মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে চলন্তিকা বস্তিতে আবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড


প্রকাশিত:
২৬ জানুয়ারী ২০২০ ০০:১৮

আপডেট:
২৬ জানুয়ারী ২০২০ ২২:৫৭

ছবি: সংগৃহীত

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে আবারও মিরপুরের চলন্তিকা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এবারও এই আগুনে পুরো বস্তি, বস্তিতে থাকা ভ্যান ও রিকশা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আহত হয়েছেন দুই ব্যক্তি। দগ্ধদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। শুক্রবার ভোর ৪টা ১১ মিনিটে মিরপুর ৬ নম্বর ই- ব্লকের ওই বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আগুনের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।

বস্তিবাসী জানায়, ভোরের আলো ফোটার ঘণ্টাখানেক আগে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো বস্তিতে। ঘুম থেকে দ্রুত উঠে দৌড় দেন অনেকে। আগুন আগুন শব্দে পুরো বস্তিতে হইচই পড়ে যায়। কিন্তু মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা এ ঘর থেকে অন্য ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় পুরো বস্তি। চোখের সামনে অনেকের বাড়ি, ঘর, মূল্যবান জিনিসপত্র, সোনা, টাকা, রিকশা ও ভ্যান পুড়ে ছাই হয়েছে কিন্তু কিছুই করার ছিল না। কারণ সেই মুহূর্তে তেমন পর্যাপ্ত পানিও ছিল না বস্তিতে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন খবর পান সেই সময় দাউ দাউ করে জ্বলছিল পুরো বস্তি।

বস্তিবাসীর চিৎকার আর কান্নায় শুক্রবার ভোরের আকাশও যেন প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল। আগুনের প্রায় ১০ মিনিট পর ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তারা ছুটে আসার পরই পানির পাইপ ও নর্দমা নালা খোঁজার চেষ্টা করেন। আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় কর্মীরা তখন ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিল না। বস্তিবাসীর অনেকে বালু হাতে নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল। আগুন নেভাতে গিয়ে এ সময় দুই ব্যক্তি দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ৩৫ বছরের নারীও রয়েছেন।

বস্তিবাসী আরও জানায়, পাঁচ মাস আগে এ বস্তিতে আগুন লেগেছিল। সে সময় তারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। এরই মধ্যে অনেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের আগুন তাদের সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে। যা ছিল এবার সব পুড়েছে। বাদ যায়নি ঘরের আলনা, আলামিরা, হাঁড়ি-পাতিল, ভ্যান, রিকশা, কাপড়, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও বস্তিতে থাকা দোকানের মালামালও। বস্তিবাসীর অনেকে জানিয়েছে, তারা ঘুমেই ছিলেন কিন্তু হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকারে ঘুম ভাঙে। এ সময় অনেকে প্রাণ বাঁচাতে দেন দৌড়। ঘরে থাকা জিনিসপত্রও নিতে পারেননি তারা। অনেকের চোখের সামনেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণ দাবি বস্তিবাসীর : চলন্তিকা বস্তিতে আগুনের ঘটনায় সময় দুটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন বস্তিবাসীর অনেকেই। তারা বলেছেন, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর বিকট শব্দে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এর পরপরই আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ভয়াবহ আগুনে নিমিষেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফেন্সি নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, প্রথমে ‘রনির মা’র (রহিমা হক) ঘরে আগুন দেখি। এর একটু পর একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। পরপরই আরও একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয় তাতে দ্রুত গোটা বস্তিটা পুড়ে যায়।

সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার রাসেল শিকদার জানান, ভোর চারটা ১১ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এরপর ঘটনাস্থলে ১৫টি ফায়ার সার্ভিসের ইউটি ছুটে যায় এবং ভোর পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ সময় ৩৫ বছর বয়স্ক এক নারীসহ দুজন দগ্ধ হন। তবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। দগ্ধ অজ্ঞাত ওই নারীকে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করেছেন। ঢামেকের বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, আগুনে ওই নারীর শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

এর আগে গত বছরের ১৬ আগস্ট সন্ধ্যা সোয়া ৭টার কিছু পরে একই বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সময় প্রায় ৩ হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব, পুলিশ ও ওয়াসার একটানা তিন ঘণ্টার সম্মিলিত চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top