পহেলা বৈশাখের উপলব্ধি ও প্রত্যয় : সাইফুর রহমান কায়েস
প্রকাশিত:
১৪ এপ্রিল ২০২১ ২২:০৩
আপডেট:
১৫ মার্চ ২০২৫ ০১:৩১
ইন্দ্রানী সেনের গানের সুরে ধ্বনিত হোক, এক বৈশাখে হলো দেখা
জষ্ঠিতে পরিচয়
আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির প্রধানতম উৎসব পহেলা বৈশাখ। আবার ফিরে এসেছে বৈশাখ বাংলা মায়ের আচল জুড়ে। আবহমানকাল ধরে পালন করে যাওয়া সংস্কৃতি রীতিমতো একটা রিচুয়ালের অবয়ব পেয়ে গেছে। এর সাথে বাঙালির আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। ভাববেন না আবার দেবর ভাবীর মতো সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের পালাপার্বণ শুধু যাপনের যে তাই কিন্তু নয়, উদযাপনেরও বিষয় আশয়। নতুনের সাথে পুরাতনের মিলন, দেখাদেখি, পুরাতনের বিদায় ও নতুনেরে বরণ করে নেবার তাগাদা ও তাগিদ দুটোই থাকে।
বৈশাখ এলেই শৈশব ফিরে আসে। শৈশবের অনেক কিছুই আমাদেরকে মথিত করে। এটি একটি আবেগেরও বিষয়।
নতুন বছরকে ঘিরে সাংবাৎসরিক চাষাবাসের যন্ত্রপাতি কেনা, ঘরের খাবার কেনা, চাটাই, তুলা, তরমুজ, খৈ, উখড়া, দই, মাঠা, কাঠালকুশি, বিরুণ চালের ভাত খাওয়া, নিশিন্দা পাতা খাওয়া- নিরোগ জীবনের জন্য। আত্মীয়পরিজনদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করা, তাদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়াসহ এক অপার আনন্দে বাঙালিজাতি মেতে উঠে।
কাল পহেলা বৈশাখ এবং পহেলা রমজান। ফলে এই জাতি উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে সংযম সাধনায় আত্মবিকাশকারী কোনো কিছুকেই প্রশ্রয় দেবে না। নিজেকে অনুসন্ধানে আরো বেশি ব্যপৃত হবে। তার সাংস্কৃতিক চেতনাকে মিইয়ে ফেলবে না।
উৎসব হচ্ছে সর্বজনীন। ধর্ম হচ্ছে ব্যক্তিক। ঈশ্বরের প্রতি নিজস্ব আনুগত্যের বিষয়। এর সাথে রাষ্ট্রকে গুলিয়ে ফেলা মোটেও সঠিক কাজ নয়। অথচ বিগত চল্লিশ বছরে রাষ্ট্র তার নিজস্বতা অর্জনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মানুষের ধর্ম থাকার বিষয়টি রাষ্ট্রের কব্জায় চলে যাবার ফলে অথবা রাষ্ট্র ধর্মের কব্জায় চলে যাবার ফলে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট ধর্মের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ফলে অন্য ধর্মের মানুষেরা রাষ্ট্রেরই মাধ্যমে উপেক্ষিত হয়ে রয়ে গেছেন। ফলে সকল ব্রত-কৃত্য-আচার যেখানে বহুমাত্রিক হবার কথা সেখানে একধরনের উন্নাসিকতাজাত দৃষ্টিভঙ্গির শিকার। ধর্মের দোহাই দিয়ে অন্য নাগরিকের বাড়িঘর লুট, জ্বালিয়ে দেবার মতো অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে দেখেছি আমরা খুব নিকট অতীতে। অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়, শ্মশান দখলের মতো নৈঃরাজ্যিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক লেবাস পরিয়ে এই দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকেই ক্ষুণ্ণমনা করার নগ্ন প্রয়াস আমরা চলতে দেখি।
আমাদের ইশকুলগুলো করোনার ফেরে পড়ায় ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের হার আশংকাজনক হারে বেড়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। ফলে আমাদের শিশুদের সাংস্কৃতিক রুচি, মর্জি ও মেজাজে ভাটা পড়ে গেছে। তারা হয় উঠছে শেকড়ছাড়া মানুষ। পহেলা বৈশাখ আমাদেরকে সে সুযোগটি গ্রহণের জন্য আহবান করছে। পহেলা বৈশাখ তাই একটি প্রত্যয়। কিংবা আমাদের আবহমান সাংস্কৃতিক প্রত্যয়ের আরেক নাম পহেলা বৈশাখ। আসুন এই পহেলা বৈশাখকে ঘিরে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শপথ গ্রহণ করি। মামুনুল হকের কয়টা বউ তা বিবেচ্য নয়। একজন ধর্মগুরুর অধঃপাতে যাবার বিষয়টি সকলের জন্য শিক্ষণীয় হোক। তার ভগ্ন, ভীরু, কমজোরি মনোভাবকে উপেক্ষা করার সময় এখনই। রাষ্ট্রীয় মদদে তার বহুগামিতা নিয়ে মঞ্চস্থ নাটকের কবর রচিত হোক। মামুনুল হক হুরের নেশায় চূর্ণ হয়ে যাক। এই জাতি একটি শ্বাসযতি ফিরে পাক।
সরকার বিষাক্ত সাপকে দুধকলা দিয়ে পোষার খেসারত দিচ্ছে এখন। তাই পহেলা বৈশাখ সরকারকে আবার শোধরানোর সুযোগ করে দিচ্ছে মৌলবাদকে না বলার। একে হাতছাড়া করলে পুরো জাতিকেই এর চরম মূল্য দিতে হবে।
পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা সকলকে। শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৮।
সাইফুর রহমান কায়েস
প্রধান সম্পাদক
শব্দকথা টোয়েন্যিফোর ডটকম
বিষয়: সাইফুর রহমান কায়েস
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: