সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৪ই চৈত্র ১৪৩০

মানুষখেকো মানুষের কাহিনী  : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২০ ২২:২৫

আপডেট:
১০ আগস্ট ২০২০ ২২:৫৮

ছবিঃ সেন্টিনেলিজ অধিবাসী

 

 মানুষ হল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের হল বুদ্ধিমান। এই বুদ্ধি হল মানুষের প্রধান অস্ত্র। এই বুদ্ধি দিয়ে মানুষ আজ পৃথিবী করে চলেছে শাসন। এই পৃথিবী বড়ই বিচিত্র। এখানে এমন সব ঘটনা ঘটে, যার ব্যাখ্যা মেলা ভার।
আপনারা শুনলে হয়তো অবাক হবেন, যে, এই বিশ্বে মানুষ মানুষের মাংস খায়। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটা একদম সত্যি কথা। এটা কোন কল্পকাহিনী নয়। এ হল খাঁটি বাস্তব। আজ আমি আপনাদেরকে কিছু মানুষখেকো মানুষের কাহিনী বলবো। যা সত্যিই অবাক করার মতো সব ঘটনা।


বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের এক দ্বীপ। এর নাম কি জানেন? এর নাম হল নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ড। এর চারিদিকে রয়েছে প্রবাল। এই দ্বীপের আয়তন হল ২৮ বর্গ কিলোমিটার। এখায়ানকার প্রাকৃতিক শোভা দেখবার মতো।

ছবিঃ নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ড


এখানে আছে সেন্টিনেলিজদের রাজত্ব। এরা রয়েছে আধুনিক সমাজ থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে। এক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ফিল্ম ডিরেক্টর ১৯৭৫ সালে এদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে, ভারত সরকার, এখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন।

এই দ্বীপে বাইরের থেকে কেউ প্রবেশ করলে, তার কপালে অপেক্ষা করে থাকে ভয়ংকর বিপদ। এখানকার অধিবাসীরা তাকে তাকে নির্মমভাবে মেরে ফেলে। তারপর, তারা তাকে খেয়ে নেয়, হ্যাঁ, এরা হল মানুষখেকো মানুষ। মানুষ হয়েও এরা মানুষের মাংস খায়। মানুষের মাংস এদের খুব খুব প্রিয়।২০০৬ সালে, দুইজন জেলে রাস্তা হারিয়ে, চলে এসেছিল এখানে। তারপর, তাদের ভাগ্যে ঘটেছিল মৃত্যু। তাদের মাংস বেশ মজা করে খায় এখানকার এই নরমাংস খাদকেরা।
২০১৭ সালে, রাশিয়ার দক্ষিণ - পশ্চিমের, ক্রাসনোদার শহরে, এক মানুষখেকো দম্পতি প্রায় ৩০ জন মানুষকে হত্যা করেছিল। এদের নাম হল দিমিত্রি বাকশেভ, যার বয়স ৩৫ বছর, এবং তার স্ত্রী নাতালিয়া, যেখানে বসবাস করতেন, সেখানে কাঁটাছেড়া অঙ্গহীন মানুষের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল।
রাশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ছবিতে দেখা যায়, যে বাকশেভ মানুষের শরীরের একটা কাটা অঙ্গ মুখে নিয়ে আছেন। এ বড় ভয়ংকর ঘটনা। এদের বাড়ি থেকে, ৩৫ বছর বয়সী এক রাশিয়ান নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল রাশিয়ান পুলিশ। সেই মৃতদেহটি ছিল ছিন্নবিচ্ছিন্ন ও ক্ষতবিক্ষত।
এযে নৃশংস ঘটনা। মানুষ যে এতটা নৃশংস হতে পারে, তা ভাবা যায় না।আফ্রিকার কিছু উপজাতি মানুষের মধ্যে মানুষ খাওয়ার প্রবণতা যায় লক্ষ্য করা। অনেক সময়, মনোরোগের শিকার হয়ে মানুষ মানুষখেকো হয়ে ওঠে।
পাপুয়া নিউগিনিতে পাওয়া গিয়েছে মানুষখেকো মানুষের সন্ধান। মানুষ খাওয়ার অপরাধে সেখানে পুলিশ আটক করে ২৯ জনকে৷ ইউকে টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রে এই সংবাদ হয়েছিল প্রকাশিত। যা পড়ে হতভম্ব হয়ে যায় দেশবাসী।

সেখানকার কয়েকজন ডাক্তারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে, পুলিশ এই মানুষখেকোদের সন্ধান পেয়েছিল। পুলিশের ধারণা, প্রায় সাতশ থেকে এক হাজার লোক এই দলের সদস্য। এরা সবাই কম - বেশি
মানুষের মাংস খায়। বলা যেতে পারে, মানুষের মাংস এদের কাছে খুবই প্রিয়।
সমাজবিজ্ঞানী অমিত খাঁ বলেন, "মানুষখেকোরা খুবই ভয়ংকর প্রকৃতির হয়ে থাকে। তারা মানুষের মাংস খেয়ে যে তৃপ্তি পায়, অন্য কোন মাংস খেয়ে সেই তৃপ্তি তাদের হয় না। এই প্রবণতা সহজে দূর হবার নয়। এরা হয় প্রচন্ড চতুর ও ধূর্ত"
আজ পৃথিবীর মানবসভ্যতা বিচরণ করছে উন্নতির চরম সীমায়, এখনো কিন্তু, এই বিশ্বে মানুষখেকো মানুষেরা বিরাজ করছে স্বমহিমায়, যা দেখলে অবাক হতে হয়, সত্যিই হতে হয় অবাক।

 

শিবব্রত গুহ
কলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top