সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : রহমান তৌহিদ


প্রকাশিত:
২১ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:৩৭

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩৯

 

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ! শব্দটির সাথে বাঙালির পরিচয়  সিগারেটের প্যাকেটে। প্রথম প্রথম এ লেখা ছোট আকারে লেখা থাকতো। সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : ধূমপান স্বাস্থ্যে জন্য ক্ষতিকর। কেউ তেমন পাত্তা দিত না। অন্তত এ লেখা দেখে কেউ সিগারেট কেনা ছেড়ে দিয়েছে এ তথ্য পাওয়া যায় নি। তার পর লেখা হল ধূমপানের কারণে শ্বাস প্রশ্বাসের ক্ষতি হয়, ধূমপান মৃত্যু ঝুকি বাড়ায়, ধূমপান হৃদরোগের কারণ, ধূমপান ক্যান্সারের ঝুকি বাড়ায়” । লেখা ছোট থেকে এখন বড় হয়েছে, লেখার পাশাপাশি ভয়াবহ ছবিও প্যাকেটের গায়ে শোভা পাচ্ছে।

অভিযোগ ছিল, ধূমপায়ীদের কত জন পড়তে পারে যে, সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ পড়বে?

এরপর ছবি দিয়ে বোঝানো হল, এখন ভয়াবহ ছবি দিয়ে বোঝানো হচ্ছে। তারপরও ধূমপান চলছে।

ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালনো হয়, সিগারেটের বিজ্ঞাপন রেডিও - টেলিভিশন- পত্রিকাতে প্রচার নিষিদ্ধ করা হল। আমরা ধূমপান নিবারণ করি - আধূনিক থেকে শুরু করে কত সংগঠন হল। এমনকি পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে জরিমানার ব্যবস্থা করা হল। সিগারেটের উপর শুল্ক বাড়ানো হল। এত কিছুর পরেও ধূমপায়ীর সংখ্যা কি কমলো?

সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ২৮ শতাংশের বেশি সিগারেট খায় আর কমপক্ষে ১৭ শতাংশ বিড়ি খায়। দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমপক্ষে এক কোটি আশি লক্ষ। সিগারেটের বাজার কমপক্ষে ২০,০০০ কোটি টাকার আর তা ক্রমাগত বাড়ছে। বাড়ার অন্যতম কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের আয় বাড়ার সাথে সাথে প্রচুর নি¤œ আয়ের মানুষ বিড়ি ছেড়ে সিগারেট ধরছে। পাড়া – মহল্লায় মুদি দোকানে সিগারেটের খদ্দের বাড়ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের সিগারেট কেনার হার কমে নি। আর নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, খদ্দেরের তালিকায় নারীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় অংশগ্রহন। জাপানী বড় সিগারেট কোম্পানী বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশের সিগারেট খাতে।

সিগারেট থেকে শুরু - তারপর হেরোইন  এর রকম একটা গান এক সময় বাজতো। এখন কত কী, তা যারা এ লাইনে হাটে তারা জানে। সেদিন এক অভিজাত শপিং মলে গেছি ফাস্টফুডের সন্ধানে। খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে দেখি ভ্যাপার ওয়ার্ল্ড। প্রথমে বুঝতে পারি নি, পরে বুঝলাম সেটা সিসা বার। বাপ দাদারা হুকো- গড়গড়া টানতো; তাদের নাতি নাতনিরা এখন সিসা বারে ভ্যাপার নেয়। অবশ্য কোভিড ১৯ এর কারনে ভ্যাপার এখন ব্যাপক আলোচিত। সব ভ্যাপার এক নয় - এটা ক’জনে  বোঝে?

