সিডনী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

গার্লফ্রেণ্ড : অজিত কুমার রায়


প্রকাশিত:
৭ নভেম্বর ২০২০ ২৩:১০

আপডেট:
৮ নভেম্বর ২০২০ ০১:৫০

 

পরনে জিন্স। পাতলা সংক্ষিপ্ত দুধ সাদা টপস্ পরেছিল সে। ক্লাস শেষে হলে হাল্কা রেস্ট নিয়ে বিস্যুদবার বিকেল পাঁচটায় রাশেদ সবে  বেরিয়েছিল । রাশেদ নেশন্যাল মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বেশ স্মার্ট। উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফিট। দেখতে বেশ। বাড়ি ওর বনগাঁ। মফ:স্বলের একটা ছেলে কলকাতা শহরে এম বি বি এস এ চ্যান্স পেয়েছে এটা সত্যিই একটা বড় অ্যাচিভমেন্ট। কারণ, মেডিকেল ক্যারিয়ারটা খুবই কম্পিটিটিভ, চ্যান্স পাওয়া থেকে প্রতিষ্ঠা ও জীবনের শেষ অব্দি। সবাই খুশি ওর উপরে, নিজ পরিবার ছাড়াও পরিজন পর্যন্ত। ওর সামাজিক মূল্য যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে পরিবারের সম্মানও। ওর বাপ-মা ভাইবোন সবাই এখন আগের চেয়ে স্ফীত হয়ে চলা ফেরা করে। সত্যিই তো একটি সন্তানই তার পরিবারকে উপরে তোলে তার কীর্তির দ্বারা।

রাশেদ চিরকাল একটু ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্র। গতানুগতিকতা ওর পছন্দ নয়। ও অ্যাডভেঞ্চারমনস্ক। কিন্তু ওর মেডিকেল ক্যারিয়ারের সাথে সেটা একেবারেই বেমানান। মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ওর মনে এক ধরণের শূন্যতা দেখা দেয়। পড়ার দু:সহ চাপ। পড়তে ও ক্লাশ ফলো করতে করতেই নাস্তানাবুদ হতে হয়। তবুও একান্ত আপন কোন একজন মানুষের খোঁজ ও করত সব সময়। ওর মনে হত এমন একজন কাছের মানুষ অর্থাৎ বন্ধু ওর থাকবে যে ওর সংগে থাকবে ছায়ার মত। ওর সুখ-দু:খের সমভাগী হবে। না, ও বিয়ে করার কথা ভাবছিল না একেবারেই। ভাবছিল ওর যদি একজন গার্লফ্রেন্ড থাকত। নানা ভাবে সে ওকে সান্নিধ্য যোগাতে পারত। ওর সহপাঠিনীদের থেকে তেমন কাউকে বেছে নিতে পারেনি ও।

আজ বিকেলে হঠাৎ এই সুদর্শনাকে ক্যাম্পাসের ভিতরে দেখতেই ওর নিভৃত বাগানে বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করলো। রেস্ট নেওয়ার পর শরীরটা অনেকটা ঝরঝরে লাগছিল। মনটাও উড়ুউড়– করছিল রঙিন বেলুনের মত। শেষ বিকেলের রোদটা বেশ উপভোগ্য মনে হচ্ছিল। কয়েকটি পায়রা কোত্থেকে যেন উড়ে এসে পড়েছিল প্রশস্ত রাস্তার ওপরে স্ট্যাচুটার সামনের দিকে। ঠোঁট দিয়ে খুঁটছিল খাবারের দানা আর অজ¯্রধারে বাকুম বাকুম করে শব্দিত করে চলেছিলো মেডিকেলের এই চত্বরটি। তখনও এলাকাটি সরগরম  হয়ে ওঠেনি মানুষের ভিড়ে। রাশেদ যন্ত্রচালিতের মত এগিয়ে চললো। মেয়েটি তাকালো ওর দিকে মোহনীয় দৃষ্টিতে। রূজরঞ্জিত ওষ্ঠাধর। ফ্যাশান করা চুল। রাশেদকে এগিয়ে আসতে দেখে উৎসাহিত বোধ করলো সে। চোখে মুখে অভিবাদনের ভঙ্গি ফুটে উঠলো।

একটু আলতো হাসি ঠোঁটে মেখে বললো, হ্যালো। 

রাশেদ প্রত্যুত্তরে বললো, হ্যালো। আগে কখনও আপনাকে দেখেছি কি?

হয়ত না। দুএকবার আসিনি এমন নয়। তবে নিয়মিত আসা হয় না।

আপনি মেডিকেলে পড়েন?

না। আমি রবীন্দ্র ভারতীতে মিউজিক পড়ি। মেয়েটি বলল।

তা বেশ। ভালই লাগলো আপনার ক্যারিয়্যারের ব্যাপারে জানতে পেরে। জানেন, সংগীত আমার প্রিয়। কিন্তু, কণ্ঠ অতটা সুরেলা নয়। তাই কিছুটা চর্চা থাকলেও ওই জগৎটায় আমার সেভাবে প্রবেশ করা হয়ে ওঠেনি।

আপনি বেশ সুন্দর করে কথা বলেন। হাসল মেয়েটি।

রিয়েলি? আপনার আলাপচারিতাও বেশ মোহন। আপনাকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে বিকেলের এই নরম রোদে। কথাটা অনেকটা সাহস করেই বললো রাশেদ। কারণ, ও জানে সৌন্দর্যের প্রশংসায় অভিভূত হয় যে কোন নারী, বিশেষত: কিশোরীরা।

আপনিও হ্যান্ডস্যাম এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয় বিষয়টা?

রাশেদ স্ফীত বোধ করলো। মেয়েটির সামাজিক ও মিশুক প্রকৃতি ওর ভালো লাগলো। মনে মনে ভাবল, তাহলে এতদিনে একজন সঠিক গার্লফেন্ডের দেখা মিলল। শুধু ফ্রেন্ডশিপ কেন যোগ্যতায় সে আরও একান্ত স্থান তৈরি করে নিতে পারে রাশেদের জীবনে। ওকে নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে বাধা কোথায়? ও সুন্দরী, মধ্যম গড়নের বাঙালি সম্ভ্রান্তঘরের মেয়ে বলেই ত মনে হচ্ছে। একটা সাবলীলতা আছে ওর চলনে বলনে। খুবই বন্ধুসুলভ। সাবলীলতা আছে ওর। ওটাকে কোন ভাবেই বেহায়াপনা বলা ঠিক নয়। আধুনিক যুগের সাথে বেশ মানানসই। রাশেদের ভাল লাগছে ওর পরিচ্ছদ। একজন স্মার্ট তরুনীই ত রাশেদের সঠিক গার্লফ্রেন্ড হতে পারে। মেডিকেলের ছাত্রী হওয়ার থেকে এটাই হয়ত রাশেদের জন্য ভাল হবে। ওর হাতে অনেক সময় থাকবে রাশেদকে দেবার মত। মাঝে মধ্যে ওর প্রোগ্রামগুলোও রাশেদ এনজয় করতে পারবে। ওই অল্প সময়ে রাশেদ মনে মনে কতটাই না এগিয়ে গেছে ওর দিকে। মিষ্টি হাসি ছড়াচ্ছে মেয়েটি বিকেলের সুখদ আবহে।

আপনি কি মেডিকেল স্টিউডন্ট?

নিশ্চয়ই। দ্বিতীয়বর্ষে পড়ি। আপনার সাথে বিকেলটা অনবদ্য লাগলো। যদি একটা গান শুনতে পারতাম তাহলে আরও ভালো লাগত।

ও এই কথা। ওটা আমার জন্যে কঠিন নয় তবে পরিবেশটা অনুকূল নয়।

চলুন না ওই দিকটাতে যাই। রাশেদ বললো। এই রাস্তা ধরে কয়েক মিনিট হেঁটে গেলেই অনেকটা নির্জন পরিবেশ। খোলা মাঠ। অদূরে ঝাউ মেহগনির সারি। দূর্বা আচ্ছাদিত অনেকটা উন্মুক্ত জায়গা।

ফিক করে হেসে ফেললো মেয়েটি। সাহিত্য করে কথা বলেন আপনি। কথা বলার  ভঙ্গিটাও উপভোগ্য।

