সিডনী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থ আলোচনা : ড. আফরোজা পারভীন


প্রকাশিত:
২৭ মে ২০২১ ২১:৩৮

আপডেট:
২৭ মে ২০২১ ২২:০৫

 

গ্রন্থের নাম: Being A Single Mother Professional In Bangladesh Hurdles and Hopes
গ্রন্থের প্রকৃতি: একটি আত্মনৃতাত্বিক সমীক্ষা (An Auto-ethnograph)
গ্রন্থকার: রোকসানা আক্তার রুপী (Rokhsana Akhter Rupee)
প্রথম প্রকাশ: ২০ ফাল্গুন, ১৪২৭; ০৫ মার্চ ২০২১
স্বত্ব: রোকসানা আক্তার রুপী
প্রকাশক: আদর্শ; ৩৮ পি কে রায় রোড; বাংলাবাজার
(দোতলা); ঢাকা-১১০০
প্রচ্ছদ: রহমান আজাদ
মুদ্রণ: আদর্শ প্রিন্টার্স
অনলাইনে বই পেতে: www. Rokomari.com/ www. Adarsha.com
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৮৮

আলোচনা:
Being A Single Mother Professional In Bangladesh একটি আত্ম-নৃতাত্বিক অভিজ্ঞান” একটি ব্যতিক্রমধর্মী গবেষণা গ্রন্থ। লেখক রোকসানা আক্তার রুপী তঁর শ্রমসাধ্য গবেষণামূলক গ্রন্থের উপস্থাপনায় এদেশের বাস্ততায় একটি সাহসী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন করেছেন। ৮৮ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে তার নিবিষ্ট গবেষণা এবং মননস্মিতির পরিচয় সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত। গবেষণার পটভূমি বাংলাদেশ। সঙ্গতভাবেই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাতেই গ্রন্থের পরিসর সীমিত। তবু যৌক্তিক কারণেই গবেষণাটি ও লব্ধ ফলাফল অন্যান্য অনেক দেশের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক।

গবেষণার মৌল লক্ষ্যই ছিলো বাংলাদেশে একক মায়েদের জীবনাচরণের বাস্তবতা বিশ্লেষণ। গবেষণা কর্মটির প্রয়াস ছিলো এমন মায়েদের শিক্ষা ও পেশাগত প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ। অন্য যেসব আর্থ-সামাজিক সমস্যা অথবা রাজনৈতিক বিষয় বিদ্যমান সেগুলিকেও সনাক্ত করা। এসব অন্তরায় যুগান্তরব্যাপী অন্ধত্ব এবং সংস্কার-কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ। যাবতীয় সংশয় এবং দ্বিধা-দ্ব›েদ্বর নাগপাশে তাদের জীবন গ্রন্থিবদ্ধ হয়ে থাকার বিষয়টি তুলে আনার প্রয়াসও এই গবেষণার লক্ষ্য ছিলো। একাকী মায়েদের জীবনের নিরন্তর সংগ্রাম আর ফলশ্রুতিতে জয়ী হয়ে আশা আর সম্ভাবনার দ্বারোদ্ঘাটন করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রত্যয়ও ব্যক্ত হয়েছে এ গবেষণায়। প্রতীয়মান হয়েছে যে, বিষয়টির সাধারণ এবং সামগ্রিক বিশ্লেষণ ব্যক্তি এবং সামগ্রিকভাবে বিস্তততর প্রেক্ষিতের উপরে আলোকসম্পাত করবে। 

