না-বলা গল্প : অমিতা মজুমদার
প্রকাশিত:
১৮ জানুয়ারী ২০২১ ১৯:১৯
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০১:১৬
শিশিরের গ্রামের বাড়িতে একটা কাঠবাদামগাছ ছিল। ছোটবেলায় বাদামগাছটা শিশিরের কাছে ছিল এক আশ্চর্য রহস্যে ঘেরা। বাদামগাছটা বসন্তের শেষে যেমন সবুজ পাতায় ছেয়ে যেত সাথে মুকুলও আসত। তারপর সেই মুকুল ঝরে গুটি গুটি বাদাম ধরতো। বাদামগুলো সবুজ পাতার সাথে মিশে থাকত, বোঝাই যেতনা। একটু একটু করে বাদামগুলো পরিণত হতো, আর তাদের রঙ বদলে যেত। একসময় লালচে হলুদ রঙের বাদামগুলো দূর থেকে পাখিদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসত। পাখিরা বাদামের উপরের রঙীন আবরণ ঠুকরে ঠুকরে খেত আর সেই আঘাতেই একসময় বাদামগুলো নিচে পড়ত। নিচের কাদাজল থেকে শিশির ও তার বন্ধুরা বাদামগুলো কুড়িয়ে এনে দা দিয়ে কেটে ভেতরের বাদাম খেত। শীতের শেষে বাদাম গাছের পাতাগুলোর কেমন রঙ বদলে যেত। ফলের মতো প্রথমে হলুদ পরে লাল সবশেষে ঝরে পড়তো।
শিশির বর্ষাকালের মেঘলা বিকেলগুলোতে ঘরের দাওয়ায় বসে পলকহীন চোখে চেয়ে থাকত বাদাম গাছটার দিকে। মনে হতো রাজ্যের মায়া যেন জমে আছে ওই বাদামগাছটায়।
এস এস সি পাশের পর শিশির দূরের শহরের কলেজে পড়তে গেল। হস্টেলে থেকে পড়ে। কলেজ ছুটি হলেই বাড়িতে আসে।বাদাম গাছটার জন্য আর তেমন মায়া অনুভব করে না। বিশেষ করে বর্ষাকালে। কেমন বিশ্রী কাদা থাকে,ওখানে যেতে হলে পায়ের স্যান্ডেল খুলে যেতে হয়। শহরের জীবনে একটু একটু অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে শিশির। তাই গ্রামের জলকাদায় ভরা পথ, আমগাছে ঘুঘু পাখির বাসা, কিংবা নারিকেল গাছে টিয়ে পাখির ছানা নামানোর আয়োজনে খুব একটা মন টানে না। কেবল বাদাম গাছটার কথা কেন যেন মনে পড়ে মাঝে মাঝে। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সেবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার যাবে ঠিক করেছে। শিশিরের হাত একেবারে খালি। বাবা নিয়ম করে প্রতিমাসে যে টাকা পাঠায় তা দিয়ে খুব কষ্টে চলে শিশির। বন্ধুদের বুঝতে দেয় না। নিজে একটা টিউশনি করে তাই দিয়ে বাড়তি খরচ চালায়। কক্সবাজার তো ঘুরে আসে কোনরকমে, এসেই পরীক্ষার টাকা জমা দেয়ার নোটিশ পায়। কি করবে ভেবে না পেয়ে বাবাকে আবার চিঠি লেখে কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে বলে। বাবা সময়মতো টাকা পাঠায়।পরীক্ষাও দেয়। পরীক্ষা শেষে বাড়ি যায়। বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। হঠাৎ খেয়াল করে, বর্ষাকালে সবুজ পাতায় ছাওয়া সেই বাদাম গাছটা আর নেই। মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে,সেটা বিক্রি করেই বাবা টাকা পাঠিয়েছিল।
অমিতা মজুমদার
কবি ও কথা সাহিত্যিক
বিষয়: অমিতা মজুমদার
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: