সিডনী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

কতোটা পথ পেরোলে... : মশিউর রহমান


প্রকাশিত:
১৮ জুন ২০২০ ২২:৪২

আপডেট:
১৮ জুন ২০২০ ২২:৫০

মশিউর রহমান

 

এগারো বছর পেরোনো মেয়ে। হাসি আনন্দে স্কুলের বই-খাতা-পেনসিল যার হাতে থাকার কথা, বাড়ির উঠোন কাঁপিয়ে খেলে বেড়ানোর কথা, ঝড়ের দিনে আম কুড়োনোর কথাÑ কিন্তু না পৃথিবীর কোনো একপ্রান্তে পড়ে থাকা একটি মেয়ের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এই বয়সেই অভাবের তাড়নায় বাবা-মা তাকে বনবাসে পাঠিয়ে দেয়। এগারো পেরোনো মেয়েটিকে বাবা-মা পাশ্ববর্তী রাজ্যের লঙ্কা খেতে কাজ করতে পাঠানো আর বনবাসে পাঠানো একই কথা।

-সাধন কাকা তোমাদের সাথে গেলে আমি দু বেলা দু মুঠো খাবার পাবো?

-হ্যাঁ, তুই আমাদের সাথে লঙ্কা ক্ষেতে কাজ করলে তিন বেলা খাবার পাবি। আর মাস শেষে বাড়িতে তোর বাবা-মায়ের জন্য কিছু টাকাও পাঠাতে পারবি।

-আমি তোমাদের সাথে যাব কাকা।

মেয়েটি এই প্রথম রেলগাড়িতে উঠে সাধনকাকার সাথে ১৫০ কিলোমিটার দূরে তেলেঙ্গানা রাজ্যের একটি লঙ্কা ক্ষেতে কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এক মাস যায়, দু মাস যায় মেয়েটি লঙ্কা ক্ষেতে কাজ করে। বিনিময়ে দু বেলা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে পেট পুরে ভাত বা রুটি খেতে পায়। যদিও এতে শরীরে পুষ্টির অভাব ঘোচে না, কিন্তু পেটের জ্বালা তো মরে।

এমনি করেই মেয়েটির দিন ভালোই কাটছিল। দু-একবার বাবার কাছে টাকাও পাঠিয়েছে। তারপর 'লকডাউন' নামক নতুন একটি ইংরেজি শব্দের খপ্পরে পড়ে আটকা পড়ল পার্শ্ববর্তী ছত্তিশগড় রাজ্য থেকে আসা পনেরো-বিশ জন শ্রমিক।

খোলা আকাশকে আশ্রয় করে কয়েকটা দিন পার করল তারা। এক পর্যায়ে সাধনকাকা বলল, মরতে হলে নিজের বাড়িতে গিয়েই মরব। এ রাজ্যে থাকলেও তো না খেতে পেরে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, করোনা রোগে মরতে হবে।

সিদ্ধান্ত হলো যেভাবেই হোক তারা নিজেদের বাড়িতে পৌঁছবে। কিন্তু কীভাবে? বাস, ট্রেন, সব তো বন্ধ। পায়ে হেঁটেই তারা দেড়শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে?

 

পনেরো জনের কাফেলা। দেড়শো কিলোমিটার পথ। পাড়ি দিতে সময় লাগবে চার দিন। সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু বাঁধ সাধল চামলো মাকদোম। একে তো কচি বয়স, তার ওপর দেড়শো কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে হবে। বাচ্চা মেয়েটি এতোটা পথ যেতে পারবে না। গোপনে সিদ্ধান্ত হলো ওকে এখানে রেখেই তারা গভীর রাতে হাঁটা শুরু করবে। যদিও সাধনকাকার তাতে সায় ছিল না। আড়াল থেকে এ কথা শুনতে পেয়ে চামলো সারা রাত ঘুমালো না। অবশেষে সবাই যখন হাঁটা শুরু করল চামলোও কাফেলার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করল।

গভীর রাত জনমানবহীন পথে পনেরো জনের কাফেলা হাঁটছে। হাঁটছেই। বিরামহীন। চামলোর কিশোরী পা দুটোও যেন আজ বলিষ্ঠ। হাঁটতে তাকে হবেই। পাছে সে কাফেলাকে হারিয়ে ফেলে তাই আরও জোরে জোরে পা ফেলে হাঁটার গতি বাড়াল।

সূর্য তার সোনালি আলো ছড়িয়েছে। সারা রাত হাঁটার পর কাফেলা দলটি একেবারে খোলা মাঠের মাঝখানের রাস্তায়। চারিদিকে কোনো আশ্রয় নেই। বেশ কিছুটা দূরে একটা বড়োগাছ দেখা যাচ্ছে। আরও কিছুটা এগিয়ে দলটি গাছের নিচে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যে যেভাবে পারল গা এলিয়ে দিল। চামলো তখনো গাছের নিচে এসে পৌঁছায়নি। অবশেষে সাধনকাকা মেয়েটিকে দেখতে পেল। সে সবাইকে বলল, সবাই দেখ, চামলো ঐ এসে পড়েছে। সবাই মেয়েটির আসা পথের দিকে চোখ রাখল। সাধনকাকা কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে কাঁধে তুলে নিয়ে গাছের নিচে এসে বসল। মেয়েটিকে দেখে সবাই বেশ খুশি হলো। যদিও তারা মেয়েটিকে অচেনা অরক্ষিত অনিরাপদ জায়গায় ফেলে রেখে আসতে চেয়েছিল।

আধাঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে কাফেলাটি আবার হাঁটা শুরু করল। সারা রাত মাত্র তারা বারো কিলোমিটার পথ হাঁটতে পেরেছে। হাঁটছে তো হাঁটছেই। কাফেলার সামর্থ্যবানরা লম্বা লম্বা পা ফেলে সামনে এগোচ্ছে। কিন্তু ওদের সাথে তাল মিলিয়ে যেতে হলে চামলোকে দৌড়াতে হচ্ছে। এদিকে ক্রমেই বেলা বাড়ছে। চৈত্রের খরতাপ শেষে প্রকৃতিতে বোশেখের কাটফাটা রোদ্দুর। চামলোর কচি কালো মুখটা তপ্ত হয়ে উটেছে। সূর্য মাথার ওপর থেকে অনেক আগেই হেলে পড়েছে। মেয়েটির মুখ পুড়ে তামাটে বর্ণ ধারণ করেছে। কাফেলা থেকে বেশ পিছে পড়ে গেছে সে। সাধন কাকা বলল, মেয়েটি আর হাঁটতে পারছে না। এবার একটু বিশ্রাম নেওয়া যাক। আর মেয়েটিও এসে পড়ুক।

কিছুক্ষণ পর চামলো কাফেলার সাথে মিলিত হল। ওরা তখন শুকনো খাবার খেতে ব্যস্ত। চামলোও নিজের কাছে থাকা পাউরুটি আর কলা খেয়ে জল খেল অনেকখানি। তারপর আবার হাঁটা শুরু। চামলো বলল, কাকা আমার তো বিশ্রাম হয়নি। আর একটু বসো তারপর হাঁটব।

আজ সারাদিন তাদের আরও ত্রিশ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। তাহলে পঞ্চাশ কিলোমিটার হাঁটা হবে।

বিশ্রাম ও পেটে দানাপানি পড়ার কারণে সবাই শরীরে শক্তি ফিরে পেয়েছে। জোরপায়ে হাঁটা শুরু করল কাফেলাটি। তাল মিলিয়ে চামলো ঘণ্টাখানেক হাঁটতে পারল। তারপর সে ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে লাগল।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। চামলো কাফেলার থেকে অনেকটাই দূরে। তার সামনে আছে সাধনকাকা। সাধন কাকা ইচ্ছে করেই এখন একটু আস্তে হাঁটছে। যাতে মেয়েটিকে সাথে করে নিয়ে যেতে পারে।

সন্ধ্যার পর আবারও আধাঘণ্টার বিশ্রাম। মূল সড়কে যতক্ষণ আলো আছে ততক্ষণ হাঁটবে সবাই। হাঁটতে হাঁটতে চামলোর কচি পা দুটো আবারও ফুলে উঠেছে। তবুও সে হাঁটছে।

 

এখন মাঝ রাত। আকাশের চাঁদটা ক্ষীণ হয়ে আসছে। তার আলোটাও নিষ্প্রভ। এমনি অবস্থায় কাফেলাটি একটি পরিত্যক্ত মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছে। সাধনকাকা বলল, আজকের রাতটা আমরা ঘুমাব। কাল সকাল থেকে আবার হাঁটা শুরু করব। চামলো সাধনকাকার পাশে মন্দিরের চাতালে বেঘোরে ঘুমিয়ে পড়ল। গভীর ঘুমে এখন সে আচ্ছন্ন। ঘুমের মাঝে তার মায়ের মুখটা ভেসে উঠল। সে দেখতে পেল তার মা তার জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে। তার মেয়ে অনেক দূর... থেকে আসছেÑ তাই আজ ভালো করে তরকারি রান্না করেছে। আজ সে মেয়েকে নিজ হাতে খাইয়ে দেবে। চামলো গাল হাঁ করেছেÑ এমন সময় সাধনকাকার ডাকাডাকি ও অন্যান্যদের চেঁচামেচিতে চামলোর ঘুম ভাঙে।

সকাল ভোরেই কাফেলাটি আবার হাঁটা শুরু করল। চামলো সাধনকাকাকে জিজ্ঞেস করল, আর কতদূর কাকা আমাদের গ্রাম?

সাধনকাকা বলল, আরও তিন দিন আমাদের এভাবে হাঁটতে হবে। তারপর আমরা গাঁয়ে পৌঁছাব।

চামল বলল, আরও তিন দিন! তার ছোটো চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে উঠল।

কাফেলাটি জোর কদমে হাঁটছে। হাঁটছে। হাঁটছে। হাঁটছেই। বিরামহীন। জনমানবহীন।

চামলো মনে মনে ভাবছে আর তো মাত্র তিন দিন। ও ঠিকই পারবে। কাফেলাটি এখন নির্জন খরতপ্ত ধূধূ মেঠোরাস্তা পাড়ি দিচ্ছে। হঠাৎ একটা কালবোশেখীর ঘূর্ণি হাওয়া শুরু হলো। চামলো আওয়াজ করে সাধনকাকাকে ডাকল। বলল, কাকা ঝড়ের মাঝে আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তুমি আমার হাতটা ধরো...

মেয়েটির কথা সাধনকাকা শুনতে পেল না। চামলো অন্ধের মতো এগিয়ে চলল আর সাধনকাকাকে ডাকতে থাকল। সাধনকাকা...

সে একটা উঁচু মাটির ঢেলায় আঘাত পেয়ে পড়ে গেল। দু'হাত দু'পায়ে চেষ্টা করে গেল সামনের দিকে এগোনোর। কারণ সে জানে সামনে তাকে এগোতেই হবে। নাহলে কাফেলাটি তাকে ফেলে চলে যাবে।

ঝড় থামল। কোথায় চামলো? কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না। সাধনকাকা পিছু ফিরে চাইল। তারপর পিছনে হাঁটল চামলোর খোঁজে। মেয়েটিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখল...। কাছে গিয়ে দেখল চোখমুখ সহ সারা দেহে মাটি মাখামাখি। সে মেয়েটিকে কাঁধে উঠিয়ে কাফেলার সাথে যোগ দিল। মেয়েটি তখনও নিস্তেজ...। কাঁধ থেকে নামিয়ে সাধনকাকা মেয়েটির চোখেমুখে পানি ছিটালো। মেয়েটি চোখ মেলে তাকাল। কাফেলাটি বিশ্রাম শেষে আবার হাঁটা শুরু করল। মেয়েটি এখন আর চলতে পারছে না। সাধনকাকা তাকে কাঁধে নিয়েই ঘণ্টাখানেক পথ হাঁটল। মেয়েটি ততক্ষণে একটু শক্তি ও সাহস ফিরে পেয়েছে। সে বলল, কাকা আমি এখন হাঁটতে পারব।

