সিডনী রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

কওমি ছাড়া সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এমন দ্বৈতনীতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া : মাহবুবুল আলম


প্রকাশিত:
৩১ আগস্ট ২০২০ ২০:২৬

আপডেট:
৩১ আগস্ট ২০২০ ২০:২৭

 

করোনা ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে তিন দফায় ছুটি বাড়ানো হয়! সর্বশেষ ৩১ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত ছুটি বর্ধিত করা হয়। শিক্ষার্থীদের দুরন্তপনায় অস্থির অভিভাকরা আশায় ছিলেন ৩১ আগস্টের পর সরকার হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেবে। কিন্তু তা আর হলো না! গতকাল ২৭ আগস্ট সরকারের এক ঘোষণায় কওমি মাদ্রাসা ছাড়া দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ ৩ অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে দেশের সিংহভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক এবং লেখাপড়ায় সিরিয়াস শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়েছে। তবে এই ঘোষণায় কওমী মাদ্রাসা
খোলা রাখায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে এটিকে সরকারের দ্বৈতনীত বলেও ক্ষুব্ধ হয়েছে। কেউ কেউ এমন প্রশ্নও করেছেন কওমী মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা কী করোনা সংক্রমণের আওতামুক্ত? কওমী মাদ্রাসায় যারা পড়ে তাদের জীবনের কী কোন মূ্ল্য নেই? আবার অনেকেই শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন- কওমী মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে কী মায়ের বুক খালি হবে না?

করোনার কারণে চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষাও মহামারীর কারণে স্থগিত রাখা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে চলতি বছর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা এবং জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে সেখানে কোন যুক্তিতে কওমি মাদ্রাসা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে
বিভিন্ন পর্যায়ে। অনেকে এমন বলছেন কওমি মাদ্রাসায় একাডেমিক ও আবাসিক হোস্টেলে যেভাবে গাদাগাদি করে থাকে, কোন কোন ক্ষেত্রে ফ্লোরিং করেও থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে কওমি মাদ্রাসায় একবার করোনা ছড়িয়ে পড়লে তা কীভাবে সমলাবে তা ভেবে দেখা উচিত ছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন গতকাল এ গতকাল বিভিন্ন সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। তাই এ ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে। কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তা করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। তিনি আরও বলেন, অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা বা অন্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অথবা এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে প্রমোশন কীভাবে দেওয়া হবে তা পরে জানানো হবে। শিক্ষা সচিব আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন শ্রেণির অনলাইন ক্লাস চলবে।

অনলাইনে ক্লাস নিয়ে আছে অনেক সমালোচনা। শহরাঞ্চলে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে কিছু ক্লাস হলেও মফস্বল এবং গ্রাম পর্যায়ে নানা প্রতিকূলতার কারণে সিংহভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই অনলাইনে ক্লাস নিতে পারছে না, এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হলো অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার মতো যথেষ্ট অবকাঠামোর অভাব, সহজলভ্য ইন্টারনট ও স্মার্টফোনের অভাব। এসব কারণ বেশিরভাগ
শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে আগ্রহ হারিয়ে আড্ডাবাজী করে সময় পার করছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত অনেক প্রতিবেদন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও অনলাইনে ক্লাসের কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে সৃষ্ট বৈষম্য সুদূরপ্রসারী নেতিবাচকতার চাপ রেখে যেতে বাধ্য। অনলাইন ক্লাস নিয়ে কর্তাব্যাক্তিরা সরকারকে যা বোঝাচ্ছে
প্রকৃতপক্ষে তার দশ ভাগের এক ভাগও সরেজমিনে হচ্ছে না। নিরপেক্ষ জরিপ পরিচালনা করলে এ কথা প্রমাণিত হবে যে, "কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নাই"।

যাক শেষ করতে চাই এই বলেই যে একদেশে একই ক্ষেত্রে দুই নীতি কিছুতেই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। এ নিয়ে এক ধরণের বৈষম্য দেশের নাগরিকদের মধ্য বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করবে। যা দেশের জন্য  কিছুতেই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না এই বিষয়টি সবারই অনুধাবন করা উচিত।

মাহবুবুল আলম
কবি, কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top