যাহোক, ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে দু’চার কথা বলে আসল গল্পে যাব, পাঠক যার জন্য অপেক্ষা করছেন।

১.      সিগারেটের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়।
২.      হার্ট এটাক ও স্ট্রোক ঘটায়
৩.      ধমণীতে (করোনারী আর্টারী) ব্লকেজ তৈরি হয়। রিং পরানো বা বাইপাশ সার্জারী করতে হয়।
৪.      দিনে ২০টা সিগারেট খাওয়া ব্যক্তি প্রতি বছর প্রায় ১ কাপ আলকাতরা ধোয়ার সাথে ভেতরে নেয়। এটা ফুসফুসে ঝুল সৃষ্টি করে।
৫.      গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে ঘনঘন গর্ভপাত, জন্মের আগে শিশুর মৃত্যু বা অপরিনত শিশুর জন্ম হতে পারে।
৬.      পাকস্থলীর ক্যান্সার বা আলসার, কিডনি, অগ্নাশয়, ব্লাডারের ক্যান্সারের ঝুকি বাড়ায়।

ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

 এরপরও যদি কেউ সিগারেট খেতে পায়, তবে তাকে নিজ দায়িত্বে খেতে হবে। আমার কাজ সতর্ক করা , করেছি।

বিড়ি খাবি খা, মারা যাবি যা।

ধূমপান তথা হুকো, বিড়ি- সিগারেট নিয়ে এখন কিছু স্মৃতিচারণ করি।

আমাদের বাল্যকালে ধূমপান একটি অতি স্বাভাবিক বিষয় বলে মনে করা হত। বাবা ক্ষেতে কাজ করছে, ছেলেকে বলছে হুকোটা জ¦ালিয়ে দিতে। ছেলে এই ফাঁকে দু’টান দিয়ে দিল। অনানুষ্ঠানিক হাতে খড়ি। নিম্নবিত্ত পরিবারে ছেলে সাবালক হলে একটু আধটু বিড়ি সিগারেট টানবে এটাই স্বাভাবিক। আর মধ্যবিত্তের হল জ্বালা। খাও, তবে দেখে শুনে, রেখে ঢেকে। মুরুব্বি দেখলে লুকিয়ে ফেলা। অনেকে জ¦লন্ত সিগারেট হাতের মধ্যে লুকিয়ে ফেলার কৌশল এমনভাবে রপ্ত করেছিল যা দেখে যাদুকরও বিস্মিত হবে।

তো, লুকিয়ে সিগারেট কম বেশি সবাই খেত। তবে আমাদের বদরুল ছিল ব্যতিক্রম। টিফিন পিরিয়ডে আমরা যখন হালকা নাস্তা খেতে বা ভলিবলে হাত পাকাতাম, তখন সে মাঠের শেষ প্রান্তে  দিব্যি সিগারেট ফুকতো। তার  ধরা খাওয়ার  দিনটি বেশ পড়ে। এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ তখন অনেকটা উৎসবের রুপ নিত। ফরম ফিলাপ শেষে প্রায় সকলেই পায়ে হাত দিয়ে স্যারদের আর্শীবাদ নিচ্ছে। স্যারেরা বিচ্ছিন্নভাবে আসছেন, কেউ দু’কথা বলছেন। কেউ বা মাথায় হাত দিয়ে, বুকে টেনে নিয়ে আদরের স্বরে ছাত্রের মঙ্গল কামনা করছেন। এমন সময় বদরুল এসে এসিস্ট্যান্ট হেড স্যারের সামনে দাঁড়ালো। তারপর সটান উপুড় হয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেছে। বদরুলের শার্টের পকেট থেকে সিগারেট পড়ে গেছে মাটিতে। আশেপাশে যারা ছিল, তাদের দৃষ্টি এড়ায় নি। কিন্তু, স্যার বিষয়টি সুন্দরভাবে সামলে নিলেন। মৃদ্যু হেসে বললেন, আর্শীবাদ করি, জীবনে অনেক বড় হবি। আর মাথা নোয়াবার আগে একটু দেখে শুনে নোয়াবি।

এরপর পাশের বাড়ীর জুড়ন খুড়োর কাহিনী। জুড়ন খুড়ো সৌখিন মানুষ। আমাদের ক্রিকেট খেলার ব্যাট- বল কেনার জন্য মাঝে মধ্যে চাঁদা দেয়। এটা গত শতাব্দীর  সত্তরের দশকের শেষ ভাগের কথা। তখন ক্রিকেট খেলা যত্রতত্র হতো না। আমরা জুড়ন খুড়োকে লুঙ্গি পরিয়ে ব্যাট করিয়ে ছেড়েছিলাম। তো এহেন জুড়ন খুড়ো বাড়িতে এক সকালে কি কাজে যেন গেছি। দেখি খুড়ো খুবই উত্তেজিত। তার ছোট ভাই যোগেন শহর থেকে ফিরেছে। যোগেন খুড়ো আমাদের সাথে তেমন মিশতেন না, তাছাড়া তিনি দীর্ঘদিন শহরে থেকে লেখাপড়া করায় আমাদের সাথে একটু দুরুত্ব বজায় রাখতেন। দেখি দু’ভাই বারন্দায় চৌকি পেতে গল্প করছেন। আমাকে আর এক চৌকিতে বসতে বললেন। দু’ভাইয়ের কথোকথন যতদুর মনে পড়ে:

যোগেন খুড়ো : দাদা, উকালতি পাশ তো দিলাম। আর্শীবাদ করো, এবার যাতে প্রাকটিসটা জমাতে পারি।

জুড়ন খুড়ো : বিলক্ষণ, বিলক্ষণ। এতো খুশীর খবর। আমার ভাই উকিল।

এবার যোগেন খুড়ো প্যান্টের পকেট থেকে অতি যত্নে বিদেশী ব্রান্ডের সিগারেট বের করলো, সঙ্গে একটা সুদৃশ্য লাইটার। ভক্তিভরে দাদার সামনে রেখে বলল, দাদা এটা তোমার জন্য ।

জুড়ন খুড়োর উজ্জ্বল চোখ দু’টো আমি এখন দেখতে পাই। বাচ্চা ছেলের মতো খুশি হয়ে সিগারেটের প্যাকেট খুলে ঠোঁটে একটা ঢুকিয়ে লাইটারটা নেড়ে চেড়ে আগুন ধরালেন সিগারেটে। তারপর চোখ বন্ধ করে একটা সুখটান দিয়ে ধোঁয়ার রিং বানিয়ে উচ্চারণ করলেন, আহ্ ।

আমি গভীর কৌতুহল নিয়ে ধোঁয়ার কুন্ডলীর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

এবার জুড়ন খুড়ো মোলায়েম স্বরে বললেন, খাবি?

প্রশ্নটা যে আমাকে উদ্দেশ্য করে নয়, তা আমি বুঝলাম। কিন্তু যোগেন খুড়োর সেটা বুঝতে সময় লাগল।

যোগেন খুড়ো : আমাকে বলছ, দাদা ?

জুড়ন খুড়ো : জানি , তুই খাস। নে। তাছাড়া, তুই তো এখন উকিল হয়েছিস। নে , ধরা।

যোগেন খুড়ো অতি সন্তর্পনে সিগারেট নিয়ে আদবের সাথে তা ধরালো। এরপর দুই ভাইয়ের সিগারেট টানা আর উচ্চ মার্গের আলোচনা আমাকে শুনতে হল। না, আমাকে কেউ শুনতে বাধ্য করেনি। আমি নিজে থেকেই শুনেছি। মুগ্ধ হয়ে সিগারেটের ধোঁয়ার রিং উড়ে যেতে দেখেছি। আর এর ফলে পরবর্তী জীবনে আমি গুণীজনের কথা মুগ্ধ হয়ে শুনতে পেরেছি আর সিগারেটের ধোঁয়ার রিং এর মত জিনিস দেখেও মুগ্ধ হতে পেরেছি। আর বুঝতে পেরেছি, উকিল হলে বড় ভাইয়ের সাথে বসে সিগারেট খাওয়া যায়। আমার উকিল হওয়া হয়নি। সিগারেট খাওয়াও হয়নি।

আমার বন্ধুর দাদা আবার আমাদের কলেজের শিক্ষকও ছিলেন। স্যারের বাসায় গেলে তিনি আমাদের সাথে তাস খেলতেন। বলতেন, আমার সাথে খেল, সমস্যা নেই। কিন্তু বন্ধু-বান্ধবের সাথে চিপায় তাস খেলবি না। তখন তাসের সাথে সিগারেটও ধরবি। সাবধান।