একজন মা’এর একাকী বা নিঃসঙ্গ হওয়ার বহুবিধ কারণ থাকতে পারে। শাব্দিক অর্থে “সিঙ্গল মাদার” অর্থ অবিবাহিতা মা। তবে আমাদের সমাজে এর ভিন্নতর বাস্তবতাও বিদ্যমান। কোন মহিলা স্বামী হারিয়ে বিধবা হতে পারেন, কেউ স্বামী পরিত্যক্তা হতে পারেন। কেউ আবার দায়িত্বপালনে অক্ষম অথবা অনিচ্ছুকতার কারণে স্বামী থাকা সত্তে¡ও নিঃসঙ্গ বা একাকী থাকতে পারেন। প্রেক্ষিত যা-ই হোক একাকী মহিলাদের জীবন ক্লেশকর, প্রতিকূল এবং তুল্যতায় অধিকতর সংগ্রামমুখর। অবিবাহিতা থাকার চেয়েও নিঃসঙ্গ গর্ভবতীর জীবন অনেক কষ্টের। অধিকন্তু একজন অবিবাহিতা সবচেয়ে নিঃসঙ্গ আমাদের সমাজে। আমাদের সমাজে একজন বিধবা নারীর অনেকের কাছ থেকেই সমবেদনা, সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক সহযোগিতা, জীবনধারণে আনুকূল্য এবং কখনো কখনো স্বামীর চাকরীতে বহাল হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। আত্মীয় স্বজন এবং অন্যদের কাছ থেকেও সমর্থন প্রত্যাশা করতেই পারেন। পক্ষান্তরে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হলে সকল দায়ভার নারীর উপরে এসে পড়ে, সকল অভিযোগের তীর তার দিকেই নিক্ষিপ্ত হতে থাকে, সকল আনুকূল্য ও সহযোগিতা বঞ্চিত হয়, ক্ষেত্রান্তরে অন্তহীন কুৎসার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। এমনকি মানসিক কষ্ট লাঘবের/ নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকুও তার মেলে না। খুব কম ক্ষেত্রেই তিনি প্রাপ্য অর্থ পান। অনেক সময় পুনঃবিবাহ করার জন্য তার উপর পরিবার থেকে প্রবল চাপ আসতে থাকে। পৌনঃপুনিক চাপ/অত্যাচারে কখনও কখনও নিজ সন্তানদেরকে রেখেই তাকে দ্বিতীয়বার দার পরিগ্রহ করতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন সম্পর্ক সুফল বয়ে আনে না। মানসিক পীড়ন তার সাথী হয়ে থাকে। সন্তানেরা পিতৃ-মাতৃ স্নেহবঞ্চিত অবস্থায় বড় হতে থাকে। স্বাভাবিক শিশুদের মতো বড় হওয়ার সুযোগ তাদের থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই তারা রূঢ় প্রকৃতির, অস্থির এবং চূড়ান্ত বিপথগামী হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই উঠতি বয়সের এমন সন্তানরা এমনকি আত্মহত্যাও করে থাকে। খুবই বিরলক্ষেত্রে পুনঃবিবাহ করা মায়েরা তাদের পূর্বস্বামীর সন্তানদেরকে নিঃঙ্গতার অনুভব থেকে ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক জীবন প্রদান করতে পারেন। বা নিজেদের কাছে এনে রাখতে পারেন। এমন স্বামী খুবই কম পাওয়া যায় যিনি বা যারা স্ত্রীর আগের সংসারের সন্তানদের পিতৃ¯েœহে বুকে েেটনে নেন। পক্ষান্তরে এমন মায়েদের অনেকেই নিজেরাও দুর্বিষহ জীবনযাপনে পীড়িত হয়ে, আর্থিক সংকট, মানসিক সমর্থন এবং মানবিক সহানুভূতির অভাবে আত্মহননের পথ বেছে নেন অথবা মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হন।

বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীই মানবিক মৌলিক অধিকার বঞ্চিত। অনেক ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র নারী হওয়ার কারণেই তারা নিগৃহীত ও বঞ্চিত হন। কখনো এই বঞ্চনা-লাঞ্ছনা কন্যা, বোন হিসেবে, কখনো স্ত্রী হিসেবে। এভাবে নিগ্রহের এক পর্যায়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে তিনি নিজের মাঝেই একাকীত্বে বন্দী হন।

সাধারণভাবে পিতা মাতা কন্যাকে সযতেœ পরিচর্যা করে বড় করে তোলেন বিবাহোপযোগী করে তোলা পর্যন্ত। তারপর প্রেক্ষিত পরিবর্তিত হয়। যদিও এখন মেয়েদের উচ্চশিক্ষা বিস্তারের কারণে দৃশ্যপটে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বামীটি ভালো হলে বিবাহ পরবর্তী নারীর জীবনও সুখকর হয়। পক্ষান্তরে স্বামীটি রূঢ় এবং সদাচারী না হলে অশান্তির দহনে নারীকে পুড়তে হয় অহর্নিশ। বিবাহ বিচ্ছেদ হলে অবর্ণনীয় কষ্টকর সংগ্রামী জীবনে নেমে পড়তে হয় নারীকে। বিবাহ বিচ্ছেদ হলে নারীকে প্রতি পদে প্রমাণ দিয়ে চলতে হয় তিনি সৎ,কোন স্খলন ঘটেনি তার। সন্তান না থাকলে আরও দুঃসহতর হয়ে পড়ে যাপিত জীবন। সন্তান না হবার দায় পুরোটাই নারীর উপর বর্তায়। এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর কোনো ডাক্তারি পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ধরে নেয়া হয় স্ত্রীই বন্ধ্যা। ফলে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়।

একাকী পেশাজীবী মায়েদের অবস্থাও এর খুব ব্যতিক্রম নয়। একটি নির্দিষ্ট পেশা বা কাজ থাকায় তার হয়ত আর্থিক টানাপোড়েন অতটা থাকে না, কিন্তু মানসিক যাতনা থাকে। সমাজের একাংশ ধরেই নেয়, ‘চাকরি করে তো তাই স্বামীর প্রতি সংসারের প্রতি মান্যিগন্যি কম। দোষ ওই নারীরই।’ একদিকে ্কাজ সামলানো অন্যদিকে সন্তান সমালানোর মতো দ্বৈত কঠিন দায়িত্বে হিমশিম খায় কর্মজীবী মা। তারপরও সমাজ তার পক্ষে নয়। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী, ‘কী আর এমন হয়েছে, একটু মানিয়ে নিলেই তো হতো। সন্তানের জন্য মায়েদের অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়!’

আত্মোন্নয়নের লক্ষ্যে নিবেদিত ও পরিচালিত এই গবেষণা কর্মটি ব্যক্তিজীবনের সাথে সম্পৃক্তি সত্তে¡ও, দেশের সংগুপ্ত সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা ও অন্ধ-সংস্কারের আড়াল উন্মোচন করে একাকী মায়েদের সামনে অন্ধ-প্রাকার ও অচলায়তন অপসারণের পথনির্দেশনা দিয়েছে। গবেষণার মৌল লক্ষ্যই ছিলো একাকী মায়েদের শিক্ষা ও পেশাগত ক্ষেত্রে সৃজিত স্থবিরতা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণের মাধ্যমে স্বচ্ছন্দ্য স্বাভাবিক জীবনধারায় পরিচালনার অনুকূল পরিবেশ সৃজনের সহায়ক ভূমিকা রাখা।

গবেষণার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশা, শিক্ষা, ব্যক্তিগত এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। ভ্রান্ত সামাজিক ধারণা, সাংস্কৃতিক অন্তরায়, প্রভুত্বের মানসিকতা প্রভৃতিও উঠে এসেছে এই গবেষণায় একাকী মায়েদের জীবনাচারের প্রতিকূলে। সামগ্রিক দুর্ভোগ নিরসন ও রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় ব্যাপক আলোচনা এবং পরামর্শ বিবেচিত হয়েছে। এভাবেই রূপান্তর-পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র তৈরিরও প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। চূড়ান্তভাবে কার্যকর যোগাযোগ ক্ষেত্র, যেমন সহায়ক মন্ডলী, বিশেষ সংরক্ষিত কোটা অথবা বর্ধিত বয়স সীমাও প্রস্তাবিত হয়েছে। তদুপরি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শিশু প্রযত্ন, প্রভৃতিও সুপারিশ করা হয়েছে। ব্যক্তি জীবনের নানা অভিঘাত এবং সামগ্রিকভাবে বিচ্ছিন্ন/ একাকী/নিঃসঙ্গ নারীদের সমাজ বাস্তবতা, জীবনাচরণের অহেতুক এবং অসঙ্গত প্রতিকূলতা, সমাজের বৈরি আচরণ, একদেশদর্শীতা প্রভৃতি অন্ধ-অপসংস্কারের বৃত্তবেষ্টনি একটি ন্যায়ানুগ লিঙ্গ বৈষম্যহীন সমাজের প্রত্যয় এবং আকাঙ্ক্ষাও এই গবেষণার অন্যতম প্রণোদনা।

