সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে পরিবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা : মু: মাহবুবুর রহমান 


প্রকাশিত:
৩ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৫৫

আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৩২

 

চলতি বছর আর খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশে করোনার প্রভাব কিছুটা কমে আবার বাড়তে শুরু করায় এবছর যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর খুলছে না এটা বলাই যায়। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বহাল আছে। তবে ২৫ সেপ্টেম্বর এক ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ওপর। 

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ১৭ মার্চ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। ছুটি বেড়েছে কয়েক দফায়। শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে, চলছে টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার। তবে গত ১৭ই মার্চ থেকে সব শিক্ষার্থী নিজ নিজ বাসায় অবস্থানের কারণে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম যে ব্যহত হচ্ছে তা তো বলাই যায়।  অবশ্য করোনা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে তাদেরকে বাসায় বন্দি রাখা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প আছে বলেও মনে হয় না। 

বাতিল হয়েছে ২০২০ এর পিইসি, জেএসসি/জেডিসি, এইচএসসি পরীক্ষা 
বাংলাদেশে সাধারণত: প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছরের প্রায় সব পরীক্ষাই হয় বাতিল বা ভিন্ন উপায়ে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণীর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। সর্বশেষ এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে।  

তবে এইচএসসি পরীক্ষার ফল যেহেতু প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ শিক্ষার জন্য খুবই জরুরি তাই জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের আলোকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই ডিসেম্বরের মধ্যেই ২০২০ সালের এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।   

পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন ও পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন 
করোনার কারণে এবার বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা। বছরের প্রথম আড়াই মাস এবং করোনার সময়ে টিভি, রেডিও ও অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমের ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ফলে পরীক্ষা ছাড়াই প্রাথমিক স্তরের সমস্ত শিক্ষার্থী পরের ক্লাসে উঠে যাবে। তাদের রোল নম্বরও অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ বর্তমান ক্লাসের রোল থাকবে তাদের পরবর্তী ক্লাসেও। 

এর আগেই অবশ্য মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ থেকে নবম) শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষা নেয়া না গেলেও শিক্ষার্থীদের কোথায় দুর্বলতা তা বোঝার জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।   

লটারির মাধ্যমে ভর্তি 
বর্তমানে সারাদেশের সরকারি- বেসরকারি সব স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় পরীক্ষার মাধ্যমে। আর নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলের (জিপিএ) ভিত্তিতে। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। আর তাই আগামী বছর স্কুলের সব শ্রেণীতে পরীক্ষার বদলে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

নতুন এ লটারি পদ্ধতিতে ক্যাচমেন্ট এরিয়া (বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা) ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ স্কুলের আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীদের এখন ৫০ শতাংশ ভর্তি করা হবে। এত দিন আশপাশের এলাকার ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হতো। এছাড়া এবার ঢাকা মহানগরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় পছন্দের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। এত দিন একেকটি গুচ্ছের মধ্যে একটিতে পছন্দ করতে পারত শিক্ষার্থীরা। এখন একটি গুচ্ছের পাঁচটি পছন্দক্রম দিতে পারবে তাঁরা। 

স্কুলে টিউশন ফি ছাড়া আর কোনো ফি নয়  
করোনাকালে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিউশন ফির বাইরে অন্য কোনো ফি আদায় করা যাবে না বলে জানিয়েছে সরকার। করোনার কারণে যাদের আয় কমে গেছে, তাদের বিষয়টি বিবেচনারও আহবান জানানো হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গত ১৮ ই নভেম্বর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়  টিউশন ফির বাইরে অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনর্ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি আদায় করতে পারবে না। আদায় করা হয়ে থাকলে, তাও ফেরত দিতে হবে অথবা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। একইভাবে অন্য কোনো ফি যদি ব্যয় না হয়ে থাকে, তাহলে তা–ও ফেরত দিতে হবে অথবা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।   

করোনা মহামারীর মধ্যে যেসব অভিভাবকের আয় কমে গেছে বা যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের সন্তানদের টিউশন ফি আদায়ের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ বিবেচনার’ আহবান জানিয়েছে মাউশি। সরকারের এ ঘোষণাকে প্রশংসনীয় বলছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। 

পেছাতে পারে ২০২১ এর এসএসসি ও এইচএসসি 
আগামী ২০২১ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা দুই মাস পেছাতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। ২৫ নভেম্বর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী একথা জানান।  মন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য তিন মাসের একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করা হয়েছে। এই সিলেবাসের আলোকে তাদের তিন মাস ক্লাস করার জন্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পারে। 

কবে থেকে আবার ক্লাস শুরু হবে, এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। তবে যখনই ক্লাস শুরু হবে শুরুর দিকে বেশ কিছু স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে সবাইকে। সেক্ষেত্রে হয়তো সবার সব দিন ক্লাস নাও হতে পারে। এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নিয়ে আসার ব্যাপারে বেশি জোর দেয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।  

 

মু: মাহবুবুর রহমান
লেখক, নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক   



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top