ঢাবিতে আবরার স্টাইলে ৪ শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের রাতভর নির্যাতন


প্রকাশিত:
২৩ জানুয়ারী ২০২০ ০২:৫৯

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১০:৩২

নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন,আমির হামজা,সাইফুল্লাহ আব্বাসী

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৪ শিক্ষার্থীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। পরবর্তীতে তাদেরকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। যদিও পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না পেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে তাদেরকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মারধ‌রের শিকার চার শিক্ষার্থী হ‌লেন— ট্যুরিজম এন্ড হস‌পিটা‌লি‌টি ম্যা‌নেজ‌মেন্ট বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মুকিমুল হক চৌধুরী, রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের সানোয়ার হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃ‌তি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন এবং আরবী বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দিন।

নির্যাতনে নেতৃত্বদানকারী‌দের ম‌ধ্যে ছি‌লেন— হল ছাত্রলীগের সহ সভাপ‌তি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত প্রমুখ।

এদের ম‌ধ্যে আনোয়ার এবং হামজা ছাত্রলী‌গের কেন্দ্রীয় সভাপ‌তি আল না‌হিয়ান খান জ‌য়ের অনুসারী। আর আব্বাসী সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচা‌র্যের অনুসারী।

প্রত্যকক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকের কয়েকটা স্ক্রিনশটের ওপর ভিত্তি করে রাত ১১ টায় ভুক্ত‌ভোগী শিক্ষার্থী‌দের‌কে হলের গেস্টরুমে ডেকে আনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

পরে, শিবিরের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন অভিযোগে তাকে মানসিক চাপ দিতে থাকে। স্বীকার না করায় তাকে মারধর করে। এ সময় তার মোবাইলে আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে 'যোগাযোগ তালিকায়' নাম থাকায় তাদেরকেও ডেকে গেস্টরুমে আনা হয়।

উপস্থিত ছাত্রলীগের এক নেতা নাম না বলা সূত্রে জানান, প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে পিটায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও জুহুরুল হক হল সংসদের ভিপি সাইফুল্লা আব্বাসী অনন্ত, হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আলম। পরবর্তীতে লাঠি, রড ও কিল-ঘুষি মারে হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, রাত এগারোটা থেকে মুকিমকে রুমে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আমরা বন্ধুরা রাত দুইটার দিকে তাকে খুঁজতে বের হলে গেস্ট রুম থেকে বড় ভাইদেরকে মুকিম কে সাথে নিয়ে বের হতে দেখি। এ সময় মুকিম আহত অবস্থায় ছিল বলেও নিশ্চিত করেছেন এ শিক্ষার্থী ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১টার দিকে জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নিয়মিত গেস্টরুম চলছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়।

সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মুকিমকে প্রথমে মানসিক চাপ দেয়। এতে স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে।

পরে তার ফোনের চ্যাটলিস্ট দেখে রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা। মারধর সহ্য করতে না পেরে তারা উভয়েই মেঝেতে বসে ও শুয়ে পড়ে। এর একটু পর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন ও একই বর্ষের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে ধরে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে রাত দুইটা পর্যন্ত তাদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতন করতে থাকে ছাত্রলীগ নেতারা।

পরে রাত ২টার পর তাদেরকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। তা‌দের অবস্থা দে‌খে পুলিশ তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করে তাদের কাছ থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তার কোনো নাম অথবা প্রমাণ দিতে পারেননি তারা। শিবির সন্দেহে তাদেরকে গেস্টরুমে ডাকা হলেও তাদের কাছে শিবিরের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়‌নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা হল প্রশাসনের মাধ্যমে এ বিষয়ে অবহিত হয়েছি। ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

যদি ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যদি কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহলে তাদেরকে কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না, এটা আমরা বলে দিয়েছি।

হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলমান থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতারা কিভাবে শিক্ষার্থীদের মারধর করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাও তো শৃঙ্খলা ভঙ্গ। যে বা যারাই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top