শিশু ক্যানসার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে


প্রকাশিত:
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:০৯

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১৭:১৯

ফাইল ছবি

প্রভাত ফেরী: প্রতিবছরের মতো শনিবার দেশ জুড়ে পালিত হলো বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস। এবারের দিবসটি মুজিব শর্তবর্ষের অনুষ্ঠান হিসেবে উৎসর্গ করে র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির। তবে দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশু ক্যানসার রোগীর সংখ্যা। প্রতিবছর নতুন করে প্রায় ১৩ হাজার শিশু আক্রান্ত হচ্ছে ক্যানসারে। তবে চিকিৎসকদের দাবি, সঠিক সময়ে শনাক্ত করা গেলে এবং উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে উঠলেও মাত্র ২৫ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পায়। এতসব শিশু ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র খুবই অপ্রতুল দাবি করে বিশেষায়িত শিশু ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

দিবসটি উপলক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু রক্তরোগ ও ক্যানসার বিভাগ বের করে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালির। মেডিকেল কলেজের চত্বর থেকে বের হওয়া র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. একেএম নাসির উদ্দিন। র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফিকুল আলম চৌধুরী, অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার এবং অধ্যাপক একেএম আমিরুল মোরশেদ খসরু প্রমুখ।

এ সময় অধ্যাপক ডা. একেএম আমিরুল মোরশেদ খসরু জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে কিন্তু কার্যকর সেবা শুরু হয় ২০১০ সালে। এ পর্যন্ত এ বিভাগে প্রায় ১ হাজার ৫০০ নতুন রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৭৭ জন রোগী সম্পূর্ণ নিরাময় হয়েছে। এখানে প্রতিবছর নতুন পুরনো মিলে প্রায় ৫৫০ জন শিশু চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়। এ ছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১২ থেকে ১৫ জন রোগী চিকিৎসা পায়।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে এখানে মোট ৫৬৭ জন রোগী আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে, যার মধ্যে ১৬৮ জন নতুন আর ৩৯৯ জন পুরনো রোগী। যাদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ শিশু সুস্থতার পথে। তিনি বলেন, চিকিৎসারতদের মধ্যে ব্ল্যাড ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৪২ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ রোগী লিম্ফোমা রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়া কিডনি ক্যানসার, জার্ম সেল ক্যানসার, মাংস পেশির ক্যানসার রোগীও রয়েছে। দেশে শিশু ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র অপ্রতুল হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বিএসএমএমইউ-এর ওপর বেশি চাপ পড়ছে। তাই শিশু ক্যানসার চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র খুব জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি জানান, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৩ হাজার নতুন শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। এর মধ্যে শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। তবে দেশে কত সংখ্যক শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত সে সম্পর্কে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বর্তমানে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ শিশু ক্যানসার রোগী রয়েছে। তারা আরও বলছেন, দেশের মোট ১০টি সরকারি হাসপাতালে শিশু ক্যানসার রোগীর জন্য চিকিৎসাসেবা থাকলেও সব জায়গায় বিভিন্ন কারণে সেবা পাওয়া যায় না। একই সঙ্গে এসব হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন মোটে ২৫ জন, আর রোগ নির্ণয়ের জন্য আসে ২৫ শতাংশ শিশু। তারা বলেন, ২০০৫ সালে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা গিয়ে ঠেকবে ১৩ শতাংশে।

এ ব্যাপারে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শিশু কনকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মমতাজ বেগম বলেন, শিশু ক্যানসার বিশেষজ্ঞের সংখ্যা আমাদের দেশে একেবারেই হাতে গোনা। যতটুকু চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে দেশে অনেক কম চিকিৎসক আমাদের। শুধু তাই নয় রয়েছে শিশু ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রেরও অপর্যাপ্ততা। তাই বিশেষায়িত শিশু ক্যানসার হাসপাতাল তৈরি করা সময়ের দাবি। সার্বিকভাবে যেমন ক্যানসারের চিকিৎসা পুরোপুরি নেই, তেমনি শিশুদেরও নেই। তবে সম্প্রতি শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যেমনÑ শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য পৃথক বিভাগ হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে পৃথক বিশেষজ্ঞও। যা আশাব্যঞ্জক।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top