সিডনী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

শাখা - সিঁদুরঃ শক্তি না কি শক্তি প্রয়োগ? : রীনা ঘোষ


প্রকাশিত:
২৫ মার্চ ২০২১ ১৮:৪৪

আপডেট:
১৫ এপ্রিল ২০২১ ২১:১৪

 

শাখা সিঁদুর কি নারীর সতীত্ব নির্ণায়ক? একটি রঞ্জক পদার্থ কারোর বা কোনো জাতির পরিচয় হতে পারে কি? সামুদ্রিক শামুক কি কারোর আয়ু বৃদ্ধিতে সক্ষম? এখন হয়তো সবাই বলবেন 'না'। কিন্তু যখনই আলোচনায় বিষয় জানতে পারবেন তখন সকলের উত্তর 'হ্যাঁ' তে রূপান্তরিত হবে। কারণটা কি জানেন ? আমাদের ভিতরে থাকা কুসংস্কার।

লেখাটা ভীষণ ভাবে সমালোচিত হবে জেনেও লেখা। কারণ আমি বিশ্বাস করি - কোনো বিষয়  সম্পর্কে কোনরকম ধারণা জন্মালে ধারনাকারীর  সম্পূর্ণ অধিকার আছে সেটি সকলের সামনে তুলে ধরার। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখানোর চেষ্টা একটা চ্যালেঞ্জও বলতে পারেন। যা সম্পূর্ণ নিজের সাথে নিজের প্রতিযোগিতা।

সিঁদুর - লাল রং শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক। কার প্রতি ভালোবাসা? আর কাকেই বা ধরে রাখা বা সুস্থ রাখার শক্তি? সবাই এক নিঃশ্বাসে বলবে - "স্বামী"। বিবাহিতা সধবা স্ত্রীর অন্যতম প্রধান কর্তব্য তার স্বামীর মঙ্গল কামনায় সিঁদুর পড়া এবং উল্টো দিক থেকে বললে কথাটা দাড়ায় - কোনো নারী বিবাহিত কিনা তার বাহ্যিক চিহ্ন এটি। তাহলে বিবাহিত পুরুষের বাহ্যিক চিহ্ন কোথায়? অনুরূপ ভাবে শাখা এবং পলা নাকি স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় পড়ে থাকে কিন্তু পুরুষরা? বহু প্রাচীন এই নিয়ম তাই সেই কালে নারী পুরুষ সাম্য আশা করা বৃথা, আর তাই সেইসময় কোনো নারী এই প্রশ্ন করার সাহস করেছিল কিনা ঠিক জানা নেই।

কিন্তু আমাদের দেশ স্বয়ং সম্পূর্ণা। তাই নানা মুনির নানা মত তো থাকবেই। নারী সিঁথিতে সিঁদুর পড়ার মূল কারণ নাকি অন্য । সিঁদুর ঊর্বরা শক্তির প্রতীক, সৃষ্টির প্রতীক - আর নারী যেহেতু সৃষ্টিকর্তৃ সেহেতু এর অধিকার একমাত্র নারীদেরই। এখানেও সিঁদুর মানে শক্তি কিন্তু এই শক্তি নারীদের বল হিসাবেই পরিচিত। অপরদিকে শাখার সাদা রং পবিত্রতা, শুদ্ধতা আর সতীত্বের প্রতীক । কিন্তু এই বিজ্ঞানের যুগে এর সঠিক প্রমাণ বা ব্যাখ্যা কোথায়?

তৃতীয় কারণ হিসাবে দেখতে পাই - নারী হল পুরুষের সম্পত্তি। বাবার থেকে হস্তান্তরিত হয়ে যখন স্বামীর ঘরে যায় তখন এই লাল রং চিহ্ন হিসাবে এঁকে দেওয়া হয় কপালে। কখনো বা আবার বলপূর্বক নারী বিজয়ের পর শক্ত পাথর দিয়ে কপালে করে দেওয়া হয় ক্ষত এবং সেই ক্ষত চিহ্ন থেকে রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়ত । সুস্থ সমাজে এটা কি কোনো শুভ নিদর্শন হতে পারে, যার গোড়ায়ই গলদ আছে? পলা নারীর মনোবল , ধৈর্য্য আর সাহস বৃদ্ধি করে কিন্তু এগুলোর প্রয়োজন পড়ে কেন? নতুন জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নিতে আর মেনে নিতে পলাই সাহায্য করে । আমার প্রশ্ন মেয়েদেরই কেন মেনে আর মানিয়ে নিতে হয়? পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীজাতিকে নিজেদের আয়ত্ত্বে রাখতে বাঁধন স্বরূপ এই শাখা পলা আর সিঁদুরের বন্ধনে আবদ্ধ করে আসছে সেই প্রাচীন কাল থেকে।

সিঁদুর সম্পর্কে আমি যা অবগত হয়েছি তাতে এটি হল একটি রাসায়নিক পদার্থ, যার নাম -

মারকিউরিক সালফাইড (HgS)। কপালে বা সিঁথিতে সিঁদুর পড়লে ওই স্থানের নার্ভ শান্ত রাখে এবং পিটুইটারি গ্রন্থির কার্যক্রমে পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করে। বৈজ্ঞানিক মতে শাখা শরীর ঠান্ডা রাখে, তাই রাজস্থানের মেয়েরা একের অধিক শাখা পড়ে। আর জ্যোতিষ মতে পলা স্বাস্থহানী ও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে। আমার কাছে সিঁদুর এবং শাখা ও পলা অন্যান্য মনোহারী দ্রব্যের মতোই সাধারণ কিছু সরঞ্জাম বৈ বিশেষ কিছু নয়।

আমার পরিবারে মা কাকিমা সকলেই শাখা - সিঁদুর পড়েন। প্রাচীন মত আর রীতি মেনে হয়তো আমাকেও পড়তে হবে কোনো একদিন। কিন্তু আমার কাছে এর মাহাত্ম্য বা ব্যাখ্যা হয়তো আজকের মতোই সামান্য ও অপরিবর্তিতই থাকবে। সত্যিকারের ভালোবাসা এবং হৃদয়ের টান থাকলে কাছের মানুষের মঙ্গল কামনা এমনিই হয়। তার জন্য শাখা সিঁদুরের মত বাহ্যিক অলঙ্কারের প্রয়োজন খুব একটা পড়ে না বলেই আমার মনে হয়।

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

 

রীনা ঘোষ
কলকাতা, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা


বিষয়: রীনা ঘোষ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top