তথাকথিত উচ্চমান সম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী না থাকা, গবেষণা অভিসন্দর্ভের অভাব, কর্ম-অভিজ্ঞতার স্বল্পতা প্রভৃতি একজন নারীর কর্মক্ষেত্রের পরিসর সঙ্কুচিত করে দেয়। প্রতিভা, নৈপুণ্য এবং সক্ষমতা প্রমাণের সুযোগ থেকেও তাকে বঞ্চিত করা হয়। সব রকম শিখন-প্রদান কৌশল এবং দক্ষতা সত্তে¡ও এধরণের অন্তরায়ের ফলে একজন নারীর মেধা বিকাশ পদে পদে ব্যাহত হয়। উপার্জন এবং স্বচ্ছলতা দুরূহ হয়ে পড়ে। ক্ষেত্রান্তরে স্বজন এমনকি অভিভাবকেরাও প্রত্যাশিত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন না। কখনো সঙ্কুচিত করেন, কখনো প্রত্যাখ্যান করেন।

বিবাহ সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার দায় এককভাবে নারীর উপরে চাপিয়ে যেনতেনভাবে পুনরায় ভেঙ্গে যাওয়া সংসার জোড়া দেওয়ার প্রয়াস নেন অভিভাবকেরা। বাস্তব প্রেক্ষিতেই সেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অকার্যকর হয়। আর এর দায়ভার বহুলাংশেই অযৌক্তিকভাবেই আরোপিত হয় সংশ্লিষ্ট নারীর উপরে।

লেখক মাত্র ২৬ বছর বয়সে বিবাহ-সম্পর্কের ইতি টেনে একটি শিশু সন্তানসহ দুস্তর পথ অতিক্রমণ করেছেন। চড়াই উৎরাই পার হয়েছেন। খুব কাছ থেকে, নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করেছেন একাকী নারীর নানা প্রতিবন্ধকতার অচলায়তন। নিজে সংগ্রাম করেছেন। পর্যায়ের পর পর্যায় অতিক্রম করেছেন। সাফল্যের মুখ দেখেছেন। আত্মপ্রত্যয়ী অভিব্যক্তিতে সন্নত হয়েছেন। দৃঢ়চিত্ততা তাকে সকল দুর্গম অজেয় পথ সফল অতিক্রমণে প্রত্যয়ঋদ্ধ করেছে। আর এই অভিজ্ঞতা এবং অভিজ্ঞানের আলোকেই তিনি বঞ্চিতা নারীদের, নিগৃহীতা নারীদের অবমাননার জীবন আঁকড়ে থাকার চেয়ে মানবীয় সংগ্রামী সুজীবনের পথে আহŸান জানিয়েছেন।

গ্রন্থটি একটি উচ্চতর সামাজিক গবেষণা অভিসন্দর্ভের সারকথা হলেও তা সামগ্রিকতায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমাজ বাস্তবতার প্রামাণিক দলিল হিসেবে উপস্থাপনযোগ্য। লিঙ্গ বিভাজিত এবং বৈষম্য পীড়িত সমাজ বাস্তবতায় এধরণের গবেষণা অত্যাবশ্যক।

গবেষণাকর্মে সকল নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। গবেষণা পরিচালনার প্রয়োজনে গবেষক অনুসরণ করেছেন, Heroes Journey Model (Coaching, ২০১৪). গবেষণা কর্মটি পরিচালনায় তিনি বাংলাদেশের অন্যান্য একাকী মায়েদের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেন। একাজে বহুমুখী পন্থার আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনি। যেমন, অনলাইন জার্নাল, সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রবন্ধ/ নিবন্ধ, প্রকাশিত ভিডিও ফিল্ম/ফাইল প্রভৃতি। এছাড়াও তিনি সমাজের বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষিতের প্রতিনিধিত্বশীল একাকী মায়েদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এদের মাঝে ছিলেন বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং অবিবাহিতা নারীও।

গবেষণা কর্মের প্রয়োজনে তিনি একটি প্রশ্নমালা তৈরি করে উত্তর সংগ্রহ করেন। প্রশ্নগুলি ছিলো:১। আমাদের সমাজে একাকী মা’ হওয়ার অভিজ্ঞতা আপনার কেমন? ২। একাকী মা হওয়ার হওয়ার কারণে কী কী সমস্যা আপনার জীবনযাত্রা কষ্টকর- বৈরি করে তোলে? ৩। আপনার মতে এসব অন্তরায় ও ক্লেশের কারণ কি? ৪। আপনার মতে একাকী মায়েদের এসব সমস্যা/হয়রানি উত্তরণে কি কি পদক্ষেপ/ কর্মপন্থা কার্যকর হতে পারে? ৫। বঞ্চিত নারী ও তাদের শিশুদের কল্যাণে সহায়ক কোন কর্মকান্ডে আপনি সম্পৃক্ত হতে চাইবেন কি? ৬। একাকী মাতৃত্বের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক কী কী?

গবেষণা কর্মটি পরিচালিত হয়েছে গুণগত বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে। গবেষণা পরিচালনায় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অন্তরায়, পিতৃতান্ত্রিকতা এবং এর পরিবর্তিত প্রেক্ষিত, সামাজিক নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত প্রতিকূলতা, পারিবারিক চাপ, সময় ব্যবস্থাপনা, পরিচিতি সংকট, নিঃসঙ্গতা, সন্তানের একাকীত্ব, ভয় এবং লজ্জা, মায়ের স্বাস্থ্যগত সমস্যা প্রভৃতি। এছাড়াও লেখাপড়া এবং ক্যারিয়ার গঠনের ব্যয়নির্বাহ, নিজ ও সন্তানের ব্যয়নির্বাহ, বয়সের প্রতিবন্ধতা এবং দক্ষতা প্রমাণের জন্য মানসম্মত ডিগ্রি অর্জনের বিষয়ও।

প্রাসঙ্গিকতায় বিভিন্ন সমপর্যায়ের গবেষণা এবং বিষয় সংশ্লিষ্ট উদ্ধৃতি যেমন দেওয়া হয়েছে, তেমনি প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের বিশ্লেষণও করা হয়েছে।

 গ্রন্থটি ইংরেজি ভাষায় লিখিত। বাংলায় এর অনবাদ/ভাষান্তর অধিকতর জনউপযোগী হবে। গবেষক/ লেখকের ইংরেজি প্রাণবন্ত। উপস্থাপন রীতি সমৃদ্ধ। গ্রন্থটির মুদ্রণ, বাঁধাই, উপস্থাপন মানসম্মত। প্রকাশনায় যতেœর ছাপ স্পষ্ট।

আমরা গ্রন্থটির ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা প্রত্যাশা করি। সেই সাথে একটি বাংলা ভাষান্তরের জন্যও অপেক্ষায় রইলাম।

-----------------------

 

ড. আফরোজা পারভীন
কথাশিল্পী, ঔপন্যাসিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক 
মে ০৭, ২০২১,
পান্থপথ, ঢাকা

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top