দু:সহ স্মৃতিতে ২০২০ ও সুন্দরের বারতায় ২০২১ : অনজন কুমার রায়


প্রকাশিত:
৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:১৭

আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০১:৩০

 

সময়ের আবর্তনে পাল্টে যায় বহমান গতিধারা। আশা-নিরাশার দোলাচলে জানান দেয় নতুন বছরের আগমনী বার্তা। চাওয়া-পাওয়ার নৈরাশ্য কষ্টের ব্যাপ্তি প্রকাশ করে। আবার প্রত্যাশিত প্রাপ্তি মনকে আন্দোলিত করে। তেমনি ২০২০ সালটিও বদলে দিয়েছে আমাদের অনেক কিছু। বছরটিকে ঘিরে দু:সহ যাতনার গ্লানি পোহাতে হয়েছে বারবার। তাই ২০২০ সালটা কেমন যেন এক ঐকতান বিহীন বেরসিক জীবনের আঁধারেই নিমজ্জিত থেকে যায়।

 

ফেলে আসা বছরের আনন্দঘন মুহূর্তকে সবাই হৃদয়ে ধারণ করে, দু:সহ যাতনাকে পেছনে ফেলে যাওয়ার প্রত্যয়ে থাকে। তাই হয়তো পেছনে ফিরে ভেসে আসে পুরনো দিনের স্মৃতি। নতুন বছরের আগমনী বার্তা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় দ্বারকে উন্মোচিত করার প্রয়াস থাকে। নেতিবাচক কালের যাত্রায় ধ্বনিত হয়ে আসে গ্লানিকর মুহূর্তের দু:সহ যন্ত্রনার হাতছানি দিয়ে। অস্পৃশ্যতার নগ্ন চেহারা ধারণ করলে এক ভয়ার্ত হৃদয়ের ক্রন্দনই অনুভূত হয়। যাতনায় ধেয়ে আসে পুরনো দিনের দু:সহ স্মৃতি। জানান দেয় ভয়াভহতার স্তব্ধ করা দিনগুলি। বিষাদময়তায় ক্লিষ্ট যাতনায় ঢাকা পড়ে যায় পুরাতন বছরের সুখকর মুহূর্তগুলো! তবে, অনিন্দ্য সৌন্দর্য্যের বিমোহিত মুহূর্তই শ্রেষ্ঠ সময়ের সুখকর বার্তা বয়ে নিয়ে আসে।

 

২০২০ সালটির প্রথম থেকে নিস্তব্ধতার আঁধারে মোড়ানো না থাকলেও শেষ হয়েছে আঁধারের ঘনঘটায়। বছরটির শুরুতে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ চীনে ছড়িয়ে পড়লেও মনে তেমন শঙ্কা তৈরি করেনি। কিন্তু আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে মহামারীর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কিত মুহূর্তটুকুই বার বার পেছন ফিরে ভেসে আসে। তাড়া করে বেড়ায় শঙ্কিত সময়। কঠিন সময়টুকু পার করতে হয়েছে অস্পৃশ্যতার মাঝে। লকডাউন শব্দটির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে সেই কঠিনতর সময়ের মাঝে।

 

সবকিছু স্বাভাবিকতার মাঝেই শুরু হয়েছিল ২০২০ সাল। সবার আশা ছিল সুন্দরের প্রতীক্ষায়। সবই যেন ছাপিয়ে যায় মহামারীর বিরুপতায়। অতি আপনজনদের হারিয়ে কারো কারো পরিবারে

বিস্মৃতির অকাল থাবা নেমে আসে। কারো মনে জায়গা করে নিয়েছে নিকষ কালো জীবন। তারপরও খুঁজে ফিরে সুন্দরের প্রতিধ্বনি। মাঝে মাঝে দেখতে পেয়েছি আঁধারের অতলে হারিয়ে গিয়েছে অসংখ্য ভালবাসার স্থান। কেউ কেউ রিক্ত হস্তে ধারণ করে এখনও ভালবাসার স্মৃতিময় প্রহর। বার বার বেদনাহত হয়ে আসে মহামারীতে ফেলে আসা আতঙ্কিত দিনগুলো।

 

পুরনো বছরের আবেগ অনুভূতির মিশেলে মানবিকতা স্থান করে নিয়েছে আতঙ্কিত দিনগুলোর মাঝেও। কেউ কেউ মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অস্পৃশ্যতাকেও পাশ কাটিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন মানব কল্যাণের নিমিত্তে। সে হিসেবে এ বছরটি আমাদের মানব কল্যাণে নবজন্ম লাভে উৎসাহ যুগিয়েছে বলা চলে। লকডাউনের মাঝেও তাদেরকে হার মানতে দেখিনি। প্রবাসীদের কথা বলতে গেলেও প্রসংসার দাবিদার বলা চলে। প্রবাসীরা কঠিন সময়ের আবর্তনে রেমিট্যান্স প্রেরণ অব্যাহত রেখেছেন। যা আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালণ করে। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। সেক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান প্রশংসার দাবিদারই বলা চলে।

