সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

টিকিট : পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়


প্রকাশিত:
২৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৪১

আপডেট:
২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:২৭

 

এক

স্বপ্নটা আবার দেখলেন অনিমেষ, লিখতে লিখতে লেখার টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন আর তখনই মেয়েটা এল ঘুমের হাত ধরে, সন্তর্পণে অথচ অমোঘ পদক্ষেপে। অনিমেষ জানতেন সে আসবে এবং তার আসার পথ চেয়েই তিনি ইদানীং ঘুমিয়ে পড়ছেন। এক একটা শব্দের জন্য সেদিনও প্রাণপাত করছিলেন অনিমেষ, বিদেশী বই থেকে গুঁজে দিয়েছেন লাইনের পর লাইন, দাঁড়ি কমা শুদ্ধু। প্রায় তিরিশ বছর হল অনিমেষ লিখছেন, তার নামেই একটা সংস্করণ বিক্রী হয়ে যায়, যদিও সংস্করণের বই এর সংখ্যা কমাতে হচ্ছিল আজকাল। যখন সদ্য একুশে তিনি লিখেছিলেন তার প্রথম উপন্যাস, ‘অন্ধকারের শিলালিপি’ বা প্রথম কাব্যগ্রন্থ, ‘সব ছন্দ কাল্পনিক’, তখন কেই বা ভেবেছিল তার লেখক জীবন প্রথম দশ বছরের পর স্রেফ টুকে টুকে চলে যাবে! বড়ো পুরষ্কার, মোটা রয়্যালটি, ভক্তদের পুজো ঘুণপোকার মতন শেষ করেছিল অনিমেষকে। অনেকবার ভেবেছেন আর লিখবেন না, কিন্তু সম্পাদকদের চাপ আর খ্যাতির মোহ অনিমেষকে লিখতে বাধ্য করছিল বন্ধ্যা অক্ষরের পর অক্ষর, টুকতে বাধ্য করছিল সুকৌশলে একটু অজানা বিদেশী লেখা। তারপর একদিন বাচ্চাটাকে স্বপ্নে দেখলেন অনিমেষ, দেখার কথা ছিল না তবু দেখলেন। একটা ইঁট বার করা দেওয়াল, টালির চাল, শ্যাওলা পরা উঠোনে মেয়েটা শুয়ে আছে। একটা নেকড়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে আসছে, অনিমেষের হাতে একটা লাঠি, নেকড়েটাকে মারতে যাবেন, লাঠিটা তুলতে পারলেন না, অনিমেষ বললেন যা যা, গলা থেকে কোনও স্বর বার হল না, নেকড়েটা কি মেয়েটাকে খেয়ে নেবে! কিন্তু নেকড়েটা মেয়েটাকে খেল না, সে কাছে গিয়ে লেজ নাড়তে লাগল, তারপর আস্তে আস্তে মেয়েটার পা এর তলা চেটে দিতে লাগল। দৃশ্যটা অনিমেষের খুব খারাপ লাগল না, কিন্তু ভেতরে একটা অস্বস্তি হতে লাগল। অনিমেষের মনে হল বাচ্চা মেয়েটার মুখটা খুব চেনা, তবু সঠিক মনে করতে পারলেন না, ভাবলেন মুখটা একবার কাছ থেকে দেখা দরকার, সেই ইচ্ছা নিয়ে কাছে যেতেই নেকড়েটা ভীষণ গর্জন করে তেড়ে এল।

ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো, কাগজ কলম টেনে নিলেন অনিমেষ, লিখতে শুরু করলেন, এরকমই চলছে গত কয়েকদিন, স্বপ্নটা আসছে লেখার টেবিলে ঘুমিয়ে পড়লেই, বাচ্চা মেয়েটা আসছে বলাই ভাল, বিছানায় শোওয়া ঘুমের স্বপ্নে সে আসে না। তারপর নেকড়েটা আসে, স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে অনিমেষ লিখতে বসছেন, বুঝতে পারছেন একটু একটু করে শব্দরা ফিরে আসছে, এখনও সমগ্র কোনও ছবি দেখতে পাননি অনিমেষ, শুধু সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। গত দুবছর কোনও নামী শারদীয়া সংখ্যায় লেখার আমন্ত্রণ আসেনি অনিমেষের কাছে, অনেকেই জানতে চেয়েছে পুজো সংখ্যায় তার লেখা নেই কেন! শরীর ভাল নেই বলে পুজো সংখ্যায় লেখার চাপ নিতে পারছি না, বলে এড়িয়েছেন অনিমেষ, কিন্তু তিনি জানেন এই বছর একটা এসপার ওসপার করতেই হবে, এমন একটা লেখা লিখতে হবে যা পড়ে সব সম্পাদককে তার কাছে লেখার অনুরোধ নিয়ে আসতে হবে, না পারলে তিনি নিজের জীবদ্দশাতেই বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে যাবেন।

 

শুভময় বোস ভিজিটর্স স্লিপে অনিমেষ রায়ের নামটা দেখে অবাক হলেন। শুভময়ের ‘চারুলতা’ এই বাঙলার সেরা সাহিত্য পত্রিকা, এখানে প্রতিষ্ঠিত লেখকরা তাদের সেরা লেখাটাই দেন, আর নবাগতদের স্বপ্ন থাকে একবার চারুলতাতে তাদের লেখা ছাপাবার। শুভময় বোস কঠিন ভাবে তার পত্রিকার মান নিয়ন্ত্রণ করেন, সবিনয়ে অথচ সুদৃঢ় ভাবে নামী লেখকদের দুর্বল লেখা প্রত্যাখ্যান করতেও শুভময়ের হাত কাঁপে না। একসময় চারুলতাতেই ধারাবাহিক ভাবে ছেপেছিলেন অনিমেষ রায়ের উপন্যাস, ‘একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু’ যা প্রকাশের সময় থেকেই সাড়া ফেলে দিয়েছিল পাঠক মহলে এবং পরে অনিমেষকে এনে দিয়েছিল বড়ো পুরষ্কার। কিন্তু সেইসবই অতীত, এখন অনিমেষের কোনও লেখা ছাপেন না শুভময়। গত পাঁচ বছরে পুজো সংখ্যায় লেখার আমন্ত্রণ জানাননি অনিমেষকে, তবুও অনিমেষ এখনও বাঙলা সাহিত্যে বড় নাম, তার কোনও পত্রিকার দপ্তরে নিজে থেকে এসে সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করা খুবই অদ্ভুত ঘটনা। ইন্টারকমে শুভময় রিসেপশনে জানিয়ে দেন এখনই অনিমেষকে তার দপ্তরে পাঠিয়ে দিতে আর সঙ্গে করে যেন কেউ সসম্মানে নিয়ে আসে সেই নির্দেশ দিতেও ভুললেন না। অনিমেষ ঘরে ঢুকতেই শুভময় বললো আসুন অনিমেষদা, কেমন আছেন? বহুদিন বাদে আমার দপ্তরে আপনার পায়ের ধুলো পড়লো। অনিমেষ হালকা হেসে একটা কাগজ এগিয়ে দিল শুভময়ের দিকে, শুভময় দেখলো একটা কবিতা, বলল এই জন্য নিজে এলেন! অনিমেষদা চা কফি কিছু খান। অনিমেষ বললো এই বছর চারুলতার পুজো সংখ্যাতে অনিমেষ রায় উপন্যাস লিখবে, কবিতাটা রেখে দাও বলে নাটকীয় ভঙ্গীতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। হতভম্বব শুভময় কবিতাটা পড়তে থাকলেন, মাত্রা বৃত্তে পাঁচের চালে লেখা। একবার পড়লেন, দুবার পড়লেন, বারবার পড়লেন। তারপর ইন্টারকমে কবিতা বিভাগের সম্পাদক অতনু লাহিড়িকে বললেন এই শনিবারের কবিতার পাতা তৈরি হয়ে গেলেও একটা কবিতা পাঠাচ্ছি ওটা ছাপবে, দরকার হলে অন্য কবিতা বাদ দেবে।

 

