সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে ছয় টাকা টিফিন ভাতার শিক্ষক : শাকিলা নাছরিন পাপিয়া


প্রকাশিত:
৩ অক্টোবর ২০২০ ২১:১৭

আপডেট:
৩ অক্টোবর ২০২০ ২৩:২৩

ছবিঃ শাকিলা নাছরিন পাপিয়া

 

শায়েস্তা খাঁর আমল বলতে আমরা টাকায় আট মন চাল বুঝি। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষক বলতে আমরা সাড়ে ছয় টাকা টিফিন ভাতা প্রাপ্ত,  ড্রাইভারের  চেয়ে কম স্কেলে বেতন পাওয়া শিক্ষক বুঝবো সেটা বলছি না। বাংলাদেশের শিক্ষক হলো ব্রাহ্মণ্যের সেই গরুর মতো।যে খায় কম কিন্তু দুধ দেয় বেশি। শিক্ষার উন্নতির সঙ্গে শিক্ষকের উন্নতির যে সম্পর্ক রয়েছে তা আমরা ভুলেই গেছি। কেন একজন শিক্ষক এই পেশায় আসবেন আগে সেটা আমাদের ভাবতে হবে। কারণ একই শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কম শিক্ষাগত যোগ্যতায় বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যখন বেশি, তখন কেন একজন মেধাবি এ পেশায় আসবেন অসম্মান, অপমান বহন করার জন্য?

সাড়ে ছয় টাকা প্রতিদিনের টিফিন ভাতা অন্য কোন পেশায় নেই। এই অসম্মানজনক টিফিন ভাতার বিরুদ্ধে তাসনীম চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, প্রথম আলো পত্রিকায় প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠিপত্র পাতায় লিখেন বেশ কয়েক বছর আগে।

কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় কুড়িগ্রামের রাজারহাটের একজন সহকারী শিক্ষক জনাব মনিবুল হক বসুনিয়া  এই অসম্মানজনক টিফিন ভাতা প্রত্যাহার করার জন্য থানা শিক্ষা অফিস বরাবর দরখাস্ত প্রেরণ করেন। এই দরখাস্তটি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পোষ্ট দেন। হাজার হাজার শিক্ষক এই শিক্ষকের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন এবং তার পোষ্টটি শেয়ার করেন। অনেকগুলো অন লাইন পত্রিকা নিউজ হিসাবে সাড়ে ছয় টাকা টিফিন ভাতা প্রত্যাহারের খবরটি প্রকাশ করে শিক্ষকদের অসম্মান তুলে ধরে।

আগামী ৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসে জাতীয়করণের দাবীতে সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি সকল স্তরের শিক্ষক। শিক্ষক দিবস আলোচনা, আর বক্তব্যে শেষ না হয়ে শিক্ষকদের বঞ্চনার অবসানেও ভূমিকা রাখবে আশা করি। খিচুড়ি রান্নার জন্য বিদেশ থেকে জ্ঞানার্জন না করে, শিক্ষকদের উন্নত জীবনমানের জন্য করণীয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন জরুরি।
মান সম্মত শিক্ষক ছাড়া মান সম্মত শিক্ষা সম্ভব নয়। এই সহজ কথাটা বুঝতে আশা করি কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজন নেই। মান সম্মত শিক্ষকের জন্য প্রয়োজন মেধাবিদের এই পেশায় আকৃষ্ট করা। সাড়ে ছয় টাকা টিফিন ভাতা দৈনিক, ড্রাইভারের চেয়ে কম স্কেলে বেতন, নিত্য নতুন পাহারাদার নিয়োগ, অনুগত দাসে পরিণত করার নানা প্রক্রিয়া গঠন এসব কারণে এ পেশায় মানুষ বাধ্য হয়ে আসে। স্বপ্ন নিয়ে নয়।
শিক্ষকদের হাজার সমস্যার সমাধান সম্ভব না হলেও অন্তত গড়ে সাড়ে ছয় টাকা টিফিন ভাতার অসম্মান থেকে  শিক্ষকদের মুক্তি দিতে পারে রাষ্ট্র বিশ্ব শিক্ষক দিবসে। আশা করি এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবস শুধুই "শিক্ষকতা মহান পেশা "এই বাণী আর নষ্ট মানুষের উপদেশ বর্ষণে শেষ হবে না।
সাড়ে ছয় টাকা টিফিন ভাতার অসম্মান থেকে মুক্ত হবে এবারের শিক্ষক দিবসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এ প্রত্যাশাই রইল।

 

শাকিলা নাছরিন পাপিয়া
শিক্ষক ও কলামিস্ট

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top