তাসের আসরে চলে সিগারেট। আর সিগারেটের আসরে উচু নীচুর পার্থক্য থাকে না। উর্ধতন বসও একেবারে নি¤œ পর্যায়ের কর্মচারীর সাথে বসে যায় তাসের আসরে। আগেকার দিনের বসেরা তাস খেললেও সিগারেট এক সাথে খেতেন না। ইদানীং শুনি কেউ কেউ সেটাও চালাচ্ছেন। মনিব যখন ভৃত্যের গোপন কথা জেনে যায়, তখন আর সে ভৃত্য থাকে না। সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হলেও, কেউ কেউ সাম্যবাদ বা চরম সাম্যবাদের দিকে ঝুকে পড়েছে।

শীতের সন্ধ্যা নামে তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যার একটু পরই মনে হয়  রাত গভীর। যে সময়ের গল্প বলছি, সে সময় গ্রামে গঞ্জে বৈদ্যুতিক বাতি সেখানে সেখানে জ¦লত না। গ্রামের পাশের কালভার্টেও উপর বসে সাজুর বাবা বিড়ি টানছিল। ছেলে বুড়ো অনেকেই ছিল। অন্ধকারে কাউকে চেনা না গেলেও গল্প গুজবে কোন সমস্যা হচ্ছিল না। এমন সময় সাজু এসে একজনের হাত থেকে জ¦লন্ত বিড়ি নিয়ে তার সিগারেট ধরালো। তাতেও সমস্যা ছিল না। কিন্তু, বিড়ি নেওয়ার আগে বলে বসলো, বিড়িটা দাও তো ভাই, একটু আগুন জ¦ালাই।

পাঠক, ঠিকই ধরেছেন। সাজু তার বাবার কাছ থেকেই বিড়ি নিয়ে ধরিয়েছিল। বাপ-বেটা কারো সমস্যা ছিল না, সমস্যা হল সাজুর পাশে বসা ইউনুস মোল্লার। তিনি আপন মনে বলে উঠলেন, įবাপ পায় না বটপাতার বিড়ি, ছেলে টানে ডানহিল।

 মসলিসে হাজিরানে তুমুল হাসির রোল বয়ে গেল। মানুষ কখন, কিনে মজা পায় সে এক রহস্য ।

কত কিসিমের সিগারেট যে এল গেল। কিং স্ট্রক বক মার্কা সিগারেটের কথা কবিতায় এসেছে। তারপর স্টার , গোল্ড লিপ, গোল্ড ফ্লেক। ফাইভ ফাইভ ফাইভ। তার পর বেনসন এন্ড হেজেজ। আর এক প্রকার সিগারেট ছিল, সেটা মেশিন দিয়ে বানাতে হত - আর সে তামাকের নাম ছিল ফ্লাইং ডাচম্যান। তার সুগন্ধ আশে পাশে মাতিয়ে দিত। যে টান দিত, সেও মজা পেত, যে শুকতো সেও।

শুধু কি সিগারেট? একটু বিড়ির কথা বলতে হয়।

ধুমপানে তৃপ্তি আনে কারিগর বিড়ি - বাংলার আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে এ রকম বিজ্ঞাপন এক বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সূচনালগ্নে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে সহায়তা করল। তারপর একসময় বিড়ি সিগারেটের বিজ্ঞাপন বন্ধ হল। ততোদিনে চ্যানেল দাড়িয়ে গেছে। তবে সে সকল দিনের আয়ের কথা ভাবলে কর্তৃপক্ষ এখন হা হুতাশ করবেন। কি দিন ছিল।

আর এক গ্রæপ অফ কোম্পানীজ বর্তমানে যাদের বহুবিধ ব্যবসা, তাদের শুরু হয়েছিল বিড়ি দিয়ে। সেই কোম্পানীতে টেরিটরি সেলস ম্যানেজার ছিল এক আমার বাল্য বন্ধু, এইচ এস সি তে তৃতীয় বিভাগ পাওয়ার পর যে į আমি আর যাই হই থার্ড ক্লাস নই İ বলে লেখাপড়াকে গুডবাই জানিয়েছিল, তার কাছে শোনা গল্প।

