করোনা ভাইরাসে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে , সর্বোচ্চ সতর্কতা শাহজালাল বিমানবন্দরে
প্রকাশিত:
২২ জানুয়ারী ২০২০ ০২:১৫
আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১০:২৯

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: চীনে রহস্যময় এক নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। চীনের কর্তৃপক্ষ গত দুই দিনে ১৩৯ জন এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। গত ডিসেম্বরে ইউহান শহরে প্রথম যে সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তাকে করোনা ভাইরাস বলে শনাক্ত করেছিল।
গত সপ্তাহেই সিঙ্গাপুর, হংকং, সান ফ্রান্সিসকো, লস এঞ্জেলস এবং নিউইয়র্কে চীন থেকে আগত ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছিল। এবার বাংলাদেশেও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও স্ক্রিনিং শুরু করার কথা জানানো হলো কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। ইউহানের পর চীনের নতুন নতুন শহরেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে আছে বেইজিং এবং শেনঝেন শহরের বাসিন্দারাও।
এদিকে থাইল্যান্ড এবং জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়া সোমবার জানিয়েছে সেখানেও এই একই ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে অন্তত তিনজন।
বাংলাদেশে সতর্কতা : ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর বলছে, তারা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে, কারণ চীন থেকে আসা সব বিমান এ বিমানবন্দর দিয়েই ওঠানামা করে।
এ ছাড়া অন্য বন্দরেও চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। বাংলাদেশে এখনও করোনা ভাইরাসে কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. সেবরিনা বলেন, স্বাস্থ্য-কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে স্থাপিত হেলথ ডেস্কে এসব কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। যেসব ফ্লাইট চীন থেকে আসছে সেসব ফ্লাইটের যাত্রীদের স্ক্যানিং করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যারা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা জ্বর, কাশি, গলাব্যথা এসব নিয়ে আসছেন তাদের চেক করা হচ্ছে।’ আইইডিসিআর চারটি হটলাইনও খুলেছে। হটলাইনের নম্বরগুলো হচ্ছে - ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪ এবং ০১৯২৭৭১১৭৮৫।
আইইডিসিআর বলছে, কারও শরীরের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে তারা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখবেন। এ ছাড়া বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন, এয়ারলাইন্সগুলো এবং অ্যাভিয়েশনে কাজ করা সবাইকে সচেতনও করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিমানবন্দরে যে এলইডি মনিটর রয়েছে সেখানে রোগের লক্ষণগুলো জানানো হচ্ছে এবং কারও যদি এ লক্ষণগুলো থাকে তার হেলথ ডেস্কে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।
সংক্রমণ সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে তা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। চীনের কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ সংক্রমণ যে ভাইরাসের কারণে হচ্ছে সেটি আসলে এক ধরনের করোনা ভাইরাস। অনেক ধরনের করোনা ভাইরাস রয়েছে, কিন্তু শুধু ছয় ধরনের ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। নতুন ভাইরাসসহ এটি হবে সপ্তম।
একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা দেয় সাধারণ সর্দি, কিন্তু মারাত্মক ধরনের সংক্রমণ বা সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে সার্স হচ্ছে এক ধরনের করোনা ভাইরাস। যাতে ২০০২ সালে ৮০৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং এদের মধ্যে ৭৭৪ জন মারা গিয়েছিল।
ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য (জেনেটিক কোড) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, মানুষকে আক্রান্ত করা অন্য করোনা ভাইরাসের তুলনায় সার্সের সঙ্গে এটির বেশি মিল রয়েছে।
ভাইরাসটা কি ছোঁয়াচে?
প্রাথমিকভাবে গবেষকরা বলেছিলেন যারা চীনের ইউহান শহরে মাছের বাজারে গিয়েছিলেন তারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু এমন কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে যারা কোন মাছের বাজার বা বাজারেই যাননি। অবশ্য এ ভাইরাস সম্পর্কে এখনও খুব বেশি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ডা. সেবরিনা ফ্লোরা বলছিলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে এবং তারা আশঙ্কা করছে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে তবে এখনও এত বৃহৎ পরিসরে ভাবছে না সংস্থাটি। এবং ভাইরাসটা ছোঁয়াচে কি না সে ব্যাপারে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নিশ্চিত করে কিছু বলেনি। তিনি বলছিলেন যখন শ্বাসতন্ত্রের অসুখ হয় তখন হাঁচি, কাশি থেকে আরেক জন সংক্রমিত হতে পারে এটা ভেবে নিয়েই আমরা আমাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ যদি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায় তাহলে অতি দ্রুত সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: