জাগায়। কবে জানি হঠাৎ করেই নাই হয়ে যায় এরা। যেমন একদিন নাই হয়ে গেছে, সাদা টগর। বিজয় স্মরনীর সিগনালে নিত্য চোখে পড়া রক্ত টগর  ঝোপ। আশেপাশের ঘরোয়া পূজারীদের ভোর বেলা পূজার ফুলের যোগান। সঙ্গে নাই হয়েছে, বেগুনী ফুরুস। মেট্রো রেলের কাজে উধাও হয়েছে বাংলা মোটরপর্যন্ত রোড ডিভাইডারে বেড়ে ওঠা ফুরুসের ঝাড়। 



আবার নতুন করে আশা জাগিয়েছে, হাতিরঝিল। নব আনন্দে জেগে উঠছে জারুল, কৃষ্ণচূড়া,  সোনাঝুড়িরা, মাথা ছোঁয়াউচ্চতায়। এদের  সঙ্গে যোগ হয়েছে কোথাও ফুরুস, কোথাও অলকানন্দা। 



{gallery-on}





প্রকৃতি সাজতে ভালোবাসে। প্রকৃতি জাগতে ভালোবাসে। তাই শত প্রতিকূলতার ভেতরও এ শহরের ফুলেরা জেগে ওঠে। হাজারও অসুন্দরের ভেতরও এ শহর সেজে ওঠে। প্রতিনিয়ত সংগ্রামের ভেতরও এ শহরের মানুষের মন তাই রাঙা হয়। আশা জাগায়, আনন্দের। 



ছবিঃ আনিসুল কবীর খোকন


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top