রাশেদ না হেসে পারল না এবার। তার হাসি ছিল বাঁধভাঙা জলপ্রবাহের মত। হাসলো মেয়েটিও। আর দুজনে হাঁটতে লাগলো সেই নির্জন মেহগনি ঝাউয়ের দিকে। অনেকটা দূরে এসে গেছে ওরা কলরব থেকে।

বলতে হল না মেয়েটি গুন গুন করে গান গাইতে শুরু করল, দুজনে দেখা হলো মধু যামিনীরে..। রাশেদও যোগ দিলো সেই সুরে। এটা ওরও প্রিয় গান। একটা অদৃশ্য সুতো ধীরে ধীরে গেঁথে ফেললো দুজনকে। দুজনে এবার ঘনিষ্টভাবে বসলো ঘাসের উপরে। সূর্যের রক্তরাগ পড়েছিল ওদের মুখে ও চুলে।

বেশ লাগছে আপনাকে, আবিষ্ট কণ্ঠে বললো রাশেদ।

আপনাকেও। আমাদেরকে উঠতে হবে এখন। সূর্য কিছুক্ষণের মধ্যেই ডুববে। তারপর অন্ধকার।

আমাদের ভেতরে অন্ধকার আর কখনও জায়গা করে নিতে পারবে কি? রাশেদ বললো। মেয়েটি তাকাল রাশেদের চোখে। সে দৃষ্টিতে দুর্বোধ্যতা ছিল বলা যাবে না। কিন্তু বিশালতা ছিল, গভীর ব্যঞ্জনা ছিল। রাশেদের কাছে মনে হল মেয়েটি তার আরও ঘনিষ্ট হতে চায়। ভাল লাগলো বিষয়টি তার। এটি তার প্রত্যাশার সংগে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।

রাশেদ একটি নড়ে চড়ে বসলো।

আপনার নামটা জানা হল না।

কাকলি - কাকলি সেন। বাড়ি নয় ফ্লাট বিধান নগরে।

আমি রাশেদ। বাড়ি বনগাঁ। বাবা হাইস্কুল মাষ্টার। মা ব্যাংকার। একমাত্র সন্তান আমি। ওদের আশা পূরণ করতে তৎপর হয়েছি।

ভালোই বললেন। প্রত্যেক বাবা-মাই ত চায় প্রথমত তাদের ছেলেমেয়ে ডাক্তার হোক, দ্বিতীয়ত এঞ্জিনিয়ার, তৃতীয়ত....

থাক আর বলতে হবে না। বাধা দিলো রাশেদ।

কিন্তু আমার ভাল রেজাল্ট থাকলেও নিজের পছন্দের সাবজেক্ট বেছে নিয়েছি। বাবা মা ভাই খুশি হয় নি আমার চয়েস এ। কিন্তু কি করতে পারি আমি আমার ভাল লাগাকেই প্রাওরিটি দিতে অভ্যস্ত।

বন্ধুত্বের ব্যাপারে?

ঠিক বুঝতে পারলাম না।

মানে আমাদের বন্ধুত্বটা কি স্থায়ী হতে পারবে? বাধা কি নেই কোন পথে?

থাকতে পারে। তবে বন্ধুত্ব আকাশের মত উদার। মেঘহীন হতে পারে আবার  মেঘমেদুরও হতে পারে। তাতে কি এসে যায়। আকাশ থাকবে আকাশে।

বিস্মিত হলাম আপনার আত্মবিশ্বাসের কথা ভেবে। কলকাতা শহরে আপনার মত ক’টা বাঙালি মেয়ে আছে কে জানে! তবে এই সংখ্যা একশ পার্সেন্টে পৌঁছে গেলে হয়ত মঙ্গলজনক হবে সেটা দেশের জন্যে। আপনার নামটা জেনে খুশি হয়েছি। সূচিত্রা সেন বাংলা ছবির কিংবদন্তি। চোখের সামনে ভেসে উঠেছেন তিনি। হো হো করে হেসে উঠল মেয়েটি।   

