সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

ডিম মাছ ও মাংস খাওয়ার কথা বোধহয় মধ্য ও নিন্মবিত্তকে ভুলে যেতে হবে : মাহবুবুল আলম


প্রকাশিত:
১ মার্চ ২০২৩ ০৩:১৫

আপডেট:
১ মার্চ ২০২৩ ০৩:১৭

 

যেভাবে প্রতিনিয়ত মাছ, মাংস ও ডিমের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তা সহসাই হয়তো মধ্য ও নিন্মবিত্তের
মানুষকে এসব আমিষ খাওয়ার কথা ভুলে যেতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ডলার সংকট ও বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতির অজুহাতে দেশের বাজারে চলছে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। তার তা দেখার যেন কেউ নেই। সামনেই রমজান মাস। এই পবিত্র সিয়াম সাধনার মাসকে ঘিরেও চলছে অসাধু ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের চলছে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা! সামনে রেখে আরেক দফা বাড়ছে সব পণ্যের দাম। এর মধ্যে মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বাড়ছে হু হু করে।
দেশের বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। দামে রেকর্ড ভেঙে ২৩০-২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। গত সপ্তাহেও ব্রয়লারের কেজি ছিল ১৯০-২০০ টাকা। এ নিয়ে এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকার মতো।
ডিমের বাজারেও একই অবস্থা। সাদা ডিমের ডজন এখন ১২৫ টাকা, বাদামি ডিম ১৩০ আর হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা ডজন। বিক্রেতাদের কথা, এখন সব বড় খামার নিজেরা ডিম বাজারজাত করছেন। সেই সঙ্গে কর্পোরেট হাউসগুলো ডিমের বাজারে ঢুকায় দাম বাড়ছে।
এখন প্রতি ডজনে ডিমের দাম ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি হালি ৫০ টাকা। এসব আমিষের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্তের খাবারের টেবিল থাকে ফাঁকা। গরু ও খাসির মাংসের দাম আগে থেকেই চড়া। এখন বাজার ভেদে গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তের অধিকাংশ আমিষের যোগান আসে মাছ থেকে। কিন্তু মাছের বাজারেও দ্রব্যমূল্যে
বৃদ্ধির আগুন। শিং মাছ আকার ভেদে কেজিপ্রতি ৫২০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, রুই কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, ট্যাংরা মাছের কেজি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল আকার ভেদে ৪৯০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২১৫ টাকা, তেলাপিয়া ২১০ থেকে ২২০ টাকা, শোল মাছ কেজিপ্রতি ৪২০ থেকে ৬১০ টাকা, কই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা কেজি, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ৮০০ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম ১০০০ থেকে ১২৫০ টাকা কেজি, ১ কেজির বেশি ওজনের হলে কেজি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, দেড় থেকে ২ কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা কেজি, ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন রফিকুল ইসলাম। কুড়িলে গরুর মাংস কিনতে এসেছিলেন তিনি। জিজ্ঞেস করলে তিনি কলের কণ্ঠকে বলেন, ‘গরুর মাংসের দাম বেড়ে যে পর্যায়ে গেছে, ২০-২৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরিজীবীদের গরুর মাংস খাওয়ার দিন শেষ। আগে মাসে দু-একবার খাওয়া গেলেও এখন আর গরুর মাংস কিনে খাওয়ার অবস্থায় নেই।’ ( দৈনিক কালের কন্ঠ)
এ প্রসঙ্গে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে বলেন, "প্রায় নীরবেই প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে। এতে ভোক্তারা প্রতিনিয়ত আরো অসহায় হয়ে পড়ছেন। তাই পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের এখন থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রোধে সংশ্লিষ্টদের জোরালো ভূমিকা দরকার।"
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ডলারের চাপ তো রয়েছেই। দেশীয় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ডিম, মুরগির ক্ষেত্রে ফিডের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। এরপরও কোনো কারসাজি হচ্ছে কিনা- ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে কঠোরভাবে তা মনিটরিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচিত এ বিষয়ে এগিয়ে আসা। (দৈনিক ভোরের কাগজ)
ওয়াশিংটনভিত্তিক জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ পরিচালিত ‘স্টেট অব দ্য গ্লোবাল ওয়ার্কপ্লেস ২০২১’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনা মহামারির সময়ে বিশ্বে প্রতি তিনজনের একজন চাকরি বা কাজ হারিয়েছেন। ফলে মানুষের আয় কমেছে। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে, করোনার সময় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৫৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে খাদ্যশস্যের উৎপাদনে নিম্নমুখিতা, ডলারের উচ্চমূল্য, মূল্যস্ফীতির উচ্চহার ইত্যাদি কারণে মানুষের প্রকৃত আয় আরও হ্রাস পেয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছরের (২০২২ সালের) জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
দশমিক ৪৬ শতাংশ। এভাবে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকলে সরকারের প্রতি জন-অসন্তোষেরই বাড়তে থাকবে। সরকার যুগান্তরকারী অনেক উন্নয়ন করেছে একথা সত্য। কিন্তু অতিসাধারণ মানুষ
উন্নয়ন বোঝে না তারা চায় সস্তায় খাদ্যদ্রব্য কেনার
নিশ্চয়তা। এবং তা করতে না পারলে কোনো সরকারই জনরোষ থেকে বাঁচতে পারে না।

 

মাহবুবুল আলম
কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top