সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

সত্য : আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ


প্রকাশিত:
৪ জুলাই ২০২০ ২৩:৫২

আপডেট:
৫ জুলাই ২০২০ ২০:৪৭

 

ইউনির্ভাসিটির মাঠ যেন লোকে লোকারাণ্য। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই বিশাল মঞ্চে লাল নীল রকমারী বাতির দুষ্টুমি খেলা শুরু হয়ে গেল। আজ মেগা কনসার্ট। একটু পরেই মঞ্চ মাতাতে আসবে দেশের সেরা রক স্টার এ বি সনেট। এই ইউনির্ভাসিটিতে সনেট আগেও এসেছে। সে অনেক দিন আগের কথা। অন্যদের কনসার্ট চলার সময় বিরতির ফাঁকে একটা দুইটা গান গাওয়ার সুযোগ পেত তখন। কখনো কখনো গান গাওয়ার সুযোগই পেতনা। কিন্তু আজ সনেট আন্তর্জাতিক ব্যক্তি। আশেপাশের দেশ গুলোতেও রয়েছে তার অনেক ভক্ত। কি দেশ কি বিদেশ তার এক একটা কনসার্ট যেন জন সমূদ্র। এ বি সনেট একটানা গান গায় না। দুই একটা গেয়ে একটু বিশ্রাম নেয়। ঐ সময় অন্যদের সুযোগ দেয়া হয় গাওয়ার জন্য।
সনেটের সাথে আজ আরো কয়েকজন গান গাইবে। তাদের মধ্যে এই ইউনির্ভাসিটির সাবেক ছাত্র শাহেদও আছে। শাহেদ অসাধারন গায়। প্রথমে শখের বসে গাইতো। কিন্তু এখন সঙ্গীতই তার সকল ধ্যান জ্ঞান। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে একটা ব্যান্ড দল গঠন করেছে। দুইটা এলবামও বের হয়েছে। প্রথমটা সুপার হিট। দ্বিতীয়টাও ভালই চলেছে। আজ সনেটের সাথে একই মঞ্চে গাওয়ার সুযোগ পেয়ে সে মহা খুশি। এই ইউনির্ভাসিটির সকলেই শাহেদের গানের ভক্ত। ব্যক্তি হিসাবেও তাকে সবাই খুবই পছন্দ করে। কোন প্রোগ্রাম ছাড়াই মাঝে মধ্যে শাহেদ গিটার নিয়ে চলে আসে ইউনির্ভাসিটিতে। মাঠে বসে মুহুর্তেই আসর জমিয়ে ফেলে।
সন্ধ্যাটা একটু গাঢ় হলো। হঠাৎ মঞ্চের সমস্ত বাতি নিভে গেল। আবার ড্রামের তালে তালে জীবন্ত হয়ে উঠলো বাতিগুলো। এদিক ওদিক ছোটাছুটি শুরু করলো লেজার রশ্মি। নাচতে নাচতে মঞ্চে এলো রক স্টার এ বি সনেট। প্রথমেই গাইলো তার বিখ্যাত গান “এইতো আমার সারা জীবন” এর পর “এই দিন এই রাত” একে একে চারটা গানে মাতিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রামে গেল সনেট। মঞ্চে উঠলো শাহেদ। শুরু করল তার সুপার হিট গান “আমি তোমার হব” দিয়ে। কয়েক লাইন গাওয়ার পরই শাহেদ বুঝতে পারলো তার গানটা ঠিকভাবে যাচ্ছেনা। দর্শকদের মধ্যে থেকে কয়েক জন চিল্লাচ্ছে “সাউন্ড দে, সাউন্ড।” এক কর্ণার থেকে কয়েক জন মুখে হাত দিয়ে বলে উঠলো “ভুয়া ভুয়া” শাহেদ লক্ষ্য করল কেউ তার গান ঠিক ভাবে শুনছে না। গুনগুন করে কথা বলছে সবাই। শাহেদ বুঝতে পারল না সমস্যাটা ঠিক কোথায় হয়েছে। খালি গলায় একটা মাত্র গিটার দিয়ে এই ক্যাম্পাস মাতিয়ে তোলে শাহেদ। আর আজ এত ইনস্ট্রুমেন্ট এত চমৎকার সাউন্ড সিস্টেমেও কেউ তার গান শুনছে না। গান শেষ করে মঞ্চের পিছনে এসে রিফাতের হাত ধরে বলল, “দোস্ত কি হইছে বলতো।” রিফাত শাহেদের প্রাণের দোস্ত। দীর্ঘদিন ধরে এক সাথে গান করছে। রিফাতকে বেশ আতঙ্কিত দেখাচ্ছে “কিছুই বুঝতেছিনা, সাউন্ড ঠিক মত আসতেছেনা, চল সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মুকিত ভাইয়ের সাথে গিয়া কথা বলি।”
দুই জন দৌড়ে গেল মুকিতের কাছে। মুকিত একটু রাগী ভাব নিয়ে বলল, “সবই ঠিক আছে। ঠিক মত গাইয়া যান আপনে। আমার এখানে কোন সমস্যা নাই।”
শাহেদ আর রিফাত মঞ্চের দিকে তাকালো। নতুন শিল্পী মুজাহিদ হাসান গান গাইছে। দর্শকরা ভুয়া ভুয়া বলে মাতিয়ে তুলছে। কিন্তু মুজাহিদের সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে একাই গাইছে একাই নাচছে। এ বি সনেট যে মঞ্চে গাইছে সেই মঞ্চে সেও গাইছে। এটাই তো তার সঙ্গীত জীবনের সব থেকে বড় পাওয়া।
মুজাহিদের পরে আবার মঞ্চে উঠলো এ বি সনেট। দু'টা গান গাইলো। জন সমূদ্রে উথাল পাথাল আনন্দ ঢেউ উঠলো। আবার ডাক আসলো শাহেদের। এই প্রথম মঞ্চে উঠতে তার ভয় করছে। শাহেদের অবস্থা বুঝতে পেরে রিফাত বলল, “ভয় পাসনে দোস্ত, মনে সাহস রাখ। আমি মুকিত ভাইর ওখানে যাচ্ছি। আমার মনে হয় মুকিত ভাই-ই কিছু একটা করছে। তুই উঠে পর।”
মঞ্চে উঠে শাহেদ গাইলো তার সাড়া জাগানো গান “তোমাকেই বলছি।” আবারও সেই একই সমস্যা। দর্শকদের ধুয়ো ধ্বনিতে শাহেদ গানটা শেষ না করেই মঞ্চ থেকে নেমে এলো। রিফাতকে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো শাহেদ। রিফাতের চোখেও দু'ফোটা জল। সেটা মুছে বলল, “দোস্ত আমি সমস্যাটা ধরতে পেরেছি। মুকিত ভাই-ই করছে সমস্যাট্।া আমার সাথে তার ছোটখাটো একটা ঝগড়াও হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সে বলল এটা নাকি সনেট ভাইর নির্দেশ। সনেট ভাই নাকি তাকে বলেছে তোদের গানের সময় সাউন্ড যেন ঠিক ভাবে না যায়।”
রাগে ক্ষোভে দুঃখে শাহেদ একেবারে বিষ্ফোরিত হয়ে উঠলো। দৌড়ে গেল মুকিতের কাছে “মুকিত ভাই রিফাত যা বলছে তা কি সত্য”।
চোখ দু'টো বড় করে মুকিত বলল, “কাজের সময় ডিস্ট্রাব কইরেন না তো ভাই।”
মুকিতের দিকে একটু ঝুঁকে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শাহেদ বলল, “শুধু এই টুকু বলেন যে আমার গানের সময় সাউন্ড ঠিক ভাবে না যাওয়ার কোন নির্দেশ সনেট ভাই দিয়েছেন কিনা?
হাত দিয়ে শাহেদকে একটু সরিয়ে মুকিত বলল, “সনেট ভাইর সাথে গান গাইতে আসছেন আর এই বিষয়টা জানেন না। এই পুরা সাউন্ড সিস্টেম হইল সনেট ভাইর। সনেট ভাই যেই ভাবে বলবে সেই ভাবেই সব কিছু হবে। আমার সাথে রাগ না দ্যাখাইয়া সনেট ভাইর সাথে গিয়া কথা বলেন।”
শাহেদ আর সনেটের কাছে গেল না । প্রচন্ড ক্রোধ নিয়ে মঞ্চের পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো। মঞ্চে গান গেয়ে নেচে যাচ্ছে মুজাহিদ। মুজাহিদের গান শেষ হলো। উপস্থাপিকা এসে ঘোষণা করলো “এবার মঞ্চ মাতাতে আবার আসছে এ বি সনেট” শাহেদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। দৌড়ে মঞ্চে ঢুকে গেল। উপস্থাপিকার হাত থেকে মাইক্রোফোনটা নিয়ে বলল, “বন্ধুরা তোমারা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি আর কোন দিন গান গাইবো না। আমাদের রক স্টার সনেট ভাই তার সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন আমার গানের সময় যেন ঠিক ভাবে সাউন্ড না যায়” শাহেদ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে আবার বলল, “এই যদি হয় আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনের অবস্থা তাহলে আমিও প্রতিজ্ঞা করছি আর কোন দিন গান গাইবো না।”
এই পর্যায়ে আয়োজকরা এসে শাহেদকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নিলো। মঞ্চের সব আলো নিভিয়ে দেয়া হলো। যে জন সমুদ্র উত্তাল তরঙ্গের জন্য ঘনিভূত হচ্ছিল তা এখন হিম শীতল। শাহেদের কান্না যেন প্রতিটি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। কারো মুখে কোন কথা নেই। একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে শুধু।
দুই মিনিট পরে মঞ্চে আবার আলো এলো। ধির পায়ে হেঁটে গিয়ে মাইক্রোফোন টা হাতে নিয়ে সনেট বলল, “বন্ধুরা একটু আগে শাহেদ ....” এই টুকু বলার পরেই দর্শকদের মধ্যে থেকে কেউ একজন একটা বোতল ছুড়ে মারলো। এরপর আর একটা, আর একটা। জন সমূদ্র আবার উত্তাল তরঙ্গে রূপ নিলো। অবস্থা বেগতিক দেখে অনুষ্ঠান বন্ধ করো দিলো আয়োজকরা।
সব প্রত্রিকাতেই বেশ বড় করে খবরটা ছাপা হলো। এ বি সনেটের গায়ে বোতল নিক্ষেপের ছবিও ছেপেছে কিছু কিছু পত্রিকা। কয়েকটি পত্রিকা আবার এ বি সনেটের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে ছোট খাটো স্বাক্ষাৎকারও ছেপেছে। তার বিরুদ্ধে শাহেদের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে সনেট বলেছে যে তার সাফল্যে ঈর্শান্বিত হয়ে ইমেজ নষ্ট করার জন্য কোন কুচক্রী মহল শাহেদকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছে। সনেট আরো বলেছে যে ঐ মঞ্চে মুজাহিদও গান গেয়েছে এবং মুজাহিদের এ ধরনের কোন অভিযোগ নেই। তাছাড়া সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মুকিত এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সব শেষে সনেট মানহানি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানালো।
দেশের সঙ্গীত জগতে আলোড়ন তুলল ঘটনাটা। ফিসফিস করে অনেকেই বলা বলি করছে যে শাহেদ ঠিক কাজই করেছে। কারন সত্যিই সনেট এই কু-কর্মটা করে থাকে। কিন্তু সরাসরি কোন মিডিয়া বা পেপারে কেউ কোন বক্তব্য দিচ্ছে না। মানহানি মামলার কথা শুনে শাহেদ একটু ভয় পেয়ে গেল। বন্ধুরা কেউ কেউ বলছে শাহেদ ঠিক কাজই করেছে। আবার কেউ কেউ বলছে এ বি সনেটের সাথে লাগতে যাওয়া ঠিক হয়নি। কেউ কেউ আবার শাহেদ সঙ্গীত ক্যারিয়ার নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়লো।
শাহেদ কি করবে বুঝতে পারলো না। অবশেষে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ইমতিয়াজ শরীফের সাথে দেখা করলো। ইমতিয়াজ শরীফ দেশের সেরা সুরকারদের একজন। তার সাথে শাহেদের একটা ভালো যোগাযোগ আছে। শাহেদের দ্বিতীয় এলবামের দু'টা গানের সুরও সে করে দিয়েছিল।
শাহেদকে কাছে বসিয়ে ইমতিয়াজ শরিফ বলল “আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি শাহেদ। তোমার চমৎকার সুরেলা কন্ঠ। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পরে আছে তোমার সামনে। আমার ভয় হচ্ছে সনেটের সাথে লাগতে গিয়ে তোমার ক্যারিয়ারের আবার কোন ক্ষতি না হয়।”
“আমার ক্যারিয়ারের যাই হোক এরকম একটা অন্যায়কে আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারি না। গত দুই দিনে সঙ্গীতাঙ্গনের অনেকের সাথেই আমি কথা বলেছি। দেখলাম যে সনেট ভাইর এই অপকর্মটার কথা অনেকেই জানে। যে মঞ্চে সে গান গাচ্ছে সে মঞ্চে অন্য কেউ ভালো গান গাইবে, অন্য কেউ হাইলাইটেড হবে এটা সে চায় না”
“তুমি ঠিকই বলেছ। আমিও বেশ কয়েক জনের সাথে আলাপ করে বুঝতে পেরেছি যে তোমার অভিযোগটা একেবারে অমূলক নয়। তবে এ কথাও ঠিক যে কেউই সনেটের বিরুদ্ধে পত্রিকা বা কোন মিডিয়াতেই কিছুই বলবে না। তাছাড়া সনেটের সাথে অনেকেরই ব্যবসা জড়িত। তাই তোমার অভিযোগটা প্রমানিত হোক তা তারা চাইবে না। অন্যান্য দেশের মিডিয়াতেও এই খবর প্রচারিত হয়েছে। এবং তাদের সবার সুর একই রকম। তারা সনেটের পক্ষে। এমন কি কেউ কেউ এমন সন্দেহ প্রকাশ করেছে যে এটা আন্তর্জাতিক কোন মাফিয়া চক্রের কাজ হতে পারে।”
বিস্ময়াভিভূত বড় বড় দুই চোখে ইমতিয়াজ শরিফের দিকে তাকিয়ে শাহেদ বলল, “কিন্তু অভিযোগটা তো সত্য এবং অনেকেই সেটা জানে। আমি চাই এর সুষ্ঠ তদন্ত হোক। তাহলেই সবাই জানতে পারবে আসল ঘটনাটা কি।”
শাহেদের ঘাড়ের উপরে একটা হাত রেখে ইমতিয়াজ শরিফ বলল “একটু রিয়ালেষ্টিক হও শাহেদ। এতটা আবেগী হলে চলবে না। তুমি বস। আমি একটু ঘরের ভিতর থেকে আসছি।” কিছুক্ষন পরে ইমতিয়াজ শরিফ বের হয়ে এলো। হাতে কয়েকটা পত্রিকা। টেবিলের উপরে সে গুলো রেখে বলল, “প্রতিটা পত্রিকাতেই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মুকিতের সাক্ষাৎকার আছে। তুমি পড়ে দেখতে পারো। সব সাক্ষাৎকারেই মুকিত তোমার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আর অভিযোগ করার সময় তুমি কিন্তু এই মুকিতের রেফারেন্সই দিয়েছিলে। মুকিত কখনোই তোমার পক্ষে কথা বলবে না। এটা তুমি নিশ্চিত থাকো। তুমি হয়তো এবার উপস্থিত দর্শকদের রেফারেন্স দিবে। দর্শকরা কিন্তু শুধু এই টুকু বলতে পারবে যে তোমার গানের সময় তারা ঠিক ভাবে সাউন্ড পায় নি। এক্ষেত্রে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মুকিত বলতেই পারে ঐ মুহুর্তে কোন যান্ত্রিক ত্র“টি হয়ে থাকতে পারে যেটা সে বুঝতে পারেনি। কাজেই বুঝতেই পারছো যে তোমার অভিযোগ কোন ভাবেই প্রমান করা যাবে না।”
মাথা নিচু করে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছিল শাহেদ। এবার ধিরে ধিরে তাকাল ইমতিয়াজ শরিফের দিকে। প্রচন্ড ক্রোধে তার চোখ যেন বিষ্ফোরিত। দাঁতে দাঁত চেপে বলল “তাহলে শুধু প্রমানের অভাবে একটা সত্য বিষয় মিথ্যা হয়ে যাবে, আর একটা মিথ্যা বিষয় সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে?”
