হারিয়ে যাচ্ছে বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যর প্রতিকগুলি : শাহান আরা জাকির পারুল
প্রকাশিত:
২ জুন ২০২০ ২৩:৪৮
আপডেট:
১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:০৭

হাজার বছরের চলে আসা বাঙ্গালিদের কিছু ঐতিহ্যবাহী জিনিস, যা আমরা সেই প্রাচীন কাল হতে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে আসছি। এই ঐতিবাহী জিনিস গুলি হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতির এক একটি উপাদান ও বাঙ্গালী সংস্কৃতির- ঐতিহ্যের ধারক। যা গ্রাম বাংলার গৃহস্থের সচ্ছলতা ও সুখ সমৃদ্ধির প্রতিক হিসবে প্রচলিত ছিল।
আজ এই আধুনিক যুগে আধুনিক পণ্যের কাছে, আধুনিক কলা কৌশলের নিকট মার খেয়ে আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে এখন পুরোপুরি যান্ত্রিক ঢেউ লেগেছে। মাছে-ভাতে বাঙ্গালীর ঘরে এক সময় নবান্নের উৎসব হতো ঘটা করে। উৎসবের প্রতিপাদ্যটাই ছিল মাটির গন্ধ মাখা ধান। ঢেকি ছাটা ধানের চালের ভাত আর সুস্বাদু পিঠার আয়োজন।
যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন মানুষের জীবণে এটে সেটে বসছে আধুনিকতার ধারা। একে একে নতুনের চমকে পুরনোরা যেন আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। আগের সেই সৌম কান্তি চেহারায় এখন মাঞ্জা পড়ছে ধাপে ধাপে রঙের প্রলেপ। সব কিছু ঢেকে যাচ্ছে চকèকিতে। এতে করে জীবন ধারায় সঞ্চালিত হয়ে উঠেছে রকেট গতির প্রতিযোগিতা। একটার পর একটা পরিবর্তন এনে দিচ্ছে কী করে নিজেকে আরো বেশি প্রাপ্তির খাতায় লেখানো যায়।
ঐতিহ্যের ধারা আজ যেন বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রদর্শনী আর ষ্ফাণিক হৈ চৈ জীবনকে নতুন করে তোলে তার ক্লান্তির ধারায়। মানুষ যেন আজ শারিরীক শ্রম ভুলে যাচ্ছে। খাঁচার পাখি বা খামারে লালন পালন করা মুরগীর মত উৎপাদন করে যাচ্ছে তার চাহিদার মত করে। বেড়ে চলা মানুষের ভীড়ে আর প্রয়োজনের তাগিদে মানুষও যেন যন্ত্র হতে চলেছে।
সারা বিশ্ব জুড়ে আরো বেশি প্রাপ্তি ও আরো একটু আরাম আয়েশের আশায় সময় ও শ্রম বাঁচিয়ে নিজেকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করে তুলছে। বর্তমানে ভিনদেশী চাকচিক্য সংস্কৃতি সমাজে প্রবেশ করে আমাদের পুরোনো নিজস্ব ঐতিহ্যকে পশ্চাতে ফেলে যেন জ্যামিতিক হারে এগিয়ে চলছে। ঠিক আমাদের পুরোনো সংস্কৃতি গাণিতিক হারের মত দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই এই দুর্বলতাকে পাশ কাটিয়ে আমাদের সংস্কৃতিকে আমাদের লালন করতে হবে। তা না হলে তখন হয়ত আমাদের নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহ্য থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
সত্যি কথা বলতে গেলে, আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিকগুলির কথা আজ যেন রূপকথার গল্পের মতো করে শোনাতে হয় আমাদের নতুন প্রজন্মকে। আগামী প্রজন্মের কাছে হয়তো এটা স্বপ্নের মত মনে হবে। তখন ইতিহাসের পাতায় পড়া ছাড়া বাস্তবে খুঁজে পাওয়া দুষ্প্রাপ্য হবে। নতুবা কোনো যাদুঘরের কোণে ঠাঁই করে নিবে নিজের অস্তিত্বটুকু নিয়ে।
হারিয়ে যাওয়া আমাদের বাঙ্গালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীকগুলি
১. পালকের কলম
২. বন গাছের কলম
৩. বাঁশের কন্তির কলম
৪. কলা ও তাল পাতার কাগজ
৫. পালের নৌকা
৬. খড়ম
৭. পালকী
৮. গরুর গাড়ি¬
৯. শিকা
১০.হুকা
১১. ঢেঁকি
১২. আলতা বড়ি
১৩. পিড়ি
১৪. মাথাল বা মাথল
১৫. নকশীকাঁথা
১৬. ডুলি
১৭. কলুর ঘানি
১৮. পাতি কুপ ও ইঁদারা
১৯. পাতার বিড়ি
২০. উরুন-গাইন/ডাইল-চিয়া
২১. খেজুর পাতার পাটি¬
২২. কাগজের তৈরি ডালি
২৩. যাঁতি
২৪. পানি সেঁচের জাঁত বা ডোঙ্গা
২৫. ধান/চাল রাখার কুটির
২৬. ডোল
২৭. কুড়ে ঘর
সরকারী বা বেসরকারীভাবে আমাদের ঐতিহ্যগুলো নিয়ে বিশেষ মেলার ও সেমিনারের আয়োজন করলে বর্তমান প্রজন্ম এই হারানো ঐতিহ্যগুলো চিনতে পারবে এবং রক্ষায় এগিয়ে আসবে।
শাহান আরা জাকির পারুল
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক
শাহান আরা জাকির পারুল
নাট্যকার, লেখক ও গবেষক
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: