সিডনী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১

রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় ১৭৪টি দেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ : মু: মাহবুবুর রহমান   


প্রকাশিত:
৫ নভেম্বর ২০২০ ২১:৩২

আপডেট:
৫ নভেম্বর ২০২০ ২১:৪৮

ছবিতে বিজয়ীরা

 

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোবোটিক্স প্রতিযোগিতা ‘ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ' - ২০২০ এ ১৭৪টি দেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ‘ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ’ এমন একটি প্রতিযোগিতা যেখানে সমগ্র বিশ্বের  স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে থাকে। এবারে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতাটির চতুর্থ আসর, আর তাতেই বাজিমাৎ করলো বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা। ১৭৩ টি দেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ।   

ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি চ্যারিটি সংস্থা ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর স্কুল পর্যায়ের প্রতিযোগীদের জন্য এই রোবটিক্স প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতাটির প্রথম আসর। ২০১৮ সালে মেক্সিকোতে দ্বিতীয় আসর এবং ২০১৯ সালে তৃতীয় আসর বসে দুবাইয়ে। প্রতিটিতেই ধারাবাহিক সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা। গত বছর দুবাইয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ হয়েছিল সপ্তম। আর এবার উঠে আসলো এক নম্বরে। 

আন্তর্জাতিক ‘ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ - রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা সবাই সাধারণত: নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী আর তাদের বয়স সীমা ১৪ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। এই প্রতিযোগিতাকে অনেকে রোবটিক্সের অলিম্পিক বলেও  বর্ণনা করে থাকেন, কারণ বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশই এতে অংশ নেয়। আর ফরম্যাটটাও অনেকটা অলিম্পিকের  মতোই। 

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার ‘ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ’এর পুরো আয়োজন হয়েছে ভার্চুয়ালি (অনলাইনে)। এবারের প্রতিযোগিতার থিম ছিল 'কানেকটিং কমিউনিটিজ' (Connecting Communities), যার বাংলা করা যেতে পারে ‘সবার মধ্যে যোগাযোগ’। কোভিড -১৯ এর কারণে বিশ্বময় সামাজিক যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন তবে অব্যাহত আছে অনলাইনে যোগাযোগ।  আর এ কারণেই হয়তো এবারের থিম বেছে নেয়া হয়েছে 'কানেকটিং কমিউনিটিজ' (Connecting Communities)। 

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম বা স্টেম; Science, Technology, Engineering, Mathematics - STEM)—এই চারটি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে প্রতিবছর ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই সুযোগে একটু এসটিইএম বা স্টেম  নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।  এসটিইএম কে বলা হয় বিশ্ব এগিয়ে যাওয়ার চাবিকাঠি।  শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয় বরং সারা বিশ্বে শিক্ষার ক্রমবর্ধমান আন্দোলন হলো এসটিইএম। স্টেম শিক্ষার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে যাত্রা শুরু করেছে বিডি-স্টেম সোসাইটি।  

এসটিইএম বা স্টেম কে প্রাধান্য দিয়ে আয়োজিত ‘ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ’ এ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশ নেয় ঢাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। টেক একাডেমী নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে তারা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। যেহেতু এসটিইএম বা স্টেম এই প্রতিযোগিতার  মূল বিষয় আর তাই নানা ধরণের প্রকৌশলবিদ্যার  অনেক টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি নানা সৃজনশীলতার পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে হয় প্রতিযোগীদের। পৃথিবী ও এর বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত যেসকল হুমকির মুখে পড়ছে সেগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ধাপে সেগুলো সমাধান করে থাকেন। 

১ জুলাই থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত প্রায় তিন মাস ব্যাপী আয়োজিত ‘ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতায় কেবল এক সপ্তাহ ছাড়া পুরো সময়টাই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল টিম বাংলাদেশ। গত ৩১ শে অক্টোবর রাতে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। যেখানে ১১৭ পয়েন্ট পেয়ে টিম বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছে চিলি যার পয়েন্ট ১১৫ ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে  আলজেরিয়া যার পয়েন্ট ১১২ । এ ছাড়া ভারতের টিম অর্জন করে পঞ্চম স্থান।   

বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের এই অর্জনে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার (২ নভেম্বর) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের ছবি শেয়ার করে লেখা হয়, ‘আন্তরিক অভিনন্দন! যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ফার্স্ট গ্লোবাল আয়োজিত আন্তর্জাতিক রোবটিকস প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ১৭৩টি দেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটি দল। অভিনন্দন!’ 

সংবাদমাধ্যমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘১৭৪টি দেশের মধ্যে আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। এই অর্জন তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমাদের তরুণরা গণিত অলিম্পিয়াডে ভালো করছে, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে ভালো করছে, তারা ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জেও চ্যাম্পিয়ন হলো।’ 

এ বছর বাংলাদেশ থেকে ‘ফার্স্ট গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় — ম্যানগ্রোভ স্কুলের শিক্ষার্থী সুজয় মাহমুদ (১৭), স্যার জন উইলসন স্কুলের শিক্ষার্থী রাজীন আলী (১৮), ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুলের শিক্ষার্থী মাহি জারিফ (১৬), ডিপিএস এসটিএস স্কুলের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সেমন্তো (১৬), বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবরার জাওয়াদ (১৫) ও আয়মান রহমান (১৫), ধানমন্ডি টিউটোরিয়ালের শিক্ষার্থী বিয়াঙ্কা হাসান (১৯), সানবিম স্কুল থেকে জাহরা চৌধুরী (১৪), সাউথ ব্রিজ স্কুল থেকে আরিবাহ আনোয়ার (১৪), মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ফাইরুজ হাফিজ ফারিন (১৮)। দলটির প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে ছিলেন শামস জাবের। এ ছাড়াও, প্রযুক্তিগত মেন্টর বা পরামর্শদাতা হিসেবে শোয়েব মির্জা ও সহকারী পরামর্শদাতা হিসেবে ছিলেন ফারদিন অনন্ত ও নম্রত রায়। 

করোনাকালীন এই সময়ে দেশের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব আমাদেরকে আশান্বিত করে, স্বপ্ন দেখায় এগিয়ে যাওয়ার। তোমরা প্রমান করেছো সুযোগ পেলে ‘আমরাও পারি’। বিশ্বের ১৭৩টি দেশকে হারিয়ে দেশের জন্য যে গৌরব তোমরা বয়ে এনেছো সেজন্য স্যালুট তোমাদের। তোমাদের হাত ধরে আরো এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।   

 

মু: মাহবুবুর রহমান
 নিউজিল্যান্ডের মেসি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top