সিডনী মঙ্গলবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৪, ১০ই বৈশাখ ১৪৩১

সুপরামর্শ : শিবব্রত গুহ


প্রকাশিত:
৮ জুলাই ২০২১ ২২:১১

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৪৮


গৌতম মুখার্জী হলেন এক নিপাট ভদ্রলোক। উনি থাকেন বাঁকুড়া জেলায়। উনি মানুষ হিসাবে একদম খাঁটি। ওনার কাছে কথার দাম বড় দাম। উনি কাউকে একবার কোন কথা দিয়ে দিলে, তার নড়চড় কখনো হবে না।
ওনার হৃদয় বৃহৎ। মানুষের বিপদে আপদে উনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। এককথায়, উনি হলেন একজন পরোপকারী মানুষ। 
একদিন, সকালে, উনি রেললাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছেন আপনমনে, একটি গানের কিছু লাইন গাইতে গাইতে, হঠাৎ করে তাঁর নজরে পড়লো, যে, একটি এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটে আসছে দ্রুত গতিতে, আর সেই
এক্সপ্রেস ট্রেনের দিকে ছুটে চলেছে একটি মেয়ে।
গৌতম মুখার্জী, এসব দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি চিৎকার করে, মেয়েটাকে ডাকলেন। কিন্তু, মেয়েটি
তাঁর ডাকে সাড়া দিল না। সে, আর থাকতে না পেরে, ছুটে চললো মেয়েটাকে বাঁচাতে, নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে। সত্যিই, গৌতম মুখার্জী, আপনার সাহসের কোন তুলনাই হয় না। আপনার মতো বৃহৎ হৃদয় কজনের আছে?
এই চরম স্বার্থপরতার যুগে। যে যুগে, সবাই শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। অন্যের দিকে তাকানোর কোন
সময় কারো কাছেই নেই। সমাজটা যেন বদলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।
অনেক কষ্টে, গৌতম মুখার্জী, ওই মেয়েটিকে বাঁচালেন। মেয়েটি, তো এসব দেখে হতভম্ব হয়ে গেল।
সে একটু ভয়ও পেল। মেয়েটার পরনে,  একটি গোলাপি রংয়ের সালোয়ার কামিজ।
গৌতম মুখার্জী মেয়েটিকে এক ধমক দিলেন। তাতে,  মেয়েটি ভ্যা করে কেঁদে ফেললো।
তারপর,  গৌতম মুখার্জী মেয়েটিকে শান্ত করলেন, অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে। মেয়েটি তাঁকে জানালো, যে, নাম হল সুস্মিতা সমাদ্দার। সে তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। সে পড়াশোনা করে একাদশ শ্রেণীতে। সে গত তিনবছর ধরে একটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল। সে নিজের প্রাণের চেয়েও ছেলেটিকে,  বেশি ভালোবাসতো। কিন্তু,  সেই ছেলেটি, যার নাম,  তারক বিশ্বাস,  তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, সব সম্পর্ক চুকিয়ে দেয়, তার সাথে, গতকাল সন্ধ্যায়।
তারপর,  তার মন পুরো পুরি ভেঙে যায়। কারণ,  তারক ছিল তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। সে তারককে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু, সেই সব স্বপ্ন ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। সে আজ পুরো পুরি বিধ্বস্ত। গতকাল,
সারা রাত ধরে, সে তার দুই চোখের পাতা এক করতে পারেনি। তারককে ছাড়া সে বাঁচবে কি করে? তাই,  সে আজ আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। কিন্তু,  তাতেও সে ব্যর্থ হল।
এবার, গৌতম মুখার্জী বললেন, "দেখো মা, তোমার মনের দুঃখ আমি বুঝতে পেরেছি। আসলে,
তোমাদের এখন অল্প বয়স। কিন্তু,  এই মানব জীবন অনেক অনেক বড়। এই জীবনে অনেক অনেক দুঃখ, ব্যথা, যন্ত্রণা আসবে, তাই বলে, ভেঙে পড়লে হবে না কিছুতেই। মনকে করতে হবে শক্ত।
আমি বুঝতে পারছি, তোমার মনের অবস্থা মা, কিন্তু, তুমি একবার ভেবে দেখো, তুমি যেটা করতে যাচ্ছিলে তাকি ঠিক? তুমি একবারও তোমার বাবা মায়ের কথা ভেবেছো?  ভেবেছো কি?"
সুস্মিতা মাথা নীচু করে আস্তে আস্তে বলে, "না, ভাবিনি, আসলে আমার তখন মাথার ঠিক ছিল না। আমি তখন ছিলাম না আমার মধ্যে।"
গৌতম মুখার্জী বোঝানোর ভঙ্গীতে বললেন, "তোমার ভাবা উচিত ছিল। আজ যদি তুমি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে, তোমার বাবা মায়ের কি হতো? তাঁরা তো তোমার শোকে দুঃখে উন্মাদ হয়ে যেতেন। সেটা কি ভালো হোতো?"
সুস্মিতা এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। সে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে গৌতম মুখার্জীর পায়ে পড়ে তাঁকে বলে, "আপনি আমার গুরুজন। আমি সত্যি খুব ভুল একটা কাজ করতে যাচ্ছিলাম। আমার এই কাজ করা একদম উচিত হয়নি। আপনি আজ আমার জীবন বাঁচিয়েছেন। আপনার কাছে তাই আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।"
গৌতম মুখার্জী তাকে হাসতে হাসতে বললেন, "মা, আর কেঁদো না। এবার উঠে দাঁড়াও আর চোখের জল মুছে ফেল। চোখের জল দুর্বলতার লক্ষণ। তুমি হলে একজন নারী। তোমার ক্ষমতা অসীম। আজ থেকে তুমি প্রতিজ্ঞা কর, যে, জীবনে, আর কখনো আত্মহত্যা করবে না। আত্মহত্যা মহাপাপ। তুমি তারকের কথা পুরো পুরি ভুলে গিয়ে একদম নতুন করে জীবন শুরু করবে। মন দিয়ে পড়াশোনা করে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। আর এমন কোন কাজ এরপরে, এই জীবনে তুমি করবে না, যাতে, তোমার মা - বাবা কষ্ট পান।"
সুস্মিতা উঠে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছে বলে, "তাই হবে, আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, আপনি যা যা এখন বললেন, আমি সারাজীবন ধরে তাই তাই করবো। এর অন্যথা হবে না। এখন আমি বাড়ি যাই।"
গৌতম মুখার্জী হাত নেড়ে বললেন,"খুব ভালো কথা। তবে, এখন তোমাকে একা ছাড়া ঠিক হবে না। আমি তোমার সাথে যাবো, আর তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবো। তবে, তোমার ভয় নেই, আমি তোমার মা - বাবাকে তোমার আত্মহত্যার ব্যাপারে কিছুই বলবো না। এব্যাপারে,  তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো মা।"
এবার, সুস্মিতা পুরো পুরি নিশ্চিন্ত হল। গৌতম মুখার্জী সুস্মিতাকে তার বাড়িতে নিরাপদে, পৌঁছে দিলেন। এরপর থেকে,  গৌতম মুখার্জীর সুপরামর্শ, সুস্মিতার জীবনকে পুরো পুরি বদলে দিল। এখন সুস্মিতার, জীবন জুড়ে বিরাজ করছে, আনন্দ, আনন্দ শুধুই আনন্দ।

 

শিবব্রত গুহ
কোলকাতা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top