সিডনী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

শারদ মিলন : বানীব্রত


প্রকাশিত:
৩১ অক্টোবর ২০২০ ২১:৫৫

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ২২:১৮


শরতের আকাশে হাল্কা সাদা মেঘের মেলা, বাতাসে শিউলির গন্ধ, মাঠ সেজেছে  কাশ ফুলে। রেডিওতে মহালয়া চলছে, আগমনীর আগমন ঘটবে আর কয়েকদিন পরেই দেবীপক্ষের মধ্য দিয়ে।  বাংলার ঘরে ঘরে আনন্দের সীমা নেই। চলছে চিন্ময়ী মায়ের মৃন্ময়ী রূপ দান। বাজছে ঢাক, মাইক, পাড়ায় পাড়ায় চলছে প্যান্ডেল বানানো।
আঠার পেরোনো রহিমের বাবা প্যান্ডেল বানানোর কাজ করতো তাই দিয়েই চলতো ওদের তিন জনের সংসার। রহিম আজ দুর থেকে দেখছে প্যান্ডেল বানানো। কয়েক মাস আগে ওর বাবা সামান্য অসুখে ওদের ছেড়ে পরলোকে পাড়ি দিয়েছে। আজ বড় অসহায় ওরা। অনেক আশা ছিল এই পুজোর সময়ের রুজি রোজগারের। রহিম ভাবতে লাগলো ওদের সম্বল শুধু কয়েকটা টাকায় চায়ের দোকানে মায়ের কাজ। ঠিক করল এবার পুজোতে ও ঢাক বাজাবে আর যা পাবে তা তুলে দেবে মায়ের হাতে। ঢাকটা ভালোই বাজাতে পারতো রহিম কিন্তু হিন্দুর ঘরে কি ওকে ডাকবে এই ভাবনাটা মাথায় থাকলেও তাকে গুরুত্ব না দিয়ে ওর বাবার বন্ধু অলোক কাকুর ঢাকের দোকানে গিয়ে কথা বলে একটা ঢাক ভাড়া নিয়ে বেড়িয়ে পরে রাস্তায়।
চতুর্থির সকালে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে মাইক বাজছে তার সাথে ছোট রহিমের কাঁধের ঢাকের বাজনার সুমধুর তাল বাতাসে মিলিয়ে  যাচ্ছে। পথে যেতে যেতে বেশ কিছু টাকা আয় ও করে সে। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম হেঁটে চলেছে সাথে বোল তুলেছে ঢাকে। গ্রামের শেষ প্রান্তে এসে এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি ওর বাজনা শুনে ওকে ডাকে। তিনি ঢাকি খুজতে বেরিয়েছিলেন রহিমকে বায়না করবেন বলেন।  ছোট  রহিম তার নাম ও পরিচয় দিয়ে বলল, "কাকু আমি মুসলিম  আপনাদের হিন্দুদের ঘরে আমি বাজাতে পারব তো? আপনাদের কোন আপত্তি হবে না তো? আজ আমরা বড় অসহায় বাবা প্যান্ডেলে কাজ করতো কিছুদিন আগে মারা গেছেন।  এছাড়া আমি তো কোন কাজ জানি না তাই ঢাক ভাড়া করে বাজাতে বেড়িয়েছি কিছু আয়ের জন্য"। ভদ্রলোক সব শুনে রহিমের প্রতি মায়া হলো। বায়না করল প্রতিবছরের জন্য। আর বলল পুজোর পর থেকে তার বাড়ির  দেখাশোনার জন্য রহিমকে রেখে দেবে। রহিমের মুখে ফুটে উঠল হাসি। মায়ের আগমনে ঘটল শারদ মিলন।।



বানীব্রত
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা


বিষয়: বানীব্রত


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top