সিডনী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১

যে আন্দোলন ধরিয়েছিল ভয় ব্রিটিশদের মনে : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
১২ আগস্ট ২০২০ ২১:৪১

আপডেট:
১৬ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৫৮

 

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস হল সুসমৃদ্ধ। অনেক আন্দোলন হয়েছিল এই দেশের বুকে ভারতমাতার পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য। সেইসব আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি আন্দোলনের কথা আজ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। এই আন্দোলনের নাম কি জানেন আপনারা? এর নাম হল ভারত ছাড়ো আন্দোলন।
এই আন্দোলন ছিল একটি আইন অমান্য আন্দোলন। এই আন্দোলন ১৯৪২ সালের ৯ই আগস্ট থেকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। একে আগস্ট আন্দোলনও বলা হয়ে থাকে।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস, দাবি করে, একটি গণপ্রতিবাদ, যেটিকে, গান্ধী উল্লেখ করেন, ব্রিটিশদেরকে " ভারত ছাড়ার " একটি দাবি হিসেবে। ১৯৪২ সালের ৮ ই আগস্ট, গোয়ালিয়ার ট্যাঙ্ক ময়দানে, তিনি এই উদ্দেশ্য ভাষণে, বলেন, " করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে "।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন, এমন এক আন্দোলন ছিল, যা ব্রিটিশদের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিল। এই আন্দোলন ছিল ব্রিটিশদের অন্যায় ও অত্যাচারের প্রতিবাদে আপামর ভারতবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। ব্রিটিশ সরকার, ১৯৪২ সালের ৯ ই আগস্ট ভোরে, গান্ধীজিকে গ্রেপ্তার করেছিল। এরপরে, তারা, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, আবুল কালাম আজাদ, জেবি কৃপালনী সমেত অনেক প্রথম সারির ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করেছিল।

ব্রিটিশ সরকার ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে বেআইনি সংগঠন রূপে ঘোষণা করেছিল। তারা সবজায়গায়, কংগ্রেস কর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করতে থাকে। প্রথম দিকে, এই আন্দোলন, ছাত্র - শিক্ষক, যুবসম্প্রদায়, বুদ্ধিজীবী ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল সীমাবদ্ধ। কিন্তু, পরবর্তীকালে, তা, দেশের শ্রমিক, কৃষক সহ সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এক বিরাট গণআন্দোলনের রূপ নিয়েছিল।

দেশব্যাপী ধর্মঘট, শোভাযাত্রা, মিছিল, মিটিং অনুষ্ঠিত হতে থাকে স্বাধীনতা, স্বাধীনতার দাবিতে। ভারতবাসী আর থাকতে চায় না পরাধীন। পরাধীনতার গ্লানি মুছে দিয়ে, তারা চায় পেতে স্বাধীনতা। ক্রমশ ভারত ছাড়ো আন্দোলন বিরাট আকার ধারণ করতে শুরু করে।

এই আন্দোলন ধীরে ধীরে হিংসাত্মক রূপ নিতে শুরু করে। রেললাইন ধ্বংস, স্কুল কলেজ বর্জন, বিভিন্ন অফিস আদালতে অগ্নিসংযোগ, ট্রেন ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, থানা, ডাকঘর, রেজিস্ট্রি অফিস দখল প্রভৃতি কর্মসূচি এই আন্দোলনে গ্রহণ করা হয়।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্রগুলো ছিল মহারাষ্ট্রের সাতারা, মেদিনীপুরের তমলুক, কাঁথি, দিনাজপুরের বালুরঘাট, উত্তরপ্রদেশের বালিয়া, আজমগড়, অসমের নওগাঁ, ওড়িশার তালচের, বালেশ্বর প্রভৃতি।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের একজন মহান নেত্রীর নাম হল মাতঙ্গিনী হাজরা। তাঁর সাহস ছিল অপরিসীম। তিনি " গান্ধীবুড়ি " নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪২ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার সামনে পুলিশের গুলিতে হয়েছিলেন শহীদ। তাঁকে আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আপামর ভারতবাসী।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ভারতীয় নারীদের এক বিরাট ভূমিকা ছিল। তাঁরা দলে দলে, এই আন্দোলনে করেছিলেন যোগদান। তাঁদের অপরিসীম বীরত্ব দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় ব্রিটিশ সরকার। আসামের ১৪ বছরের কিশোরী কনকলতা বড়ুয়া, পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকননী প্রভৃতি বীরঙ্গনা নারীরা হলেন দেশ ও
জাতির গৌরব।

" ভারত ছাড়ো " - এই স্লোগান কে রচনা করেছিলেন জানেন? এই স্লোগান ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সবার মুখে মুখে ঘুরতো। যিনি রচনা করেছিলেন তাঁর নাম হল কংগ্রেস নেতা ইউসুফ মেহের আলি। উনি ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশের স্বাধীনতার জন্য উনি আটবার জেলে গিয়েছিলেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল এক স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। ব্রিটিশ আমলাদের স্বেচ্ছাচার ও অত্যাচার এই আন্দোলনের আগে চরম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল। আপামর ভারতবাসীর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। তাঁদের বিক্ষোভের বারুদে অগ্নিসংযোগের কাজটা করে ভারত ছাড়ো আন্দোলন।

অজয় মুখার্জির উদ্যোগে ১৯৪২ সালের ১৭ ই ডিসেম্বর, তমলুক মহকুমায়, " তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার " - গঠিত হয়েছিল। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যাপকতায়, ব্রিটিশ সরকার প্রচন্ড চাপে পড়ে গিয়েছিল। তারা, শেষ পর্যন্ত দমন নীতি প্রয়োগ করে এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল। তবে, এটা বলতেই হয়, যে আন্দোলন
ধরিয়েছিল ভয় ব্রিটিশদের মনে, তা হল ভারত ছাড়ো আন্দোলন। এই আন্দোলন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পথ করেছিল প্রশস্ত।


( তথ্য সংগৃহীত)



শিবব্রত গুহ
কলকাতা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top