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে শাহেদের হাতটা ধরে ইমতিয়াজ শরিফ বলল, “সত্য সব সময়ই সত্য। তা কখনো প্রমানের অপেক্ষায় থাকে না। কিন্তু বিচারের জন্য উপযুক্ত প্রমানের প্রয়োজন হয়।”
“সেই একই কথা হল। আপনি তাহলে বলতে চাইছেন প্রমানের জন্যই একটা সত্য বিষয় মিথ্যা আর একটা মিথ্যা বিষয় সত্য হিসাবে রায় পাবে। কিন্তু আমি তা মানি না,্ আমি বলব প্রমানের পদ্ধতিটাই তাহলে ভুল। শরীরের কোথাও ব্যাথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার যদি ভুল ডায়গনাইসিস করে আপনাকে শুধু পেইন কিলার দেয় তাহলে ব্যথা হয়তো দূর হবে কিন্তু রোগ ভাল হবে না।”
কথা গুলো বলতে বলতে শাহেদ দাড়িয়ে গেল। হাত ধরে টান দিয়ে তাকে বসিয়ে দিলো ইমতিয়াজ শরিফ। “শোন শাহেদ বিষয়টাকে এতটা জটিল করে ফেলো না। আমার মনে হয় সনেটের সাথে কথা বলে মিটমাট করে ফেলা উচিৎ। সনেট যদি মানহানি মামলা করে তাহলে কিন্তু তুমি বিপদে পড়ে যাবে। যতদূর জানি এক্ষেত্রে জেল, জরিমানা অথবা উভয় দ্বন্ডই হতে পারে। আর সনেটের মত একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তির মানহানি মানে শুধু তার একার মানহানি নয়, আরও অনেকেরই অনেক অনেক বিষয় এখানে জড়িত এটা তোমাকে আমি আগেই বলেছি। ফলে জেল জরিমানা যাই হোক না কেন তার পরিমানও অনেক বেশী হওয়াটাই স্বাভাবিক।”
চোখ বুজে দু’হাত দিয়ে মাথার চুল শক্ত করে ধরে শাহেদ বলল, “আপনি হচ্ছেন সঙ্গীতাঙ্গনে আমার সব থেকে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। এখন আপনি বলুন আমি কি করতে পারি। আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।”
“তোমাকে সনেটের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি জানি না সনেট রাজি হবে কি না। তবে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি। আমি রাতে সনেটর সাথে কথা বলে তোমাকে জানাবো।”
ধির পায়ে হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছে শাহেদ। গেটের কাছাকাছি যাবার পরে পিছন থেকে ডাক দিলো ইমতিয়াজ শরিফ। শাহেদের দু'চোখে দু'ফোটা অশ্র“। ইমতিয়াজ শরিফের একবার ইচ্ছা হলো কাছে গিয়ে অশ্র“ দু'ফোটা মুছে দিতে। কিন্তু সত্যের উত্তাপে ফুটন্ত সেই অশ্র“র কাছে যাওয়ার সাহস তার আর হলো না। দূর থেকে দাড়িয়ে বলল, “ভাল না লাগলেও অনেক কিছুই মেনে নিতে হবে। যদি টিকে থাকতে চাও”
প্রথমে রাজি হতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে এ বি সনেট। তবে শর্ত দিয়েছে সংবাদ সম্মেলন করে সকল মিডিয়ার উপস্থিতিতে শাহেদকে ক্ষমা চাইতে হবে। শাহেদ প্রথমে স্পষ্ট ভাবেই বলে দিয়েছিল যে প্রমানিত হোক বা না হোক কোন ভাবেই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না সে। কিন্তু ইমতিয়াজ শরিফ সহ আরো কয়েক জনের চাপাচাপিতে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলো অবশেষে। সনেট বিশাল এক বক্তব্য দিয়ে ক্ষমা করে দিলো শাহেদকে।
ক্ষমার এমন মহৎ দৃষ্টান্ত মনে হয় আগে কেউ কোন দিন দেখে নি। সমস্ত মিডিয়াতে বেশ ফলাও করে এ বি সনেটের এই ‘ক্ষমা’ নামক মহান গুনকে প্রচার করা হলো। একটি পত্রিকার শিরোনাম ছিলো - সত্যিই মহামানব।
অন্ধকার ছাদে দাড়িয়ে দূর আকাশে মিট মিট করে জ্বলতে থাকা তারা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে শাহেদ। হঠাৎ এ বি সনেটের একটা গান মনে পড়ে গেল -
সত্যকে যদি ভুলে যেতে চাও
ভুলতেও পারো তুমি
আকাশ বাতাস সাক্ষী সময়
সত্য চিরন্তনী।।

মনে মনে একটু হেসে দিল শাহেদ। কি অদ্ভুত এই সত্য!



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top