ঢাকার দুই সিটিতে ভোট আজ
প্রকাশিত:
১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:১৭
আপডেট:
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:২৭

প্রভাত ফেরী ডেস্ক: কঠোর নিরাপত্তা, উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবের আমেজে আজ (শনিবার) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হবে, যা বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
শুক্রবার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমগুলো পাঠানো হয়েছে।
ইভিএমের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য ভোটের আশা প্রকাশ করেন তিনি বলেন, আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্রে ১৪ হাজার ৪৩৬টি ভোট কক্ষ পরিচালনার জন্য আমরা প্রশিক্ষণ শেষ করেছি। পরীক্ষামূলক বা মক ভোটিংয়ের জন্য ৩৫ হাজার ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। নির্বাচন ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ৪৫ হাজার ৭৭০ জন প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও প্রত্যেক কেন্দ্রে দুজন করে মোট ৫ হাজার ১৫ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বিমানবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা টেকনিক্যাল কাজ দেখবেন। আইনশৃঙ্খলার কোনো কাজে অংশ নেবেন না তারা। সেনা ছাউনি থেকে সরাসরি ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আবার সেখান থেকে তারা সরাসরি সেনা ছাউনিতে চলে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার কিংবা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার কোনো ভোট দিতে পারবেন না। তবে তারা ভোট পরিচালনা করবেন। তবে বিভিন্ন কারণে কারও ফিঙ্গার প্রিন্ট না মিললে তারা ১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট দিতে সহায়তা করতে পারবে। এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিতে হবে। তবে কেউ অবৈধভাবে ভোট বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে গেলে তাকে শনাক্ত করে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে শুক্রবার দেখা যায়, প্রচার-প্রচারণা শেষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছেছে ভোটের সরঞ্জাম। তবে আগের নির্বাচনগুলোর থেকে এ বিষয়ক প্রস্তুতিটা একটু ভিন্ন। কারণ এর আগে ব্যালটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এই প্রথমবার সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে।
এদিন ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে নির্বাচনি সরঞ্জাম বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। এর অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণের জন্য ইভিএম, এলইডি মনিটর, ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন, স্ক্যানার, বুথের জন্য ত্রিপল, তাঁবু ও বোর্ডশিটসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় সরঞ্জাম আলাদা আলাদা গাড়িতে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যের আগে আগেই প্রায় সবগুলো কেন্দ্রে পৌঁছে যায় এসব সামগ্রী।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উত্তরে আটটি ও দক্ষিণ সিটির ১১টি পয়েন্ট থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় একযোগে নির্বাচনি সরঞ্জাম বিতরণ শুরু হয়। উত্তর সিটির পয়েন্টগুলো হলো উত্তরা কমিউনিটি সেন্টার, বনানী বিদ্যানিকেতন, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বনশ্রী শাখা, ডেন্টাল কলেজ মিরপুর-১৪, মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ (বালক শাখা), ন্যাশনাল বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় মিরপুর-২, তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ।
অন্যদিকে দক্ষিণ সিটির মালামাল বিতরণের কেন্দ্রগুলো হলো খিলগাঁও মডেল কলেজ, টিঅ্যান্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় মতিঝিল, টিকাটুলির কামরুন্নেসা স্কুল ও সেন্ট্রাল উইমেন কলেজ, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, আজিমপুর গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা, কামরাঙ্গীরচর শেখ জামাল স্কুল, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দোলাইর পাড় স্কুল কেন্দ্র। এ ছাড়া নির্বাচনের কিছু সরঞ্জাম বিজি প্রেস থেকে সরাসরি ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে আরও জানা যায়, আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুই সিটিতে একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। সিটি নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে মোট ৭৫৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে প্রার্থী ১৩ জন, কাউন্সিলর পদে ৭৪৪ জন। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এই সিটিতে ওয়ার্ড ৫৪টি, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ১৮টি। মোট ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ৩৪৯টি, ভোটকক্ষ ৭ হাজার ৫১৬টি। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মোট ভোটার ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। এই সিটিতে ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ১২৪টি ভোটকক্ষ রয়েছে পাঁচ হাজার ৯৯৮টি। দক্ষিণ সিটিতে মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৭৫টি, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ২৫টি।
ঢাকা উত্তর সিটিতে চ‚ড়ান্তভাবে মেয়র পদে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির তাবিথ আউয়াল, বাঘ প্রতীকে পিডিপির শাহীন খান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলে বারী মাসউদ, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাজেদুল হক ও আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনিসুর রহমান দেওয়ান।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত জন। তারা হলেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ইশরাক হোসেন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবদুর রহমান, ডাব প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে আয়াতউল্লাহ, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহরানে সুলতান বাহরান ও মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন।
অন্যদিকে এই দুই সিটির নির্বাচন উপলক্ষে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ রাত ১২টা পর্যন্ত এ ঘোষণা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
একইভাবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ঢাকা মহানগরে সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে মোটরসাইকেল চলাচলে। তবে কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে চলাচল করছে কিছু যানবাহন।
ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনে ভোটের সময় যান চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে, ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাস, বেবি ট্যাক্সি-অটোরিকশা, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, ট্রাক, টেম্পো ও অন্যান্য যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। আর মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত।
তবে মোটরসাইকল ও বিভিন্ন যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতিতে প্রার্থী ও তাদের এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। এ ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র থাকতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং জরুরি কাজে বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রতিবন্ধী ভোটারদের সহায়তায় নিয়োজিত গাড়ির ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে। বিদেশ বা দেশের বিভিন্ন স্থানে গমন বা বিদেশ বা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীদের বিমান-নৌবন্দর বা বাস স্টেশন-টার্মিনালে যাওয়ার জন্য বা বন্দর-স্টেশন থেকে বাসস্থানে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে চলাচলের জন্য নিয়োজিত যানবাহন ক্ষেত্রবিশেষ মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজন উপলক্ষে ভোটগ্রহণের আগের দিন ও ভোটগ্রহণের দিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বন্ধ রাখার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: