সিডনী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

গৌতম বুদ্ধের জীবন ও বাণী আজও আমাদের পথ দেখায় : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
২৬ মে ২০২১ ১৮:৫২

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:১৫

ছবিঃ গৌতম বুদ্ধ

 

এই পৃথিবীর বুকে অনেক মহামানব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন গৌতম বুদ্ধ।
তিনি ছিলেন নেপালের শাক্য রাজবংশের রাজা শুদ্ধোধনের পুত্র। তাঁর মা, মায়াদেবী ছিলেন কোলিয় গণের রাজকন্যা। শাক্যদের প্রথা অনুযায়ী, এক ঘটনা ঘটেছিল।
এবার, সেই ঘটনার কথা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। গর্ভাবস্থায়, মায়াদেবী, শ্বশুরবাড়ি, কপিলাবস্তু থেকে, তাঁর বাবার রাজ্যে, যাবার পথে, অধুনা নেপালের তরাই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত লুম্বিনী গ্রামে, এক শালগাছের তলায়, গৌতম বুদ্ধের জন্ম দিয়েছিলেন।
শুদ্ধোধন, গৌতম বুদ্ধের জন্মের পঞ্চম দিনে, নামকরণের জন্য, আটজন ব্রাহ্মণকে জানিয়েছিলেন আমন্ত্রণ। তাঁরা শিশুর নাম রাখেন সিদ্ধার্থ। এর মানে হল, যিনি সিদ্ধিলাভ করেছেন।
কথিত আছে, উনত্রিশ বছর বয়সে, রাজকুমার সিদ্ধার্থ, রাজপ্রাসাদ থেকে, কয়েক বার ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। ভ্রমণে বের হয়ে, তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ, একজন অসুস্থ মানুষ, একজন মৃত মানুষ ও একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। সিদ্ধার্থ তখন ছিল সাংসারিক দুঃখ - কষ্ট সম্বন্ধে একদম অনভিজ্ঞ। তখন তাঁর সারথি, ছন্নকে, এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, ছন্ন, তাঁকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বলেন, যে, সব মানুষের নিয়তি যে, তারা একসময়, বৃদ্ধ, অসুস্থ হয়ে, মৃত্যুমুখে পতিত হবেই হবে।

সন্ন্যাসী সম্বন্ধে, ছন্ন বলেছিল, তিনি মানুষের দুঃখের জন্য, নিজের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য সব ত্যাগ করেছেন, তাই তিনি সন্ন্যাসী। সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হতে, শুরু করেন, এরপর থেকে তিনি। সিদ্বার্থ এক রাতে, ঘুমন্ত স্ত্রী, পুত্র ও পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে যান নিঃশব্দে।
প্রথমে, বুদ্ধদেব, আলার কালাম নামে, একজন সন্ন্যাসীর কাছে, যোগ শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। শরীরকে অপরিসীম কষ্টের মাধ্যমে, মুক্তিলাভ হয়, এই বিশ্বাসে তিনি, ও অন্য পাঁচজন তপস্বী, ছয় বছর ধরে, কঠোর কঠিন সাধনায় নিমগ্ন থাকেন। তিনি সুজাতা নারী নামে, এক স্থানীয় গ্রাম্য কন্যার কাছ থেকে এক পাত্র পায়েস বা পরমান্ন আহার করেছিলেন।

এর পরে, গৌতম বুদ্ধ, এক অশ্বত্থ গাছের তলায় গভীর ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি সেসময় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যে, সত্যলাভ না করে, তিনি এই জায়গা ছেড়ে কিছুতেই চলে যাবেন না।
এভাবে, উনপঞ্চাশ দিন ধরে, ধ্যান করার পরে, তিনি বোধি প্রাপ্ত হন। এসময়, তিনি, মানুষের জীবনে, দুঃখ ও তার কারণ এবং দুঃখ নিবারণের উপায় সম্বন্ধে, অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন, যা চতুরার্য সত্য নামে বিখ্যাত। তাঁর মতে, এই সত্য সম্পর্কে, জ্ঞানলাভ করলে, মুক্তি বা নির্বাণ লাভ হয়।
বোধিলাভের পরে, গৌতম বুদ্ধের সাথে, বলখ এলাকার দুই ব্যবসায়ীর, দেখা হয়েছিল। তারা তাঁকে মধু ও বার্লি নিবেদন করেন। এরাই হলেন গৌতম বুদ্ধের প্রথম সাধারণ শিষ্য। তিনি বারাণসীর কাছে, ঋষি পতনের মৃগ উদ্যানে যাত্রা করে, তাঁর সাধনার সময়ের, পাঁচ প্রাক্তন সাথী, যারা তাঁকে একসময় পরিত্যাগ করেছিল,
তাদের সাথে দেখা করেছিলেন।
তাদেরকে গৌতম বুদ্ধ তাঁর প্রথম শিক্ষা দান করেছিলেন, যা বৌদ্ধ ঐতিহ্যে, ধর্মচক্রপ্রবর্তন নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। এইভাবে প্রথম বৌদ্ধ সংঘ গড়ে ওঠে।
গৌতম বুদ্ধ সারাজীবন ধরে, গোটা মানবজাতিকে শুনিয়েছেন শান্তি ও অহিংসার বাণী। তাঁর প্রবর্তিত ধর্মের নাম হল বৌদ্ধ ধর্ম। যা আজ সারা পৃথিবীতে সমাদৃত।
গৌতম বুদ্ধের বাণীগুলি সত্যিই অসাধারণ! এবার আপনাদের সামনে তাঁর কিছু বাণী তুলে ধরছিঃ

১ - সবকিছুর জন্য মনই আসল। সবার আগে মনকে উপযুক্ত করো, চিন্তাশীল হও। আগে ভাবো তুমি
কী হতে চাও
২ - প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে, তার নিজের দুনিয়াকে স্বয়ং নিজে খোঁজার।
৩ - আনন্দ হলো বিশুদ্ধ মনের সহচর। বিশুদ্ধ চিন্তাগুলো খুঁজে খুঁজে আলাদা করতে হবে। তাহলে সুখের দিশা তুমি পাবেই।
৪ - প্রত্যেক অভিজ্ঞতা কিছু না কিছু শেখায়। প্রত্যেক অভিজ্ঞতাই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা আমাদের
ভুল থেকেই শিখি।
৫ - জীবনের প্রথম ভুল হওয়া মানেই এই নয় এটিই সবচেয়ে বড় ভুল। এর থেকে শিক্ষা নিয়েই
এগিয়ে যাও।
৬ - হাজারও খালি শব্দের থেকে ভালো সেই শব্দ, যেটা শান্তি নিয়ে আসে।
৭ - শান্তি মনের ভীতর থেকে আসে।

আজ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান হল এই বুদ্ধপূর্ণিমা। যা এক
অত্যন্ত পবিত্র দিন। এর পবিত্রতা যায় না ভাষায় ব্যাখ্যা করা।

আজ সারা বিশ্ব জুড়ে যখন যুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে, তখন, গৌতম বুদ্ধের জীবন ও বাণী আজও আমাদের পথ দেখায়, আজও দেখায়, তবে হ্যাঁ, ভবিষ্যতেও দেখাবে।

(তথ্য সংগৃহীত)


শিবব্রত গুহ
কোলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top