সিডনী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

পৃথিবীর মানুষের কাছে আজো যা হয়ে রয়েছে রহস্য : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
৭ জুলাই ২০২০ ২১:৩০

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:১৫

 

আমাদের পৃথিবী রহস্য - রোমাঞ্চে ভরা। তার মধ্যে একটি নাম হল বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। এটির আরেকটা নাম আছে। সেই নামটি হল শয়তানের ত্রিভুজ। এটি হল আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল। যেখানে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে হয়েছে নিখোঁজ।
তবে এনিয়ে মতভেদ আছে এখনো। অনেকে বলেন, ওই সব অন্তর্ধানের কারণ নিছকই দুর্ঘটনা। যার কারণ হতে পারে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অথবা চালকের অসাবধানতাও একটা বড় কারণ বলে মনে করা হয়।
আবার, চলতি উপকথা অন্য কথা বলে থাকে। তা হল, এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রাকৃতিক শক্তি অথবা বাইরের জগতের প্রাণীদের সক্রিয় উপস্থিতি। বিভিন্ন লেখকের বর্ণনা অনুসারে, এর বিস্তৃতিতে ভিন্নতা আছে।
এই ত্রিভুজের ওপর দিয়ে, বয়ে গেছে মেক্সিকো উপসাগর থেকে বয়ে আসা উষ্ণ সমুদ্র স্রোত। এই তীব্র গতির স্রোতই প্রধানত অধিকাংশ অন্তর্ধানের মূল কারণ বলে মনে করা হয়। এখানকার আবহাওয়া বড় অদ্ভুত প্রকৃতির। এখানে ঝড় ওঠে হঠাৎ করে, আবার থেমেও যায়।
এখানে গ্রীষ্মকালে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়। এই এলাকা বিশ্বের বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়া, এটি হল প্রচুর প্রমোদতরীর বিচরণ ক্ষেত্র। এই এলাকার আকাশরুটে, অনেক বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান করে চলাচল। এই ত্রিভুজের বিস্তৃতির বিবরণ দিতে নানা লেখক অনেক মতামত দিয়েছেন।কেউ মনে করেন, এর আকার ট্রাপিজয়েডের মত, যা ছড়িয়ে আছে ফ্লোরিডা, বাহামা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ইশোর পূর্ব দিকের আটলান্টিক অঞ্চল জুড়ে।
বারমুডা নিয়ে যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে ক্রিস্টোফার কলম্বাস ছিলেন অন্যতম একজন। তিনি একে নিয়ে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছিলেন, যে তাঁর জাহাজের নাবিকেরা এ এলাকায় আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছিলেন। এছাড়া, তিনি এখানে কম্পাসের উল্টোপাল্টা দিক নির্দেশনার কথাও উল্লেখ করেছিলেন।
১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে, ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনে লেখা হয়েছিল। এই ফ্লাইটের দলপতিকে নাকি বলতে শোনা যায়, যখন তারা বারমুডার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল, " আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ বর্ণের জল, কোথাও সাদা কিছু নেই।" এযে বড় আশ্চর্যজনক কথা!
বারামুডা এরকমই রহস্যময়। এর রহস্যময়তা দিনকে দিন পেয়ে চলেছে বৃদ্ধি। অনেক লেখক একে নিয়ে অনেক বই লিখেছেন।যেমন - জন ওয়ালেস স্পেন্সারের " লিম্বো অফ দ্যা লস্ট ", চার্লস বার্লিটজের " দি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল", রিচার্ড উইনারের " দ্যা ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল" প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

এর বিপরীত মতও আছে বারমুডাকে নিয়ে। লরেন্স ডেভিড কুসচ হলেন " দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল মিস্ট্রি ঃ সলভড " - এর লেখক। তাঁর গবেষণায় তিনি অনেক তথ্য তুলে ধরেছেন বারমুডাকে নিয়ে। এবার সেদিকে আমি আলোকপাত করছিঃ

১. বারমুডাতে যে পরিমাণ জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়, তার পরিমাণ মোটেই বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রের চেয়ে বেশি নয়।

২. এখানে গ্রীষ্মকালীন ঝড় নিয়মিত আঘাত হানে। যা এই অঞ্চলে জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু, বার্লিটজ বা অন্য লেখকেরা এই ধরনের ঝড়ের কথা অনেকাংশে এড়িয়ে গেছেন।

৩. বারামুডাতে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার বিবরণে লেখকেরা চড়িয়েছেন কল্পনার রং । আবার, কোন নৌকা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে বন্দরে ভিড়লে, তাকে প্রচার করা হয়েছে নিখোঁজ বলে।

৪. আবার এখানে কখনোই ঘটেনি, এমন অনেক ঘটনার কথা লেখকেরা উল্লেখ করেছেন। যেমন - ১৯৩৭ সালে, ফ্লোরিডার ডেটোনা সমুদ্রতীরে একটি বিমান দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছিল । কিন্তু, সেসময়ের খবরের কাগজ থেকে এরকম কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, কুসচের গবেষণার সূত্র ধরে এটা বলা যেতে পারে, যে, লেখকেরা অজ্ঞাত কারণে, বা ইচ্ছাকৃতভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে নিয়ে রহস্যের জাল বুনেছেন। তবে তর্ক - বিতর্ক থাকবেই, তাহলেও এটা মানতেই হবে, যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল - সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আজো যা হয়ে রয়েছে রহস্য, রহস্য, শুধুই রহস্য।
(তথ্য সংগৃহীত)

 

শিবব্রত গুহ
কলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top