সিডনী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


না ফেরার দেশে চলে গেলেন সত্যজিৎ রায়ের অভিনেতা সৌমিত্র : ডঃ সুবীর মণ্ডল


প্রকাশিত:
১৬ নভেম্বর ২০২০ ২২:১৩

আপডেট:
১৬ নভেম্বর ২০২০ ২৩:২২

ছবিঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

 

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আজ আমাদের মধ্যে নেই। তিনি অমৃতলোকে পথে পাড়ি দিয়েছেন। ছয় দশক ধরে  বাঙালির হৃদয় মানচিত্রে অনুভবে, অনুপ্রেরণায় হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। চলে গেলেন আমাদের ফেলুদা। পড়ে থাকলো তাঁর অমলিন সৃষ্টিকর্ম। এক বর্ণময় বহু কৌণিক ব্যক্তিত্ব। সাজিয়ে রেখেগেছেন  তাঁর সৃষ্টি সম্ভারে আগামী প্রজন্মের জন্য। শুক্রবারের কলকাতা শুক্রবারের মাঘ সন্ধ্যায় এক নতুন চিত্রনাট্য খুঁজে পেল। এ ছবির প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা সবার একটাই নাম— সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

চুরাশিতেও যিনি আটচল্লিশ বা আঠারো।

জন্মদিনে ভাবেন না বগিটা মৃত্যু নামক টার্মিনাল স্টেশনের কাছে চলে এল। বরং নিজেকে ছুঁয়ে দেখেন ঝলমলে ভালবাসার মধ্যে। নিজেকে খোঁজেন আরও বেশি করে। “বাঙালি এত ভাবে চেয়েছে আমায়!”— বিস্মিত এক চিরতারুণ্য কথা বলে ওঠে।

১৯ জানুয়ারির আকাদেমির সন্ধে তখন আবেগময়। দর্শক জায়গা না পেয়ে মাটিতে। কেউ কেউ বাইরে থেকে দরজায় কান পেতেও শুনতে চাইছেন ‘অপু আড্ডা’।

মঞ্চে তাঁকে ঘিরে সমাপ্তির ‘মৃণ্ময়ী’। বললেন, ‘অপুর সংসার’ দেখে আমি তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে পড়ে গেছি। ওমা, উনি নিজেকে আমার কাছে পরিচয় করালেন ‘কাকা’ বলে!’’ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিলেন অপর্ণা সেন- চিদানন্দ দাশগুপ্ত, সত্যজিৎ রায়ের পরে তাঁর তৃতীয় মেন্টর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে পড়ে শোনালেন তসলিমা নাসরিনের ‘মৃত্যুদণ্ড’ কবিতা। জন্মদিনের এমন নির্বাচনে মুগ্ধ সৌমিত্র।

মীরের সঞ্চালনায় কখনও বা হাসির ছটা মঞ্চ জুড়ে। ‘আমাজন অভিযান’ মঞ্চস্থ হলে তাঁর অভিনেতা হবেন দেব-শঙ্কর হালদার বা ‘বুম্বাদা অমরসঙ্গী গাও না’, সবটাই মীরাক্কেলীয়!

কথার মাঝে গান হয়ে ফিরেছেন শ্রীকান্ত আচার্য। তাঁর ‘হয়তো তোমারই জন্য’-র সুর আর আবেগ জন্মদিনের রাজাকেও যেন রোম্যান্টিকতায় দুলিয়ে দিল। বহু জন্মের অনন্ত প্রেম ধরা দিল সৌমিত্রর ছন্দ আবেগে। তাঁর প্রেয়সীর জন্য পড়লেন তিনি ‘নিমন্ত্রণ’। কবিতা যেন জাপটে ধরেছে তাঁকে এক অমোঘ জীবনের নিরন্তর চলায়।

কী ভাবছেন তখন পাশে বসা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়? বললেন, “সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমার কাছে এক প্রতিষ্ঠান।”

খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছিল সুমন মুখোপাধ্যায়ের। চ্যাপলিন বলতেন কাজের মধ্যেই তিনি সবচেয়ে রিল্যাক্সড থাকেন। আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আপনি? “কাজেই আমার মুক্তি”— সহাস্যে জানালেন অপু।