ওঁর সাথে আমাদের সে রকম কানেকশান নেই। আমি শুধু মাত্র কাকলি সেন বুঝলে তুমি। রাশেদের মনে হল কাকলি ইনিমিয়েটিভ নিচ্ছে। তা ভাল। রাশেদ ওটাই চায়। এরকম একটি মেয়ে বন্ধু ওর চাই। কিন্তু সাম্প্রদায়িক বাধাটা ভয়ঙ্কর রূপও নিতে পারে! ভেবে শঙ্কিত হল সে।

দ্যাখো রাশেদ, বুঝেছি তুমি জাত-পাতের বলয়ে বিচরণ করছো। আমি এগুলো মূল্যহীন মনে করি। অন্তত আধুনাতন কলকাতায় এ সব সেন্টিমেন্ট অচল। এর সামাজিক গুরুত্ব যতই থাকুক, মানবতা বোধের কাছে তার পরাভব সুনিশ্চিত।

রাশেদ দেখল কাকলি বেশ বুদ্ধিমতী। তার উদারতা আকাশ ছোঁয়া। বড় ভালো লাগতে শুরু করেছে রাশেদের। সে সুন্দরী, সুগায়িকা। এমন একজনের সংগে একটা পুরো জীবন কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে অনায়াসে।

কাকলি সন্ধের আবছা অন্ধকারের ভেতরে দৃষ্টি ছাড়িয়ে দিয়েছিল উদাসভাবে।

চলো, আজ ওঠা যাক কাকলি, রাশেদ বলল।

বসি না দুজনে আরও কিছুটা সময় এখানে, এই নির্জন গোধূলিতে। রাশেদ ঘনিষ্ট হয়ে বসে রইল ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। তখন ঝিরঝিরে হাওয়ায় উড়ছিল ওর রেশমী চুল। রাশেদের মনে হচ্ছিল হাত দিয়ে চুলের মেঘগুলো সরিয়ে দেয় ওর চাঁদ মুখ থেকে। কিন্তু, কিছুই করল না সে। নিরবে তাদের কেটে গেল আরও কিছু নিবিড় সময় অপলকভাবে তাকিয়ে থেকে একে অন্যের দিকে।

পরের দিন আবারও এলো কাকলি। সময়টা একই। আজ গেল ওরা কলেজের পেছনের দিকে একটা গ্রাম্য পথের মোহনায়। পলাশ পড়ে ছিল পথের ওপরে এখানে ওখানে ইতঃস্তত। সূর্যের সোনালি আলোয় আলৌকিকভাবে সেজেছিল কৃষ্ণচূড়াগুলো গাছের শোখায় শাখায় পথের দু’পাশে। পাখির উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ তরঙ্গায়িত হচ্ছিল বিকেলের পশম হাওয়ায়। রাশেদ গাইতে শুরু করল, এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বলত 

কাকলি গাইল, তুমিই বল।

তার পর দুজনে হেসে উঠল এক সংগে হো হো করে। আর কোন কথা হল না। অনেকক্ষণ যাবৎ দুজনে পাশাপাশি হাঁটলো সূর্যাস্ত অব্দি।

মাঝে মাঝে স্পর্শসুখ অনুভব করছিল দুজনে। আজ কথা বলার তেমন ইচ্ছে হয়নি ওদের। 

বিদায়ের সময় কাকলি বলল, চল না কাল একটু দূরে কোথাও যাই।

দূরে? রাশেদ জিগ্যেস করলো।

বেশি দূরে নয়। এই ধর বোটানিক্যাল গার্ডেন। কাল রোববার। কলকাতাতে একটু শপিং টপিং করে কিছু প্যাকেট খাবার নিয়ে চলে যাব সোজা বোটানিক্যাল গার্ডেন কেমন হবে? গঙ্গার তীর ঘেঁষে বসব দুজন। অনেক কথা হবে।

সেদিন সকাল ন’টাতে ওদের মিট হল সেন্ট্রাল এর সামনে সি.আর. এভেনিউএ। রাশেদকে আজ আরও বেশি ড্যাশিং লাগছিল। এটা ফেড জিন্স পরেছিল সে। গলায় একটা সোনার চেন দুলে দুলে উঠছিল। মা ওকে গত জন্মদিনে দিয়েছে ওটা। নিকটবর্তী এটিএম বুথ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে নিল।

অত টাকা কি করবে রাশেদ? কাকলি প্রশ্ন করল।

আরে লাগবে লাগবে। এতে হয় কিনা কে জানে। তোমাকে নিয়ে এসেছি প্রথম বার শপিং করতে। লাগবে না?