দুই

টিফিন এর সময় টিচার্স রুমে তনিমা চারুলতায় অনিমেষের কবিতাটা পড়লেন। বহু দিন বাদে চারুলতায় অনিমেষের লেখা বের হয়েছে, মানুষটা আর ইদানিং লিখতে পারে না, সেটা তনিমার মতন অভিজ্ঞ পাঠিকার বুঝতে অসুবিধা হয় না। এই কবিতাটা অন্য জাতের, যেন পঁচিশ তিরিশ বছর আগের অনিমেষ, বয়স আর মেদ ঝরিয়ে ফিরে এসেছে। সেদিন বাঙলা একাডেমির সামনে অনিমেষকে দেখলেন, কি মোটাই হয়েছে। অনিমেষ তনিমাকে দেখেনি, নাকি না দেখার ভান করেছিল? অবশ্য তনিমার তাতে কিছু এসে যায় না, নিজেও চট করে সরে গেছিলেন। অথচ এই অনিমেষকে তিনি কি দেননি! কলেজের সেই দিনগুলোতে অনিমেষ তনিমার সাহায্য ছাড়া এক পাও চলতে পারত না। অনিমেষের লেখার হাত ছিল, কিন্তু বানান ভুল করত খুব, হাতের লেখাও ভাল ছিল না। তনিমা সব বানান ঠিক করে দিতেন, পরিষ্কার করে লিখে, ডাকবাক্সে ফেলে আসতেন পত্রিকার দফতরে পাঠানোর জন্য, অনেক সময় সশরীরেও পত্রিকা অফিসে চলে যেতেন লেখা জমা দেবার জন্য। অনিমেষ শুধু লিখেই খালাস হত, জানত তনিমা তার নিজের থেকে তার লেখার অনেক যত্ন করবে। নিজের লেখালেখিও একসময় জলাঞ্জলি দিয়েছেন অনিমেষকে বড় লেখক বানাতে। শুধু লেখার জন্য সাহায্য! অনিমেষকে তিনি কী দেননি! অনিমেষকে যখন বিয়ে করলেন, তখন অনিমেষের সবে একটা উপন্যাস বেরিয়েছে, ভাল রিভিয়্যু পেয়েছে, এইটুকুই। চাল চুলোহীন ছেলেটাকে স্বভাবতই তনিমার বাবা মা মানতে পারেননি, তনিমার বাপের বাড়ি পাঁচ পুরুষের বনেদী ব্যবসায়ী। প্রায় এক কাপড়ে অনিমেষকে বিয়ে করে অশোকনগরের এক কামরার ভাড়া করা ঘরে উঠে এসেছিলেন। তার স্কুলের চাকরিটাকে শুধুমাত্র সম্বল করে। অনিমেষকে বলেছিলেন সংসার চালানোর ভার আমার, তোমার কাজ লেখা। অনিমেষ সেসময়ে লিখেছেনও, প্রথম পাঁচটা বছর একটার পর একটা উপন্যাস আর কাব্যগ্রন্থ। আস্তে আস্তে নাম হয়েছে, রয়্যালটির টাকা আসতে শুরু করেছে। এই সময় তনিমা সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়লেন। ঘর বাইরে একা সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ছিল, তবুও তিনি অনিমেষকে সংসারের জোয়াল টানতে দেননি। তারপর যখন মিঠুর জন্ম হল, তখন চারুলতাতে বেরোতে আরম্ভ করেছে অনিমেষের ধারাবাহিক উপন্যাস, ‘একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু’। তনিমার স্বপ্নের অপমৃত্যুরও সেই শুরু।

‘একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু’ অনিমেষকে এনে দিল বড়ো পুরস্কার। আর কেউ না জানুক, অনিমেষ তো জানে ঐ পুরস্কারের পেছনে তনিমার অবদান কতটা। বর্ষীয়ান পরিচালক সলিল সেন উপন্যাসটা নিয়ে শুরু করলেন ছবি বানাতে, নায়িকা সুনেত্রা দাশের সঙ্গে এইসময় থেকেই ঘনিষ্ঠতার শুরু অনিমেষের, চিত্রনাট্য নিয়ে সলিলবাবুর সঙ্গে কাজ করবার অজুহাতে প্রায়ই অনেক রাত করে বাড়ি ফিরত অনিমেষ, মদ ধরেছিল, তারপর মাঝে মাঝে রাতে ফিরতই না। কাগজে কাগজে অনিমেষ সুনেত্রার সম্পর্ক নিয়ে জোর গুঞ্জন শুরু হল, সুনেত্রার গল্ফ গ্রীনের ফ্ল্যাটে নাকি রাত কাটায় অনিমেষ। মিঠুর প্রতিও কোনও কর্তব্য করত না অনিমেষ, বাইরের লোকের মতন গাল টিপে আদর করেই দায় সারতো যেন। মিঠুর ভাল নাম অরুণিমা রাখা অনিমেষের মেয়ের প্রতি একমাত্র অবদান।মেয়েটা বড় হচ্ছিল এজমালি উঠোনে বাড়ির আর কয়েক ঘর ভাড়াটেদের আদরে ও সহযোগিতায়, নয়তো তনিমা সামলাতে পারতেন না। অনিমেষ যখন ডিভোর্সের কথা বললো তখন তনিমা দ্বিরুক্তি করেননি, একটা মৃত সম্পর্ক টেনে যাওয়ার মানে হয় না, তনিমার খারাপ লেগেছিল লেখক অনিমেষের মৃত্যুতে। অনিমেষ লেখার টেবিলে তখন নিয়মিত বসাই বন্ধ করে দিয়েছে, যা লিখছে চর্বিত চর্বণ। মেয়ের দাবি নিয়ে অনিমেষ উচ্চবাচ্য করেনি।

সেই মেয়ে এখন কলেজে পড়ছে। তনিমা মেয়ে একটু বড় হবার পর থেকেই আবার নিজের লেখালেখি শুরু করেছেন, যা একদা বিসর্জন দিয়েছিলেন অনিমেষের জন্য। তার প্রবন্ধ এবং গ্রন্থ সমালোচনার সুনাম আছে। চারুলতার সম্পাদক শুভময় বোস তনিমার লেখার বিশেষ কদর করেন, তবে তনিমা কখনও অনিমেষের বই এর রিভিয়্যু লেখে না। এখন স্কুলে তিনি অ্যাসিসট্যান্ড হেড মিসট্রেস, লেখা থেকেও কিছু আয় হয়, ইচ্ছে করলেই কোনো ফ্ল্যাট কিনে চলে যেতে পারেন, তবু রয়ে গেছেন অশোকনগরের সেই ভাড়া বাড়িতেই। ওখানকার বাসিন্দারাই তার আত্মীয়, অরুণিমা তো ওদের কাছেই বড়ো হয়ে গেল।

 

তিন

সকালেই অনিমেষ কাগজে বিজ্ঞাপনটা দেখলেন, চারুলতার এবারের শারদ সংখ্যার বিশেষ আকর্ষণ অনিমেষ রায়ের উপন্যাস। শুভময় বোস ঝুঁকিটা নিয়েছে, মাহেন্দ্রক্ষণ চিনতে ভুল করেনি। স্কচের বোতলটা টেনে নিয়ে গ্লাসে ঢেলে বরফ মেশালেন, তারপর লম্বা একটা চুমুক দিয়ে নিজেকেই বললেন চীয়ার্স। সুনেত্রা কী একটা সিরিয়ালের স্যুটিংএ কলকাতার বাইরে, এখন আর সিনেমায় ডাক পায় না, সিরিয়ালগুলোই ভরসা। অনিমেষ সুনেত্রার কোনও ছেলে মেয়ে হয়নি, ওরা কেউই চায়নি। সুনেত্রার আগের পক্ষের মেয়ে বিয়ে করে এখন অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী।