এই ব্যস্ত কাজ-পাগল বাবা একদা চিঠি লিখে কথা বলতেন এগারো বছরের মেয়ের সঙ্গে। বাবার চিঠি পড়লেন মেয়ে পৌলমী বসু। সৌমিত্র মেয়েকে চিঠি লিখে বলেছিলেন মানুষ হতে। ক্ষমতা বা টাকাপয়সার মানুষ নয়। বড় হওয়া— ত্যাগে, জীবনে, ধৈর্যে বড় হওয়া মানুষ।

টাকি থেকে শ্যুটিংয়ের মাঝে ছুটে এসেছিলেন কৌশিক সেন। শুধু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্য। যে মানুষ ‘এক্ষণ’ পত্রিকা প্রকাশ করে, রঙ্গালয়ের ইতিহাসকে নিজের রক্তে লেখেন তাঁকে কুর্ণিশ জানানোর দিন যে আজ! খানিকটা আফশোস ছিল কৌশিকের গলায়, “আমি, সুমন, দেবশংকর, আমাদের উচিত ছিল ও পাড়ার মঞ্চকে জাগিয়ে রাখার। আজ কেন বিশ্বরূপায় অন্ধকার?”

জীবন নদীর মতো। মোড় ঘোরালেন দেবশংকর হালদার। আরও কাজ, আরও নিজেকে দেওয়া, আরও আরও ভাল থাকার নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দেবশংকর বললেন, উত্তমকুমার ভক্ত তিনি আজও মঞ্চ থেকে সৌমিত্রকে সংলাপ ছুড়ে দেন। জবাব আসে আর এক প্রান্ত থেকে।

নানা মনে নানা ভাবে আছেন তিনি। সুমন জানালেন, অপু বা ফেলুদা নয়, এ শহরের কোনও এক অবাঙালি মহিলা সৌমিত্রকে চিনেছিলেন ‘ওহ বেলাশেষে-র হিরো’ বলে!

সত্যি তো, বেলাশেষের নায়ক তিনি। যে কোনও রাস্তা থেকে বেলা শুরু করতে পারেন আজও!

রাত গাঢ় হয় শহরে। তবু কেউ বাড়ি ফিরতে চান না আজ।

অপেক্ষা! যদি শোনা যায়...‘হে বন্ধু বিদায়...’

শেষ বলে কিছু নেই! শেষের কবিতা হয় না। তবুও কালের যাত্রার ধ্বনির ডাক দিলেন সৌমিত্র। অমোঘ কালের কাছে তাঁর মিনতি, ‘মোর লাগি করিও না শোক’।

তিনি কবিতার বৃত্তে ঘুরতে থাকলেন। তাঁর রথের চাকায় অভিনেতা সৌমিত্র, লেখক সৌমিত্র, নাট্যকার সৌমিত্র, কবি সৌমিত্র, গায়ক সৌমিত্র, একলা ঘরে নিজের সঙ্গে কথা বলার সৌমিত্র, জীবনের ধুলোবালিতে ঘুরতে থাকলেন।

কালের রক্তস্রোতে তিনি বারে বারেই প্রথম!

আজ যেন তাঁকে প্রথম দেখা গেল...

 

শুক্রবারের কলকাতা শুক্রবারের মাঘ সন্ধ্যায় এক নতুন চিত্রনাট্য খুঁজে পেল। এ ছবির প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা সবার একটাই নাম— সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

চুরাশিতেও যিনি আটচল্লিশ বা আঠারো।

জন্মদিনে ভাবেন না বগিটা মৃত্যু নামক টার্মিনাল স্টেশনের কাছে চলে এল। বরং নিজেকে ছুঁয়ে দেখেন ঝলমলে ভালবাসার মধ্যে। নিজেকে খোঁজেন আরও বেশি করে। “বাঙালি এত ভাবে চেয়েছে আমায়!”— বিস্মিত এক চিরতারুণ্য কথা বলে ওঠে।

