সিডনী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিন্ন ছুটি সময়ের দাবি : শাকিলা নাছরিন পাপিয়া


প্রকাশিত:
২৩ মার্চ ২০২৩ ২২:১৫

আপডেট:
২৩ মার্চ ২০২৩ ২২:১৫

 

নতুন শিক্ষাক্রমে যুগের চাহিদা অনুযায়ী এসেছে পরিবর্তন। পরিবর্তিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে আনা হয়েছে নানামুখী যুগোপযোগী পরিবর্তন।
এই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে ম্মার্ট শিক্ষা বাস্তবায়নে যারা সরাসরি ভূমিকা রাখবেন তারা হলেন শিক্ষক। দুঃখের বিষয় শিক্ষা পদ্ধতির বাস্তবায়নে স্মার্ট শিক্ষার জন্য যে স্মার্ট শিক্ষক প্রয়োজন এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারকবৃন্দ সম্পূর্ণ উদাসীন।
শিক্ষা নিয়ে গবেষণা হলেও শিক্ষক নিয়ে কোন গবেষণা নেই। শিক্ষা আশা করে সবাই স্মার্ট কিন্তু শিক্ষক থাকবেন সনাতন।
সাত চড়ে রা না করা, মাথা নিচু করে ভাঙ্গা ছাতা হাতে আগুন লাগা রোদে হেঁটে যাওয়া, মলিন পোশাকে, দরিদ্রতার চিহ্ন ধারণ করে সালামের উত্তর দেওয়া একজন মানুষকে শিক্ষক হিসাবে দেখতে পছন্দ করে এ রাষ্ট্র এবং সমাজ। শিক্ষকের আধুনিক জীবন, স্মার্ট চলাফেরা, সাহসী উচ্চারণ, ন্যায়ের পক্ষে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো চিত্র সহ্য হয় না সমাজের উঁচু স্তরের মানুষের।
যতোবার শিক্ষক তার অধিকারের কথা বলতে গেছেন ততবার রাষ্ট্র নানা চতুরতার শৃঙ্খলে তাকে হয়রানি করেছে। নতুন শিক্ষাক্রমে বাৎসরিক ছুটি দেখানো হয়েছে ৭৬ দিন। প্রকৃতপক্ষে প্রাথমিক স্তরে এবার বাৎসরিক ছুটি ৫৪ দিন। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর অন লাইন প্রশিক্ষণ দেবার সময় ৫৪ দিন ছুটির কোন অপশনই ছিল না। বাধ্য হয়ে সেখানে ৭৬ দিন ছুটিতে টিক চিহ্ন দিতে হয়েছে শিক্ষকদের। শিক্ষকদের সাথে এই প্রতারণা কেন?
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক এই দুই স্তর আলাদা হলেও পরিবারগুলোর দিকে লক্ষ করলে দেখবো সাধারনত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যে শিক্ষার্থীরা আসে তাদের অনেকের ভাই- বোনই আছে মাধ্যমিকে। ফলে, ছুটির ক্ষেত্রে দুই স্তরে সমন্বয়হীনতা থাকলে তার প্রভাব পড়ে প্রাথমিকেই। অতীতে গ্রীষ্মের ছুটিতে তারতম্য ছিল। দেখা গেছে পরিবারগুলো মাধ্যমিক স্তরের ছুটিকে গুরুত্ব দিয়ে সেই ছুটি অনুযায়ী বেড়াতে চলে গেছে গ্রামে বা অন্যত্র।
হাজার চেষ্টা করেও অর্ধেক শিক্ষার্থী আনাও সম্ভব হয়নি। এখন তো আবার বেতের ব্যবহার নিষিদ্ধ। মানসিক আঘাত দিয়েও কিছু বলা যাবে না। ফলে, শিক্ষার্থী বা অভিভাবক নয়, মৌখিক অসম্মান বা লিখিত "শো কজ"শিক্ষকের ললাটেই জুটেছে। দেখা গেছে, এসব পরিস্থিতিতে উপর স্তর থেকে বেশি উপস্থিতি দেখিয়ে দিতে অলিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে নানা মিটিংয়ে এবং পত্রিকায় লেখালেখির পর শিক্ষার দুই স্তরের গ্রীষ্মের ছুটির সমন্বয় করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ছুটির তালিকা থেকেই বছরের শুরুতে শিক্ষকদের অসম্মান শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরো রমজান বন্ধ থাকলেও খোলা থাকবে প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ যেন সারা বছর ধরে গ্যাস আর ওয়াসার রাস্তা খোড়াখুড়ির চিত্র। সমন্বয়হীনতার হয়রানি। কোন যুক্তিতে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বন্ধ দিয়ে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?
রোজা এবং পুজার ছুটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমাদের নিজেদের শিকড় আমরা অস্বীকার করতে পারি না। রমজানের বন্ধে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রোজা রাখার চর্চা করে। আরবী শেখার জন্য এই মাসটিকে বেছে নেয়। পারিবারিক এবং সামাজিক পরিবেশে ধর্মীয় অন্য রকম আবহ বিরাজ করে। নানা দিক বিবেচনা করে রমজান মাসের এক মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। তাছাড়া, পরিবারের বড় ভাই - বোন যখন ঘরে বসে বা নানা বাড়ি, দাদা বাড়ি গিয়ে ছুটি ভোগ করবে তখন ছোটরা নিশ্চয়ই বিদ্যালয়ে আসবে না?
শেষ পর্যন্ত রমজানের ছুটিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রেখে শিক্ষকদের হয়রানি করা ছাড়া আর কিছু অর্জিত হবে না। বিদ্যালয়ের উপস্থিতি যখন তিন ভাগের এক ভাগে চলে আসবে তখন মিথ্যা উপস্থিতি দেখাতে প্রশাসন বাধ্য করবে। আমাদের ইহকাল পরকাল কোন কালই নেই। পুতুলের মতো যেমনি নাচাবে সেভাবেই নাচতে হবে।
হাজারটা ভুলে ভরা পাঠ্য বই দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমের যাত্রা। নতুন শিক্ষাক্রম দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখার আগে স্মার্ট শিক্ষক তৈরির নীতিমালা তৈরি করতে হবে। শিক্ষকতায় মেধাবী শিক্ষক এলেও তারা অসম্মানের বেতন আর অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে এখানে থাকছেন না। দলে দলে পদত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। মেধাবীদের ধরে রাখতে হলে এই পেশাকে যুগোপযোগী এবং উন্নত করতে হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে ৭৬ দিন ছুটি থাকার কথা বলা আছে। শুক্র-শনি মিলিয়ে আরও ১০৪ দিন। মোট ১৮০ দিন। শিক্ষাবর্ষ হবে ১৮৫ দিন। শুধুমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কলেজে ছুটি ৭১ দিন। শিক্ষাবর্ষ ১৯০;দিন। প্রাথমিকে ছুটি ৫৪ দিন। শিক্ষাবর্ষ ২০৭ দিন।কেন এই বৈষম্য?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিন্ন ছুটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের প্রয়োজনেই দিতে হবে। রমজানের ছুটির সাথে আমাদের ধর্মীয়, সামাজিক এবং ঐতিহ্যগত আবেগ জড়িত। সুতরাং এই ছুটি প্রথম প্রাপ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়। তারপর শিক্ষার অন্যান্য স্তর।
আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বোধদয় হবে।

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top