মাসিক সেলস মিটিং। হিসাব নিকাশ চলছে। আজকালের মত তখন সবকিছু কম্পিউটার নির্ভর ছিল না যে, ল্যাপটপের এক কমান্ডে সব পাওয়া যাবে। সিট দেখে ক্যালকুলেটরের  বাটন টিপে হিসাব করতে হত। তাই সময় লাগতো। এ সময় কোম্পানীর চেয়ারম্যান সাহেব এসে হাজির। তিনি বললেন, আপনারা সব লেখাপড়া জানা মানুষ, বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। আমার লেখাপড়া কম। একটা প্রশ্ন করি, আচ্ছা বলেন তো কোন এলাকায় আমার বিড়ি চলছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?

বাঘা বাঘা সেলস ম্যানেজার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিল।

শেষে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, এলাকার রাস্তা দিয়ে হাটবেন, আশপাশ তাকিয়ে দেখবেন, আমার পাছা পড়ে আছে কিনা?

অর্থাৎ বিড়ি খেয়ে মানুষ বিড়ির পেছনের অংশ কি পরিমানে রাস্তায় ফেলেছে সেটা দিয়েই বোঝা যাবে বিড়ি বিক্রির পরিমান।

অনেক বস আবার সিগারেট খান, কিন্তু অধিনস্তদের সামনে খান না। তাছাড়া মিটিং এর মধ্যে তো সিগারেট ধরানো শোভনীয় নয়। এরকম এক মিটিং এ একবার সভাপতি সাহেব কথার খেই হারিয়ে ফেলছেন। এক সময়  ঘোষণা করলেন, দশ মিনিটের বিরতি। উপস্থিত অনেকেই বুঝতে পারলেন না এ সময়ে কিসের বিরতি। পিয়ন মারফত জানা গেল, ধূমপানের বিরতি। বিরতি শেষে বস হাত মুখ ধুয়ে সুগন্ধি লাগিয়ে পুনরায় যখন মিটিং এ যোগ দিলেন, তখন একবারে তরতাজা।

এবার এক ব্যতিক্রমী ধূমপায়ীর কথা বলি। ভদ্রলোক একটা সিগারেটের আগুন দিয়ে আর একটা ধরান। গল্পটা গত শতাব্দীর নব্বই এর দশকের মাঝামাঝি। তখন সরকারি অফিসে সেন্ট্রাল এসি হাতে গোনা কিছু অফিসে ছিল। তিনি ছিলেন সে রকম এক অফিসের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশন রুমে সাধারনত কেউ সিগারেট ধরান না, কিন্তু তিনি ব্যতিক্রম। তিনি আবার ঘটা করে বড় একটা পিতলের ছাইদানিতে ছাই ফেলেন। সিনিয়র মানুষ হিসাবে তাকে অনুরোধ করা হলেও কেউ জোর করে কিছু বলেন না। তার দেখাদেখি আরো কয়েকজন ধূমপান শুরু করলে কতৃপক্ষের টনক নড়ে। įধূমপান নিষেধ ধূমপান মুক্ত এলাকা  ইত্যাকার স্টিকার লাগানো হল। অন্যেরা বিষয়টি মেনে চললেও ভদ্রলোক তার স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে সিগারেট ধরিয়ে ছাইদানিতে ছাই ফেলেই যাচ্ছেন। একদিন জুনিয়র এক কলিগ তাকে বোঝাতে গেল।

জুনিয়র কলিগ : ভাই, একটা সিগারেট আপনার আয়ু পাঁচ মিনিট করে কমিয়ে দিচ্ছে।

ভদ্রলোক : আপনার হিসেব ঠিক থাকলে আমি অনেক আগেই মারা গেছি।

এরপর আর কি বলা যায়। জুনিয়র কলিগ এরপর একটা কাজ করল। স্টিকারে įধূমপান নিষেধ İ এর নিচে ছোট করে লিখলেন অমুক ব্যতীত । এই অমুক হল ভদ্রলোকের নাম।

পরদিন ভদ্রলোক বললেন, দেখেন চাকুরি আর কয়েক মাস আছে। আপনারা একটু সহ্য করেন। অনেক কিছু ছেড়ে ছুড়ে এই একটাই নেশা আছে। এটা ছাড়লে চলতে পারবো না। এটা হাতে থাকলে মনে হয় কিছু একটা সঙ্গী আছে। আমার এক বড় ভাইয়ের গল্প বলি, যার কাছে আমার সিগারেটের মুখাগ্নি শুরু ...