নেকড়েটাকে চিনতে পারলেন অনিমেষ, ‘ডেভিল’ অরণ্যদেবের নেকড়ে। তারমানে অরণ্যদেবও আশেপাশে আছেন। ওকে কি একটা বিস্কুট দেবেন? নেকড়ে কি বিস্কুট খায়? নেকড়েটা ডেনকালির খুলি গুহার দিকে এগোতেই অনিমেষ পিছু নিলেন, খুলিগুহাতেই সিংহাসনে অরণ্যদেব বসে থাকেন, কিন্তু অনিমেষের দরকার বাচ্চা মেয়েটাকে, ওকে একটা ক্যাডবেরি দিতে হবে, কেনা হয়নি, মনে হল কোনোদিনই ক্যাডবেরিটা কেনা হয়নি, অথচ কেনার কথা ছিল। অরণ্যদেবের থেকে ক্যাডবেরিটা চেয়ে নিলে হয়, কিট আর হেলোয়েজের জন্য নিশ্চয়ই রাখা থাকে। খুলিগুহার ভেতরটা হঠাৎ একটা শ্যাওলা ধরা উঠোন পেরিয়ে গিয়ে একটা ইঁট বার করা দেওয়াল টালির চাল দেওয়া ঘর হয়ে গেল, এতদিন চিনতে পারেননি আজ বেশ চেনা চেনা লাগলো। একফালি বারান্দায় একজন যুবতী বউ রান্না করছে, বাচ্চাটা তার আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে, একটু বড়ো হয়ে গেছে। অনিমেষের পায়ের আওয়াজ পেয়ে বউটা মুখ ফিরিয়ে তাকালো, সেই মুখ বাঙলা একাডেমির সামনে কদিন আগে দেখেছিলেন, সেই প্রখর ব্যক্তিত্ব, শুধু বয়সটা কমে গেছে। “তুমি জানো তনিমা আমি কখনও তোমার সামনে স্বস্তি বোধ করতাম না, অনিমেষ রায় ডাকসাইটে লেখক হীনমন্যতায় ভুগত। তনিমা তুমি মিঠুকে একবার আমার কাছে দাও, আমি ভুলিনি দেখো, ওর অরুণিমা নামটা মনে আছে। তনিমা তুমি কি আমাকে এখনও ঘৃণা করো?” তনিমা কোনও জবাব দেয় না, তার দৃষ্টিতে ঘৃণা বা করুণা কোনোটাই ফুটে ওঠে না। অনিমেষ মিঠুর কাছে যাবার জন্য পা বাড়াতেই ডেভিল চাপা গর্জন করে তেড়ে আসে, আর অনিমেষ পা পিছলে ডেনকালির জলপ্রপাতের মধ্যে তলিয়ে যেতে থাকে।

 

হাবুডুবু খেতে খেতে অনিমেষ দেখলো শুভময় বোস একটা রাবারের ভেলা নিয়ে ভেসে যাচ্ছে, অনিমেষ বললো শুভময় আমি তলিয়ে যাচ্ছি, আমাকে তোমার ভেলায় তুলে নাও, শুভময় বললো টিকিট লাগবে অনিমেষদা, উপন্যাসটা দিন নয়তো আপনি এমনিই ডুবে যাবেন, এই ভেলায় উপন্যাসের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। সেইসময় অনিমেষের মোবাইলটা বাজতে থাকে, পকেট হাতড়াতে গিয়ে অনিমেষের মনে পড়ে, মোবাইলটা সে লেখার টেবিলে ফেলে এসেছে, অনিমেষ হাবুডুবু খেতে খেতে টেবিলে উঠে এসে দেখে শুভময়ের ফোন, ফোনটা ধরেই শুভময়কে বলে ওঠে বিজ্ঞাপনটা দেখেছি আর টিকিটটা আমি পেয়ে গেছি শুভময়। বলেই ফোনটা কেটে দিল।

একটা টালির চালের ইঁট বার করা ঘর, এক ফালি বারান্দায় একজন মা রান্না করছে, তার আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে একটা বাচ্চা মেয়ে, বাচ্চাটার মুখটা ঠিক স্পষ্ট হচ্ছে না, ডেভিলের অবিশ্বাস কেটে গেলেই মুখটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। অনিমেষ জানে একটা সফল উপন্যাসের গন্তব্যটাই আসল, সেই গন্তব্যে পৌঁছোনোর টিকিট সে পেয়ে গেছে, অনিমেষ যাত্রার জন্য তৈরি হয়,রিক্ত হাতে পূর্ণতার খোঁজে।

 

পরমার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top