সিডনী সোমবার, ২০শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অতলের গহিনে : ইমরুল কায়েস


প্রকাশিত:
৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৪৪

আপডেট:
৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৪৫

 

গেল একমাসের দুধের টাকা বাকি!

আজ রাতে টাকা দিতে না পারলে পরের দিন সকালে দুধ দিবে না; বলে গেছে কাশেমের বউ। কাশেমের বউ ফুলবানুর মিছেমিছি দোষ কি? কাশেম পাকা জুয়াড়ি; মদ আর রাতের রাণী ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না। পকেটে টাকা না থাকলে ফুলনবানুকে নিত্যিদিন বালিশের মত করে ধরে মারে। এতকিছুর পরেও কাশেম সোহাগ করলে, ফুলবানু গলে মোম। যেন নারী এমন জাতি; বোঝে না পুরুষের মতি গতি! দুধের টাকা নিয়ে রাতে কাশেমের হাতে দিলে নিস্তার পাবে ফুলমতি। কাঁকনবালা নারী তো ফুলবানুর কষ্ট কিসে তা সে বোঝে।

কাঁকনবালা বাচ্চাটার জন্যে প্রতিদিন ১ সের করে দুধ কেনা লাগে; বউ স্বামীতে একবেলা ভাত না জুটলেও চলে কিন্তু শিশু কন্যার তো দুধ লাগবেই। তাই জীবন হাতে নিয়ে আজ মাছ ধরতে নামছে মাগ ভাতারে। কাঠপট্টি ঘাটের অনতিদূরে ভাত কাপড়ের একমাত্র অবলম্বন সরু ডিঙি নিয়ে মাছ ধরছিলো দুজন।

বুড়িগঙ্গা উতলা। এমন যে, গণেশ মাঝির ছোট নৌকা নিমিষেই ঢেউয়ের থাবায় জলের অতলে চলে যাবে। কাঁকনবালা বৈঠা বায়; আর গণেশ জাল দিয়ে মাছ ধরে। বিয়ের পরের দুইদিন বাদ দিলে নতুন বউয়ের গায়ের হলুদ এই নদীর সাথে মিশে আছে। নদীর জলে সোহাগ; নদীতেই স্নান! পতিতে আর নদীতে কাঁকনবালা দিন যায়।

কাঁকনবালা কালো মুখ দেখে গণেশের ভেতরটা হাহাকার করে উঠে।

তাঁর কারণে বউটার বুকে দুধ আসেনি। প্রতিদিন বৈঠা ধরলে কোন পোয়াতির বুকে দুধ আসবে? মাঝে মাঝে নদীর জলে স্নানে নামলে ভেজা আঁচল সরিয়ে কাঁকনবালা নিজের উদোম বুক দেখে মনে মনে আফসোস করে। স্তনের শিরা গুলো শুকিয়ে ভরা জিনিস দিনদিন মরা হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবে, ‘ভাতের নাগাল নাই গতর দিয়া কি হইবো, বাঁইচলে মাইয়াটা গরুর দুধ চুইসাও বাচঁবো।’ 

সেই কাক ডাকা ভোরে কোলের ছ’মাসের মেয়েটাকে বৃদ্ধ খুড়ির কাছে রেখে আসছে কাঁকনবালা। দুপুর গড়িয়ে পুবের বেলা পড়ে গেলেও তেমন মাছ জোটেনি। রফ রফের চলে যাওয়ার ঘন্টা খানেক আগে মাছগুলো পেয়েছে। কে জানে এমন হবে!

ঢেউয়ের হা করা তোরে হাড়িটা উল্টে মাছ গুলো পড়ে গেল...

বুড়িগঙ্গার চলছে ভরা যৌবন; সেই যৌবনে উসকানি দিয়ে চলে গেল রফ রফ। সারাদিনে কত লঞ্চের দেয়া অবহেলার ঢেউয়ের সাথে সামনা সামনি যুদ্ধ করে আসছে কাঁকনবালা আর গণেশ।

শুধু রফ রফ কেন? বড় লঞ্চ, কি মালবাহী জাহাজ? সবাই তাচ্ছিল্য করে চলে যায় ঢেউ ছিটিয়ে। কাঁকনবালা হাতের বৈঠা দিয়ে জলের উপর সপাসপ বারি দিতে লাগলো; আর বলতে লাগলো,

 

 ‘কামের বেলা গরীবের গতরে চুমু দেওন যায়; অভাবে হগ্গলে থুথু ছিটায়!’

 

ইমরুল কায়েস
লেখক, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, সাহিত্য সাময়িকী নব ভাবনা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top