কাফেলাটি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত হাঁটল। তারপর বিশ্রাম। মেয়েটির চোখ, মুখ, ঠোঁট শুকিয়ে গেছে। সে একটু পানি চাইছে। সাধনকাকা মেয়েটিকে পানি খেতে দেয়। পানি খেয়ে মেয়েটি বলল, কাকা ভাত খাব। নাহলে আমি আর হাঁটতে পারব না।

কাফেলার সদস্য মঈনুল বলল, কাকা সামনে মনে হচ্ছে খাবারের হোটেল পাওয়া যাবে।

ওরা সামনে এগোলো। একটা হোটেলে ঢুকে ওরা পেট পুরে ডাল ভাত খেল। চামলো বলল, কাকা আমরা আর কতদিন এভাবে হাঁটব। আমরা বাড়ি পৌঁছাতে পারব তো?

মঈনুল বলল, আমরা আজ রাতে যতক্ষণ পারি হাঁটব। যদি সুবহেসাদিক পর্যন্ত হাঁটতে পারি তাহলে আমরা অনেকখানি কাছিয়ে যাবো। তারপর কাল সারাদিন একটানা হাঁটলে আমরা বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যাব।

চামলোর ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো চকচক করে উঠল।

সুবহেসাদিক পর্যন্ত সাধনকাকা কখনো মেয়েটির হাত ধরে আবার কখনো মেয়েটিকে কাঁধে নিয়ে হাঁটল। এখন তারা নিজ গ্রাম থেকে মাত্র আটচল্লিশ কিলোমিটার দূরে...।

মঈনুল ফজরের নামাজ পড়ে, দু হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চাইল। অন্যান্যরাও সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চাইল। তারা যেন তাদের গ্রামে পৌঁছাতে পারে।

 

আজ প্রকৃতিতে গুমোট ভাব। সকালটা দমধরা। কাফেলাটি ক্লান্ত অবসন্ন দেহে তাদের জার্নি শুরু করল। চামলোকে জানানো হলো আজ সারাদিন হাঁটলেই তারা বাড়িতে পৌঁছে যাবে। চামলোর ছোট্ট বুকে সাহস ফিরে পেল। সে সাধনকাকার হাত ধরে দ্রুতপায়ে হাঁটা শুরু করল। ঘণ্টাখানেক ভালোই হাঁটতে পারে চামলো। কিন্তু তারপর আর সে হাঁটতে পারে না। সাধনকাকাও মেয়েটিকে নিয়ে আর এগুতে পারছে না।

দুপুর গড়িয়ে গেছে। সূর্যটা এখন ঝলমলে। গুমোটভাব কেটে গিয়ে উত্তপ্ত রোদ ছড়াচ্ছে। সাধনকাকার সারা দেহ ঘামে ভিজে চপচপে। আর মেয়েটির শরীরে হয়তো আর এক ফোটা পানিও নেই। তার শরীর শুকিয়ে একেবারে পলতে হয়ে গেছে।

হঠাৎ মেয়েটি কঁকিয়ে উঠল...। বলল, কাকা আমি আর হাঁটতে পারছি না। আমার পেটটা জ্বলে যাচ্ছে। তুমি আমায় বাঁচাও...

সাধনকাকা মেয়েটিকে পানি খেতে দেয়। সে কয়েক ঢোক পানি খেল... তারপর পানিটাও আর গিলতে পারল না। সে অবচেতন মনেই অস্ফুট স্বরে বলতে লাগল, আমি মায়ের কাছে যাব। আর কতদূর কাকা...