বড় ভাই একদিন বাড়ির সামনে মুদি দোকান থেকে সবে সিগারেটটা কিনে ধরিয়েছেন, এক ভদ্রলোক হাজির।

ভদ্রলোক : ভাই, এই যে সিগারেট ধরালেন এটার দাম কত?
বড় ভাই বিরসবদনে দাম বললেন।
ভদ্রলোক : দিনে ক’টা খান ?
বড় ভাই নির্লিপ্তভাবে তাও বললেন।
ভদ্রলোক : এবার বোঝেন। এই সিগারেটের পিছনে আপনি যে টাকা খরচ করছেন তা যদি না করতেন, তাহলে সামনের ঐ বাড়িটার মতো বাড়ি আপনার থাকতো।
বড় ভাই : ভাল বলেছেন, তা আপনার কয়টা বাড়ি আছে?
ভদ্রলোক : আমার নেই। আমি সিগারেট খাইও না। আপনি খান, তাই হিসেবটা দিলাম। কি হতে পারতো।
বড় ভাই এবার সামনের বাড়িটা দেখিয়ে বললেন, ঐ বাড়িটা আমার।

বড় ভাই থেকে এবার একটু মেঝ ভাইতে যাই। এই মেঝ ভাই জীবনে কোন কিছুতেই স্থির হতে পারেন না, শুধু একটা ব্যাপারে স্থির, আর তা হল ধূমপান। সকালে সিগারেটে টান না দিলে তার নাকি বাথরুম পরিষ্কার হয় না। তো এক সময়ে তার হার্টে বøক ধরা পড়লে রিং পরানো হল। এবার ডাক্তার সাবধান করে দিল, ধূমপান একেবারেই নিষেধ। আত্মীয়-স্বজনরাও তাকে বোঝালো এবার ধূমপান ছাড়। কিন্তু, কে শোনে কার কথা। মেঝ ভাই ধূমপান করেই যাচ্ছেন। বিশেষত সকাল বেলা।

এক আত্মীয় তাকে বললেন, এভাবে সিগারেট খেলে অচিরেই মারা পড়বে। জবাবে মেঝ ভাই বললেন, আর না খেলে বাথরুম পরিষ্কার না হওয়াতে কয়েকদিনেই মারা যাব।

 তখন আত্মীয় ভদ্রলোক বললেন,এক কাজ কর, ডাক্তারকে বল প্রেসক্রিপশনে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের পরিবর্তে সিগারেট টানার পরামর্শ দিতে।

কবির সুমনের একটা গভীর আবেগের গান  তোমাকে চাই এর তোমাকে টা কে? কাকে বলেছেন সুমন? যার নামের সঙ্গে গানটি জড়িয়ে আছে তাকে খুঁজেছে অনেকে। কিন্তু তোমাকে চাই এর প্রেক্ষাপট প্রেমের ছিল না একদমই। বরং সেখানে উঠে এসেছিল একাকিত্ব, বেঁচে থাকার চেষ্টা ...

প্রেক্ষিতে, কেউ কেউ ব্যাখ্যা দেন গানটি সিগারেট নিয়ে লেখা। আমার কাছে প্রথমে হাস্যকর মনে হলেও একদিন গানটি চালিয়ে দিলাম। আর মনের অজান্তে সিগারেট ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমারও মনে হল, গানটি সিগারেটকে নিয়ে লেখা। আপনি শুনে দেখতে পারেন।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : প্রথমত, এই লেখা কেউ সিগারেটে আকৃষ্ট হলে, তার দায়-দায়িত্ব লেখকের উপর বর্তাবে না। নিজ দায়িত্বে ধূমপান করুন।  আর কবির সুমনের গান, তোমাকে চাই এর ব্যাখা লোকমুখে শোনা। পাবলিকের মুখ তো বন্ধ করা যায় না।

 

রহমান তৌহিদ
রম্য লেখক
লেক সার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top