সিডনী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৩রা বৈশাখ ১৪৩১

চিঠি : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
২২ অক্টোবর ২০২০ ২১:৪৯

আপডেট:
১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:০৭

 

 

সম্বোধনহীন থাক,

লিখে যাই অনন্তযাত্রার পথে  পাওয়া সকল সম্পর্কের  কাছে।

আমার গ্রাম যার আলো হাওয়ায় আমি বেড়ে উঠেছি হৃষ্টপুষ্ট হয়ে  শরীরে ও মননে। না মননে  কথাটা ঠিক নয়। মননে আমি  রয়ে  গেছি এখনো  জন্মক্ষণে।

সেই  উঠোনখানা যা আমাকে দিয়েছে কত কী ! মা যেখানে বসিয়ে রেখে সেরেছে  হাতের কতশত কাজ। যেখানে প্রথম শক্তপায়ে দাঁড়িয়েছি আমি। হেঁটেছি গুটিগুটি পায়ে। তারপর শুরু করেছি দৌঁড়ুতে। যে দৌঁড় এখনো চলছে। রাস্তার  উপরে  নুয়ে পড়া  সেই আম গাছ, যার থোকা থোকা আমের ভারে গাছের ডালগুলো আরো নুয়ে পড়ত। মাটির ঢিল ছুড়ে সে আম পেড়ে যতটা না খেতাম তার চেয়ে নষ্ট করতাম বেশি।  আজ মনে হয় কত নির্মম কাজ  ছিল সেটা । তখন যা ছিল নিছক আনন্দ ! একটি গাছের ফল এভাবে ছিড়ে ফেলা মোটেও ভালো কাজ নয়।

এদের সবাইকে লিখছি, তোমাদের সাথে দেখা হয় না কতকাল। জানি না তোমরা এখনো আগের  মতোই আছ কি-না ?  না-কি তোমরাও  বদলে গেছ  আমারই মতো !

সেই পুকুর ঘাট যেখানে বিকেলে সবাই বসতো ছিপ হাতে পুঁটিমাছ ধরার আশায়। যে পুকুরের এপার ওপার করেছি সাদা হাসেদের মতো জল কেটে কেটে। পুকুর পাড়ের সেই গন্ধরাজ লেবুর গাছ ,যার ফুলের গন্ধে মন কেমন চঞ্চল হতো লম্বা নিশ্বাস নেয়ার জন্য। যার লেবু, পাতা সবটাই ছিল আদর আদর গন্ধে মাখামাখি। আবার আঁধার রাতে জোনাকিরা যেখানে আলোর নাচন নাচত।

সেই ফুলের বাগানখানা, যেখানে, টগর, বেলী, জবা, নীলকন্ঠ,স্থলপদ্ম,কলাবতী ফুটত আপন ইচ্ছেতে। সে কেমন আছে তাকেও জানাই আমার ভালোবাসা। বাগানে  ফুল ফোটে কি ফোটেনা জানা নেই  তাতে কি! আমার ভালোবাসাতো আর তাতে মিথে হয়ে যাবে না! ভোর বেলায় যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মনে হতো ঘাসেরা কত যত্ন করে পা ধুয়ে দিচ্ছে যত্নে ধরে রাখা শিশিরকণা দিয়ে, আবার দুপুর কিংবা বিকেলে  দুপাশের  ভাঁটফুলেরা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়তো কে বেশি ভালোবাসে তা জানানোর জন্য।ভাঁটফুল, দূর্বা ঘাস আর আমার সেই মেঠো পথ তোমাদের আমি ভুলিনি। শুধু জানি না তোমরা কি আছ এখনো আগের মতোই। না-কি হারিয়ে গেছ  উন্নয়নের উৎসবের জোয়ারে। 

আমার পুতুল খেলার সাথিরা কবিতা, নিভা, আরতি, ছবি, ফিরোজা তোমরা সবাই বেঁচে আছ তো? না-কি আধমরা হয়ে টিকে আছ নামমাত্র জীবিত প্রাণীর মতো।প্রথম পাঠশালার সেই মাদুর,তালপাতা, সেগুলোর জন্যও মন কেমন করে। প্রাইমারী স্কুলের হেড স্যার হেমায়েত উদ্দীন সাহেব আমাকে একদিন স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিলেন দুষ্টামীর জন্য, সেদিন খুব রাগ করেছিলাম কিন্তু আজ তার কথা ভেবেও মন খারাপ হয় ? স্যার আপনার এখন বয়েস কত?আমি যে ৬০+।ঈষাণ বাবু স্যার যার শেখানো পাটীগণিত  আমাকে গণিত বিষয়কে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।আপনি কিন্তু স্যার সেই সময়েও খুব সুন্দর দেখতে ছিলেন। আপনার রুপালী চুলগুলোর  কথা  আজো  মনে  রয়ে  গেছে।

স্কুলের সামনের বড়ো রাস্তায় সেই যে বিনোদ খুড়োর একখানা দোকান ছিল যেখানে দুই পয়সায় গুড় দেয়া বাদাম,ক্যান্ডি লজেন্স পাওয়া যেত । তাই ছিল তখন অমৃত সমান। আবার মন্ডল বাড়ির তেঁতুল গাছের তেঁতুল যা ছিল চিনির চেয়েও মিষ্টি স্বাদের সেই কিশোর মুখে, এমন আরও কত কি আছে।

চিঠৈর কলেবর বেড়ে যাচ্ছে। আর একদিন অন্য সকলের কাছে লিখব। জানি এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে ডাকবাক্সে ফেললেও এ  চিঠি  প্রাপকের  কাছে  নাও  পৌঁছাতে  পারে। তবুও লিখে যাই --

ইতি
অনন্ত যাত্রার পথিক 

 

অমিতা মজুমদার
কবি ও কথা সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top