এক পর্যায়ে আর কথা বলতে পারল না। সাধনকাকা চোখেমুখে পানি ছিটাতে লাগল। কখনো মুখ হাঁ করে দাঁতের কপাট খুলে পানি দিতে লাগল। মেয়েটির মুখ আর হাঁ হলো না। দাঁতের কপাট খুলল না। সাধনকাকা চিৎকার করল, মঈনুল এদিকে আয়, মেয়েটি মনে হয় আর বাঁচল না...

সাধনকাকার চিৎকারে কাফেলাটি পিছন ফিরে চাইল। মঈনুল বলল, কাকা তুমি মেয়েটিকে নিয়ে সামনে এসো। আমরা এখানে দাঁড়াচ্ছি...

সাধনকাকা চামলোর নিথর দেহটি কাঁধে করে এগিয়ে চলল। মঈনুল কিছুটা এগিয়ে এসে সাধনকাকার কাঁধ থেকে মেয়েটিকে নামিয়ে একটি গাছের নিচে বসল। দলের অন্যান্যরা মেয়েটির শ্বাস ও নাড়ি পরীক্ষা করে বলল, সে আর নেই... তার গাল বেয়ে লালা বের হচ্ছে। একটু আগে সাধনকাকা যে পানি খেতে দিয়েছিল সেটিই লালা হয়ে বের হচ্ছে...

সবার চোখেমুখে তৃষ্ণা ও বিমর্ষতা ফুটে উঠলেও কারও চোখে পানি নেই। সবার চোখই পানিশূন্য।

সাধনকাকা একটু পরে মেয়েটির চুপসে যাওয়া নিথর দেহটি কাঁধে নিয়ে মঈনুলকে বলল, আর কতদূর...

মঈনুল বলল, আর মাত্র চৌদ্দ কিলোমিটার...

 

 

পরিশিষ্ট

গল্পের চরিত্রগুলো সবই কাল্পনিক শুধু চামলো মাকদোম ছাড়া। ঘটনাটি সত্য। করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে সারা ভারতজুড়ে যখন লকডাউন শুরু হলো। তখনই ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের একটি মরিচক্ষেতে ছত্তিশগড় রাজ্য থেকে কাজ করতে আসা ওই পনেরো-বিশজনের শ্রমিক আটকা পড়ে। আর তাদের সেই দলে ছিল চামলো মাকদোম নামে এগারো পেরোনো বারো বছরের একটি কিশোরী মেয়ে। তারা সিদ্ধান্ত নিল যে পায়ে হেঁটেই তারা নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছবে। নিজ বাড়ি থেকে যখন মাত্র চৌদ্দ কিলোমিটার দূরে তখনই মেয়েটির মৃত্যু হয়। এই ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দেয় অনেক বছর আগে ঘটে যাওয়া ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের বন বিভাগের চাকরিতে নিয়োগের প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার কথা। লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা শেষে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন, তাদেরকে পায়ে হেঁটে ত্রিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবেÑ এটাই ছিল প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা। অনেকের মতো সেখানে সঞ্জীব পুরোহিত নামে এক লোক সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি ত্রিশ কিলোমিটার পথ হাঁটবেন এবং চাকরিটা তিনি পাবেন। সঞ্জীব পুরোহিত হাঁটা শুরু করলেন, রৌদ্র খরতাপে ত্রিশ কিলোমিটার পথ যেখানে শেষ হলো সেখানে পৌঁছেই তিনি জ্ঞান হারালেন এবং ইহজগতের চাকরির লীলা সাঙ্গ করলেন। এ ঘটনাটি নিয়ে সুমন চট্টোপাধ্যায় গান বেঁধেছিলেন, সঞ্জীব পুরোহিত হাঁটলেন...

 

লেখক : মশিউর রহমান
শিশুসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান লেখক
শিশুসাহিত্যে ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ও অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত,
প্রকাশক, সৃজনী
পরিচালক (প্রচার), বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top