সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১

রোকেয়ানামা (শেষাংশ) : দিলারা মেসবাহ


প্রকাশিত:
৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:১৪

আপডেট:
৯ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৪০

ছবিঃ বেগম রোকেয়া ও লেখিকা দিলারা মেসবাহ

 

বেগম রোকেয়া রংপুর, আসাম এলাকার এন্ডি শিল্প নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন,এই শিল্প উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগী হয়েছেন।...

'স্বদেশীয় মাহেন্দ্রক্ষণে খোদার ফজলে রংপুর ও আসামের এন্ডি জাগিবে; ভাগলপুর ও মুর্শিদাবাদের রেশমি শিল্প জাগিবে, জাগিবে নিশ্চয়ই।' চিন্তাও ছিলো, স্থানীয় সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকেরা তাঁর আশায় পানি ঢেলে দেবেন,হয়তো বলবেন--'ঝোঁপড়ি মেঁ রহনা ও মহল কা খাব দেখনা।'

'৭০০ স্কুলের দেশে' নিবন্ধে তিনি সেই সময়কালের ধর্মের নামে কুধর্ম চর্চার বিবরণ দিয়েছেন। সালেহা সুশিক্ষিত, বাড়ির বৌ।তিনি বাড়ির গৃহকর্মীদের নামাজের সুরা সঠিকভাবে পাঠ করার জন্যে মনোযোগী হলেন। এদিকে কালার মা তক্তপোশে শুয়ে ঘরের থামে দুই পা তুলে পড়ে--' আলামতারার কয়টা ভালা'! সালেহা রাগে দুঃখে কালার মাকে বকুনি দিতে বাধ্য হন। সেও তখন বলতে লাগল, 'শিয়াল কুকুরের মতো তাড়ান কেন? কালার বাপ হজ করে আইল্ছে। আমরা পীরের মুরিদ। মহরমের দিন বিবির নামে রোজা রাখি। খোদার নাতিদের নামে শরবত খাওয়াই।' আর একজন বলতে লাগল, 'খোদা ও রসুল একই লোক না!' সালেহা ও তাঁর শাশুড়ী তওবা তওবা, নাউজুবিল্লাহ পড়তে লাগলেন। সালেহা তাদের বুঝিয়ে বলার পরও আর একজন তার অধীত বিদ্যা জাহির করল,' আমাদের পয়গম্বর সা'ব খোদার দোস্তজী; দোস্তজীর নাতী কি খোদার নাতি হয় না?' কালার বাপ বলছে, ইংরেজি পড়া বৌ, এদের সাথে কথা বললে ঈমান থাকে না। বিবি ফাতেমা নাকি তানার বাপের দোস্তের কাছ থেকে মহররমের দশটা দিন চেয়ে নিয়েছিলেন, 'তাউই সা'ব,বছরের সব দিন আপনার থাকুক, কেবল মহররমের দশটা দিন আমাকে দেন।' পীর হুজুর নাকি এও বলেছেন, কোরান শরীফের মানে পড়লে বা মানে বুঝতে চাইলে বেআদবি হয়, ঈমান যায়। রোকেয়ার আজন্ম সাধনা ছিলো সমাজের এই চরম দুর্দশা থেকে উত্তরণ। সেই জন্যে চাই সুশিক্ষার আলো, সুস্থ বিবেক! সেই সময়েও বেগম রোকেয়া ভ্রমণ করেছেন অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল। তাঁর তীব্র শ্লেষাত্মক মন্তব্যটি, 'আমাদের সর্ব কাজের সমাপ্তি বক্তৃতায়, সিদ্ধি করতালী লাভে।

কর্মযোগী, বহুমাত্রিক গুণের এই মহীয়সী নারী সমন্বয় করেছিলেন স্বপ্নের এবং কর্মের। অনেক সময় কর্তৃত্বপরায়ন পুরুষ মহলের সাথে মত বিনিময়ে তিনি কৌশলী হতে বাধ্য হয়েছিলেন। বেগম রোকেয়ার লড়াই ছিলো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। যে নিষ্ঠুর রাতের শেষ প্রহরে তাঁর মুক্তিপিয়াসী লড়াকু জীবনের পরিসমাপ্তি হবে, সেই কাল রাতেও তিনি রাত এগারোটা অবধি টেবিলে বসে লিখছিলেন, 'নারীর অধিকার।'

১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তাঁর পবিত্র রুহ অনন্তের পথে যাত্রা করেন-- তখন সুবহে সাদেকের আলো ফোটার অপেক্ষায়। মাত্র বাহান্ন বছরের পরমায়ু, ক্ষণজন্মা এই লড়াকু নারী হোক একবিংশ শতাব্দীর 'অন্ধ' সময়ে প্রাতঃস্মরণীয়।

 

রোকেয়ানামা (প্রথম পর্ব)

 

দিলারা মেসবাহ
কবি কথাশিল্পী, সভাপতি, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top