কি যে বল না তুমি। আমার অত কিছু লাগে না। আমি একজন সংস্কৃতিসেবী। মানুষের হৃদয়টা নিয়েই আমার খেলা। ওটা ঋদ্ধ হওয়া চাই।

তোমার কি মনে হয় যে, আমি হৃদয়বান নই? না, না, তাই বলেছি কি?

ওরা চাইনিজ খেয়ে নিল। তারপর বেশ কিছু শপিং করলো কাকলি। পেমেন্টটা রাশেদই করেছে প্রতিবার। কাকলি প্রথমত আপত্তি জানালেও পরে শুধু ওর চোখে তাকিয়ে মৃদু হেসেছে। আপত্তি আর করেনি। রাশেদের টাকা শেষ হলে আবার এটিএম থেকে ও আরও পাঞ্চশ হাজার টাকা তুলে নিল। আজ ব্যয়ে ওর কোন দ্বিধা নেই। কেমন যেন হিরো হিরো লাগছে নিজেকে। সাদা মেঘের মত যেন ভেসে চলেছে সে কোন বরফাচ্ছন্ন পাহাড়ের উপর দিয়ে। এত ভাল লাগা বোধ ওর আগে কখনও অনুভূত হয়নি। বোটানিক্যাল গাডের্নে পৌঁছাতে ওদের প্রায় তিনটা বেজে গেল। এবার কাকলির কেনা বিরিয়ানির প্যাকেট নিল সে। ভীষণ সগন্ধ তাতে। রাশেদের জন্যেই ও এই স্পেশাল ডিশ এনেছে। রাশেদ ভীষণ খুশি। কতকাল খাওয়া হয় না ভাল বিরিয়ানি। ওরা প্রায় গার্ডেনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। গঙ্গায় তখন ভাটা। কয়েকটা জাহাজ দূরে নোঙর করেছিল। আর নৌকাগুলো আলোছায়ায় আবৃত হয়ে কোথায় যেন ভেসে চলেছিল আলৌকিক দেশে!

কি ক্যামন লাগছে রাশেদ? টেষ্টি তো? সে আর বলতে, ঠিক তোমার মত।

কি সব যা তা বল না তুমি। নাকি সুরে বড় ভালো মেয়ের মত বলল কাকলি। সে তাকিয়েছিল রাশেদের দিকে।

দ্যাখো কাকলি, আমি কিন্তু তোমায় বিয়ে করতে চাই। তুমি রাজি ?

নিশ্চয়ই। আমারও আর একা একা ভালো লাগে না। আস্তে আস্তে সূর্যটা সীসার মত হয়ে নেমে এলো গঙ্গার কুহেলিময় জলের উপরে। রাশেদের শরীরটা ভীষণ রকমের ক্লান্ত লাগছিল। ঝিমুতে লাগল ও। আস্তে আস্তে ওর বাহ্যিক চেতনা লোপ পেতে থাকল। পরের দিন সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘোর কেটে গেল তার। দেখল, সে একা শুয়ে আছে গার্ডেনের সেই ঝোপের আড়ালে যেখানে ওরা গতকাল বসেছিল। কোথায় গেল কাকলি?

সে ক্ষীণ কণ্ঠে ডাকল, কাকলি! কোন সাড়া পাওয়া গেল না। পকেটে, গলায় হাত দিয়ে দেখলো, কোথাও কিছু নেই তার শরীরে পরিধেয় ছাড়া। মোবাইলটাও নেই। সে বুঝতে পারল, রবীন্দ্রভারতীর মিউজিক ডিপার্টমেণ্টেও তাকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।

 

অজিত কুমার রায়
রিটায়ার্ড প্রফেসর অভ ইংলিশ
কবি, ছড়াকার, কথা সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক
প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক, খুলনা, বাংলাদেশ।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top