 

এছাড়াও আমাদের মনে বিষমতার ছাপ ফেলে নেতিবাচক কিছু ঘটনার প্রভাবে। ধর্ষণের মতো কিছু ঘটনা শুধু আমাদের মনে নয়, গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে আতঙ্কিত করে তুলে। ফলে আমরা দেখতে পাই বিদগ্ধ জাতির নিষ্প্রভ চেহারা। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় বর্তমান সরকারের সফলতার অন্যতম নিদর্শন বলা চলে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদের কালো থাবায় নিষ্পেষিত হয়ে আসে ফ্লয়েডের জীবন। ফলে, কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার সরব প্রতিবাদও দেখতে পাই সেখানে। আশা করতেই পারি, বর্ণবাদের বিভাজন কিছুটা হলেও দূরে সরে যাবে।

 

তবে বছরটিতে অনেক সুন্দর কিছু ঘটনার অবতাড়না করে। ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ানো একটা গতানুগতিক রীতিতে পরিণত হয়েছিল। সেটার পরিসমাপ্তি না হলেও অন্তত ব্যাপ্তি কমেছে। লাগাম টেনে দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মতো ভীতিকর পরিবেশ থেকে। মনে হয়, এ বছরই কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা ভীতিকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা না নেয়া যে কতটুকু সুখকর তা শুধু শিশুদের মানসিক অবস্থাই জানান দেয়! সবকিছু ছাপিয়ে নতুন দিনের প্রত্যাশায় দিন গুনি। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে চেষ্টা করি মহামারীর সংক্রমিত দিনগুলোর মাঝেও। আমাদের দেশের মানুষও স্বপ্ন দেখতে জানে পদ্মাসেতু নির্মাণের। তাই; আমরাও পারি পদ্মা সেতুর মতো কোন বৃহৎ কাজের অংশীদার হতে। তাই হয়তো স্বপ্ন বুনন করি আগামীর পথচলায়।

 

যেন একটি সুন্দর সকালের অপেক্ষায় থাকি। আঁধারের গ্লানি মুছে গিয়ে ২০২১ সালটি সৌন্দর্য্যের আলোয় আলোকিত হয়ে আসবে নব ছন্দে। নতুন বছরের নতুন প্রহরটুকু শুরু হবে সুন্দরের ঐকতানে। দেখতে যেন না পাই মলিনতায় বিস্মৃত হয়ে আসা মহামারীর আঁধারে ডুবন্ত সমাজ। ক্ষণিকের তরে আঁধার দূরীভূত হয়ে কেটে যাবে ঘোর অন্ধকার। স্নিগ্ধ আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আসবে নতুন দিনের প্রত্যাশায়। জানান দিবে নতুন দিনের শুভলগ্নে নতুনত্বের আগমনে। আবারও দেখা যাবে অবারিত সৌন্দর্য্যর পথচলায়। যেখানে কেটে যাবে ঘোর অমানিশার আঁধার, নিস্তব্ধতার আঁধার ভেঙ্গে জেগে রবে প্রিয় মানুষটির পাশে। মলিনতার ভারে ন্যুজ হয়ে অন্ধকারে ডুবে থাকবে না দূরন্ত ছেলেরা। আবারও গান গাইতে মাঠে নামবে কৃষকেরা। সকাল বেলায় স্নিগ্ধ কুয়াশায় মনের মাঝে এক বুক আশা জাগানিয়া সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিকেলে একদল ছেলেরা ফুটবল খেলায় মত্ত থাকবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যমে প্রিয় পাঠশালায় গমণ করবে। নব ছন্দে জানান দিবে বিদ্যালয়ের আঙিনায় পুরাতন স্মৃতি। হয়তো স্কুলে গিয়ে দেখতে পাবে ঝরা পাতা বারান্দায় বিছিয়ে আছে শিক্ষার্থীদের আগমনী বারতায়। তাই, আশার আলোয় শুরু হবে নতুন দিনের পথচলা। প্রত্যাশিত ২০২১ সালটি হবে আনন্দময়, ক্রন্দনরোলে বয়ে যাবে না আতঙ্কিত মুহূর্তটুকু।

 

ভাবি, কখনো আকাশটা মলিনতায় ভরপুর থাকে। তারাগুলো মাঝে মাঝে হারিয়ে যায়। কখনো বা একপেশে মেঘলা আকাশ প্রশান্তিতে ভরিয়ে তুলে। আবার; স্নেহাসিক্ত সকালের শিশির আমাদের ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করে। সকালে দু'একটা বক আকাশে উড়াল দিয়ে ভোরের আগমন জানান দিবে। তাই পুরনো দিনের স্মৃতি সংবরণ করতে মনের বেহাগ সুরে বলি, কি করে বুঝাই মনটা আজ বড়ই মাতাল।

 

 

 

অনজন কুমার রায়

ব্যাংক কর্মকর্তা লেখক



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top