১৯ জানুয়ারির আকাদেমির সন্ধে তখন আবেগময়। দর্শক জায়গা না পেয়ে মাটিতে। কেউ কেউ বাইরে থেকে দরজায় কান পেতেও শুনতে চাইছেন ‘অপু আড্ডা’।

মঞ্চে তাঁকে ঘিরে সমাপ্তির ‘মৃণ্ময়ী’। বললেন, ‘অপুর সংসার’ দেখে আমি তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমে পড়ে গেছি। ওমা, উনি নিজেকে আমার কাছে পরিচয় করালেন ‘কাকা’ বলে!’’ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিলেন অপর্ণা সেন- চিদানন্দ দাশগুপ্ত, সত্যজিৎ রায়ের পরে তাঁর তৃতীয় মেন্টর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে পড়ে শোনালেন তসলিমা নাসরিনের ‘মৃত্যুদণ্ড’ কবিতা। জন্মদিনের এমন নির্বাচনে মুগ্ধ সৌমিত্র।

মীরের সঞ্চালনায় কখনও বা হাসির ছটা মঞ্চ জুড়ে। ‘আমাজন অভিযান’ মঞ্চস্থ হলে তাঁর অভিনেতা হবেন দেব-শঙ্কর হালদার বা ‘বুম্বাদা অমরসঙ্গী গাও না’, সবটাই মীরাক্কেলীয়!

কথার মাঝে গান হয়ে ফিরেছেন শ্রীকান্ত আচার্য। তাঁর ‘হয়তো তোমারই জন্য’-র সুর আর আবেগ জন্মদিনের রাজাকেও যেন রোম্যান্টিকতায় দুলিয়ে দিল। বহু জন্মের অনন্ত প্রেম ধরা দিল সৌমিত্রর ছন্দ আবেগে। তাঁর প্রেয়সীর জন্য পড়লেন তিনি ‘নিমন্ত্রণ’। কবিতা যেন জাপটে ধরেছে তাঁকে এক অমোঘ জীবনের নিরন্তর চলায়।

কী ভাবছেন তখন পাশে বসা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়? বললেন, “সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমার কাছে এক প্রতিষ্ঠান।”

খুব প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছিল সুমন মুখোপাধ্যায়ের। চ্যাপলিন বলতেন কাজের মধ্যেই তিনি সবচেয়ে রিল্যাক্সড থাকেন। আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আপনি? “কাজেই আমার মুক্তি”— সহাস্যে জানালেন অপু।

এই ব্যস্ত কাজ-পাগল বাবা একদা চিঠি লিখে কথা বলতেন এগারো বছরের মেয়ের সঙ্গে। বাবার চিঠি পড়লেন মেয়ে পৌলমী বসু। সৌমিত্র মেয়েকে চিঠি লিখে বলেছিলেন মানুষ হতে। ক্ষমতা বা টাকাপয়সার মানুষ নয়। বড় হওয়া— ত্যাগে, জীবনে, ধৈর্যে বড় হওয়া মানুষ।

টাকি থেকে শ্যুটিংয়ের মাঝে ছুটে এসেছিলেন কৌশিক সেন। শুধু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্য। যে মানুষ ‘এক্ষণ’ পত্রিকা প্রকাশ করে, রঙ্গালয়ের ইতিহাসকে নিজের রক্তে লেখেন তাঁকে কুর্ণিশ জানানোর দিন যে আজ! খানিকটা আফশোস ছিল কৌশিকের গলায়, “আমি, সুমন, দেবশংকর, আমাদের উচিত ছিল ও পাড়ার মঞ্চকে জাগিয়ে রাখার। আজ কেন বিশ্বরূপায় অন্ধকার?”

জীবন নদীর মতো। মোড় ঘোরালেন দেবশংকর হালদার। আরও কাজ, আরও নিজেকে দেওয়া, আরও আরও ভাল থাকার নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দেবশংকর বললেন, উত্তমকুমার ভক্ত তিনি আজও মঞ্চ থেকে সৌমিত্রকে সংলাপ ছুড়ে দেন। জবাব আসে আর এক প্রান্ত থেকে।

নানা মনে নানা ভাবে আছেন তিনি। সুমন জানালেন, অপু বা ফেলুদা নয়, এ শহরের কোনও এক অবাঙালি মহিলা সৌমিত্রকে চিনেছিলেন ‘ওহ বেলাশেষে-র হিরো’ বলে!

