সিডনী রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


সারাদেশে বিজয় দিবস পালন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার অঙ্গীকার


প্রকাশিত:
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:৩৪

আপডেট:
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:৩৫

বিজয় দিবস উপলক্ষে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি তার স্বাধীন অস্তিত্ব নতুন ভূখন্ডের হিসাব বুঝে পায়, গতকাল সেই বিজয়ের ৪৮ বছর উদযাপন করছে পুরো দেশ। মহান বিজয় দিবসের সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবারের বিজয় দিবস এসেছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। আগামী বছর স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে বাংলাদেশ। এর ঠিক পরের বছর ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে। যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগে এসেছে স্বাধীনতা, সোমবার জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে জাতি। দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে করুণ সুরে বেজে ওঠে বিউগল।

একাত্তরের রণাঙ্গনে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সালাম জানান তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল। শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নেতাকর্মীদের নিয়ে আবারও স্মৃতিসৌধে ফুল দেন শেখ হাসিনা। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে গাছের চারা রোপণ করে পরিদর্শন বইতে সই করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, যুদ্ধাহত এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত হয় স্মৃতিসৌধ। নামে পতাকা ও ফুল হাতে জনতার ঢল। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদী।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। শ্রদ্ধা জানান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ফুল, মাথায় বিজয় দিবস লেখা ব্যান্ড, জাতীয় পতাকা নিয়ে স্মৃতিসৌধে নেমেছিল জনতার এই ঢল। বিনম্র চিত্তে সমগ্র জাতি ত্রিশ লাখ শহীদকে আরও একবার জানিয়ে দিল ‘আমরা তোমাদের ভুলবো না।’

দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

ভোর ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্মৃতিস্তম্ভের বেদীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ সময় শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীগণ ও আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিজয় উল্লাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধ চত্বর মুখর ছিল বিভিন্ন বয়সি মানুষের পদচারণায়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ধ্বংসাত্মক, নৈরাজ্যকর কর্মকান্ড প্রতিহত করতে নানা স্লোগান, দেশাত্মবোধক গান, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বেজে চলছিল বিরামহীনভাবে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার এই ঢল অব্যাহত থাকে বিকাল পর্যন্ত।

একে একে বেদীতে শ্রদ্ধা জানায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা। জাতীয় পার্টি, বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে রাজারবাগ স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। এতে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাভেদ পাটোয়ারি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ডিএমপির একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে শহীদদের সম্মান জানান।

দিবসটি উপলক্ষে সকল সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জার ব্যবস্থা হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রঙ-বেরঙের পতাকায় সাজানো হয়।

শহীদদের আত্মার শান্তি, জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মের উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হয়।

স্মারক ডাকটিকেট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৯তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম এবং ডাটাকার্ড অবমুক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম এবং পাঁচ টাকা মূল্যমানের ডাটাকার্ড অবমুক্ত করেন। এ উপলক্ষে একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব নুর-উর-রহমান এবং বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র উপস্থিত ছিলেন।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top