সিডনী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

বিবর্ণ প্রজাপতি (অনুগল্প) : অমিতা মজুমদার


প্রকাশিত:
১৭ জুন ২০২১ ১৯:২৬

আপডেট:
১৭ জুন ২০২১ ২০:৪৫

 

কয়েকদিন ধরে শিশিরকণার ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। কারণটা কিছুতেই ঠাওর করে উঠতে পারছে না। 

শিশিরকণা একসময়ের অপরূপ সুন্দরী। সহশিক্ষার স্কুল কলেজে পড়ার সুবাদে সহপাঠী,কিংবা উপরের ক্লাসের,অনেক সময় বয়সে বড় নীচের ক্লাসের ছেলেরাও প্রেম নিবেদন করে বসতো যখন তখন। এমনও হয়েছে অনেক শিক্ষকও আভাস দিয়েছেন চিত্ত দৌর্বল্যের।

শিশিরকণা স্বভাবগত ভাবে কিছুটা উন্নাসিক আবার ছেলেমেয়ের সম্পর্কের ভিন্নতা নিয়েও ততোটা আগ্রহী না থাকায় কোথাও এই একতরফা প্রেম জমে ওঠেনি।

বড়ো মানুষ বলতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবার স্বপ্নে বিভোর শিশির নিজের সৌন্দর্য নিয়েও তেমন সচেতন ছিল না।

সময় আর পারিপার্শ্বিকতার বৈরী আচরণে শিশিরকণার বড়ো মানুষ হবার স্বপ্ন অচিরেই হারিয়ে যায়। তারপর আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতো সেও একদিন ছাদনাতলা ঘুরে এসে ওঠে ব্রজুবাবুর ঘরে। যেটা তার এখনকার বাড় বাড়ন্ত সংসার। বেশ আছে শিশিরকণা, ব্রজবাবুর ঘর গৃহস্থালীর একচ্ছত্র অধিশ্বরী হয়ে। ছেলে মেয়ে নাতি নাতনি নিয়ে কোন কিছুরই অভাব নেই তার। তাই শিশিরকণাকে নিয়েও কারও কোনো অভিযোগ নেই। বর্ষাকে দেখে শিশিরকণার মনোবৈকল্যের কারণ কি ! শিশিরকণা নিজেও প্রথম বুঝতে পারেনি। 

বর্ষা যেন তারই প্রতিমূর্তি। ষোল বছরের নাতনি বর্ষা এবার পূজায় এসেছে। জন্মের পর এই প্রথম এসেছে মামাবাড়ি। লীনা সবসময় চিঠিতে লিখেছে, ফোনে বলেছে বর্ষা দেখতে একেবারে তোমার মতো হয়েছে। তা যে এতটা মিলে যাবে তা বোঝেনি শিশিরকণা। ছবি দেখেছে কিন্তু তারপরেও কিছু সংশয় ছিল। পাশ্চাত্যে বড়ো হওয়া বর্ষা যখন দেশীয় পোশাকে এসে সামনে দাঁড়ায়, তখন শিশিরকণা চমকে যায়। সেই গালের টোল, ভুরুর কাঁপন, চুলের ধরণ, কথা বলার ঢং সবই তাকে নিয়ে যাচ্ছে তার বয়ঃসন্ধির সেই কুসুম কোরক বেলায় বারবার।

সকলের খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায় শিশিরকণা। অকস্মাৎ সকালে শিউলিতলায় পড়ে থাকা অর্ধমৃত ডানা খসা বিবর্ণ প্রজাপতিটার কথা মনে পড়ে গেল তার।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top