সত্যি তো, বেলাশেষের নায়ক তিনি। যে কোনও রাস্তা থেকে বেলা শুরু করতে পারেন আজও!

রাত গাঢ় হয় শহরে। তবু কেউ বাড়ি ফিরতে চান না আজ।

অপেক্ষা! যদি শোনা যায়...‘হে বন্ধু বিদায়...’

শেষ বলে কিছু নেই! শেষের কবিতা হয় না। তবুও কালের যাত্রার ধ্বনির ডাক দিলেন সৌমিত্র। অমোঘ কালের কাছে তাঁর মিনতি, ‘মোর লাগি করিও না শোক’।

তিনি কবিতার বৃত্তে ঘুরতে থাকলেন। তাঁর রথের চাকায় অভিনেতা সৌমিত্র, লেখক সৌমিত্র, নাট্যকার সৌমিত্র, কবি সৌমিত্র, গায়ক সৌমিত্র, একলা ঘরে নিজের সঙ্গে কথা বলার সৌমিত্র, জীবনের ধুলোবালিতে ঘুরতে থাকলেন।

কালের রক্তস্রোতে তিনি বারে বারেই প্রথম! আজ যেন তাঁকে প্রথম দেখা গেল...

 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (জন্ম জানুয়ারি ১৯, ১৯৩৫ — মৃত্যু নভেম্বর ১৫, ২০২০)। একজন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা। অভিনেতা হিসেবে তিনি কিংবদন্তি, তবে আবৃত্তি শিল্পি হিসেবেও তাঁর নাম অত্যন্ত সম্ভ্রমের সাথেই উচ্চারিত হয়। তিনি কবি এবং অনুবাদকও। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার ভিতর ১৪টিতে অভিনয় করেছেন।

 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রীট সিটি কলেজে, সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার ছবিতে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা, এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন। তিনি একজন খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকারও বটে।

চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতামহের আমল থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন। সৌমিত্রর পিসিমা তারা দেবীর সঙ্গে 'স্যার' আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র কলকাতা হাইকোর্টের জাস্টিস রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিবাহ হয়। সৌমিত্রর পিতৃদেব কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন এবং প্রতি সপ্তাহান্তে বাড়ি আসতেন। সৌমিত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন কৃষ্ণনগরের সেন্ট জন্স বিদ্যালয়ে। তারপর পিতৃদেবের চাকরি বদলের কারণে সৌমিত্রর বিদ্যালয়ও বদল হতে থাকে এবং উনি বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন হাওড়া জিলা স্কুল থেকে। তারপর কলকাতার সিটি কলেজ থেকে প্রথমে আইএসসি এবং পরে বিএ অনার্স (বাংলা) পাস করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টস-এ দু-বছর পড়াশোনা করেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর সর্বপ্রথম কাজ প্রখ্যাত চলচিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়-এর[৩] অপুর সংসার ছবিতে যা ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়। ছবিটি পরিচালকের ৫ম চলচিত্র পরিচালনা। তিনি এর আগে রেডিয়োর ঘোষক ছিলেন এবং মঞ্চে ছোটো চরিত্রে অভিনয় করতেন। ধীরে ধীরে তিনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি সত্যজিৎ রায় নির্মিত বিভিন্ন ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে আবির্ভূত হন। তার অভিনীত কিছু কিছু চরিত্র দেখে ধারণা করা হয় যে তাকে মাথায় রেখেই গল্প বা চিত্রনাট্টগুলো লেখা হয়। সত্যজিৎ রায়-এর দ্বিতীয় শেষ চলচিত্র শাখা প্রশাখা-তেও তিনি অভিনয় করেন।

তার অভিনীত চরিত্রগুলোর ভিতরে সবথেকে জনপ্রিয় হল ফেলুদা। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। প্রথমে ফেলুদা চরিত্রে তার চেয়েও ভালো কাউকে নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তার অভিনীত ফেলুদার প্রথম ছবি সোনার কেল্লা বের হওয়ার পর সত্যজিৎ রায় স্বীকার করেন যে, তার চেয়ে ভালো আর কেউ ছবিটি করতে পারতনা।

তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছেঃ

 

১৯৫৯ অপুর সংসার, ১৯৬০ ক্ষুধিত পাষাণ, ১৯৬০ দেবী, ১৯৬১ স্বরলিপি, ১৯৬১ সমাপ্তি তিনকন্যা,

১৯৬২ শাস্তি, ১৯৬৩ সাত পাকে বাঁধা, ১৯৬৩ শেষ প্রহর, ১৯৬৪ কিনু গোয়ালার গলি, ১৯৬৪ অয়নান্ত

১৯৬৫ একই অঙ্গে এত রূপ, ১৯৬৫ একটুকু বাসা, ১৯৬৬, ১৯৬৭ হাটে বাজারে, ১৯৬৮ পরিশোধ, ১৯৬৮ বাঘিনী, ১৯৬৯ পরিণীতা, ১৯৭০ অরণ্যের দিনরাত্রি, ১৯৭১ মাল্যদান, ১৯৭২ জীবন সৈকতে, ১৯৭৩ বসন্ত বিলাপ, ১৯৭৪ সোনার কেল্লা, ১৯৭৬ দত্তা, ১৯৭৮ জয় বাবা ফেলুনাথ, ১৯৭৯ নৌকাডুবি, ১৯৮০ হীরক রাজার দেশে, ১৯৮১ খেলার পুতুল, ১৯৮৩ অমর গীতি, ১৯৮৪ কোণি, ১৯৮৬ শ্যাম সাহেব, ১৯৮৭ একটি জীবন,  

১৯৮৮ লা ন্যুই বেঙ্গলি (Nuit Bengali, La), ১৯৮৯ গণশত্রু, ১৯৯০ শাখাপ্রশাখা, ১৯৯২ তাহাদের কথা,

১৯৯২ মহাপৃথিবী, ১৯৯৪ হুইল চেয়ার, ১৯৯৬ বৃন্দাবন ফিল্ম স্টুডিয়োজ (Vrindavan Film Studios), ১৯৯৯ অসুখ, ২০০০ পারমিতার একদিন, ২০০১ দেখা, ২০০২ সাঁঝবাতির রূপকথারা, ২০০৩ পাতালঘর,

২০০৪ Schatten der Zeit (শ্যাডোস অফ টাইম), ২০০৫ ফালতু, ২০০৬ দ্য বঙ কানেকশন, ২০০৭ চাঁদের বাড়ি ।

 

তিনি ২০০৪ সালে পান পদ্ম ভূষণ, ভারত সরকার, ২০১২ সালে পান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, ভারত সরকার, ২০১৭ পান লিজিওন অফ অনার, ফ্রান্স সরকার, ২০১৭ পান বঙ্গবিভূষণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার (২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন)।

২০২০ সালের ১ অক্টোবর বাড়িতে থাকা অবস্থাতে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে চিকিৎসকের পরামর্শমতে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৫ অক্টোবর কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। এর পরের দিন ৬ অক্টোবর তাকে বেলভিউ নার্সিং হোমে ভর্তি হন। এখানে ১৪ অক্টোবর করোনার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর সৌমিত্র খানিক সুস্থ হতে থাকেন। চিকিৎসা চলা অবস্থাতে ২৪ অক্টোবর রাতে অবস্থার অবনতি ঘটে। কিডনির ডায়ালাইসিস করানো হয়, প্লাজমা থেরাপি পূর্বেই দেয়া হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হতে থাকলে পরিবারের লোকজনকে জানানো হয়। অবশেষে ভারতীয় সময় ১২টা ১৫ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র-সংগৃহীত, আনন্দবাজার পত্রিকা, ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং গ্রন্হ।

 

ডঃ সুবীর মণ্ডল,
লোকগবেষক, প্রাবন্ধিক, অণুগল্প ও ছোটগল্প,রম্যরচনা, চিত্রনাট্য এবং ভ্রমণ কাহিনীর লেখক
বাঁকুড়া ,পশ্চিমবঙ্গ ,ভারত।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top