ফাঁদ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে) : শাহানারা পারভীন শিখা
প্রকাশিত:
১৭ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৪৮
আপডেট:
৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৫৫
মিসেস ফরিদা। বয়স বাষট্টি।
হাসপাতালে নিকট আত্মীয়কে দেখে বের হয়ে রিকশার খোঁজ করছেন।
মাঝ বয়সী এক রিকশা ওয়ালা বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে,কই যাইবেন খালাম্মা?
'মোহাম্মদপুর '
আসেন, আসেন।
ভাড়া ঠিক করে তিনি রিকশায় চেপে বসেন।
মেইন রাস্তা দিয়ে চলছে রিকশা।
কিছুদুর যেতেই রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে বলে, খালাম্মা, খালাম্মা। দেখেন রাস্তায় টাকা পইরা আছে।
মিসেস ফরিদা কৌতূহলী হয়ে নীচে তাকিয়ে দেখেন, একটা দশটাকা আর একটা বিশ টাকার নোট পড়ে আছে। রিকশাওয়ালা টাকা হাতে নিয়ে বলে, খালাম্মা। টাকা টা কি নিব?
'নাও। তবে পরে পাওয়া জিনিস একা নিতে হয় না। তুমি বিশ টাকা নিও আর কোন ফকির কে দশ টাকা দিও।
'ও খালাম্মা। এই বিশ টাকার মধ্যে শক্তমত কি জানি আছে।"
"পয়সাা হয়তো দেখো।"
মোড়ানো বিশ টাকা খুলতেই একটা চকচকে সোনার বার বেরিয়ে আসে।
"ও খালাম্মা। এই দ্যাহেন বিশ ক্যারেট সোনার বার।"
মিসেস ফরিদা সেটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে দেখেন, চকচক করছে সোনার বারটা।
"খালাম্মা গো এই দ্যাহেন একখানা চিঠি। আমি তো পড়তে পারি না। আপনি একটু পড়েন।"
চিঠিটা হাতে নিয়ে খুলে পড়তে থাকেন তিনি।
কেউ একজন তার পরিচিত কোন স্বর্ণকারের কাছে লিখেছে এটা। মেয়ের বিয়ের গয়না তৈরির কথা বলা আছে এই স্বর্ণের বারটা দিয়ে।
মিসেস ফরিদার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আহা কার যে এতবড় ক্ষতিটা হয়ে গেল!
"কি করব অহন এইডা নিয়ে খালাম্মা।"
ভাবনায় ছেদ পরে।
বলেন, দেখ পরের জিনিসে লোভ করা ঠিক না। চল এটা নিয়ে থানায় জমা দিয়ে আসি।
"না খালাম্মা। পুলিশ ঝামেলা করবে”।
আবার গ্যারেজের মালিকরে দেখালেও তো বিশ তিরিশ হাজার টাকার বেশি দেবেও না। আবার আমারে কিছু নাও দিতে পারে। কি যে করি!
এতক্ষণ রিকশা থামিয়েই কথা চলছিল তাদের।
চলেন খালাম্মা। রিকশায় যাইতে যাইতে আপনার সাথে বুদ্ধি বাইর করি। আপনি যদি এই সোনাটা নিয়ে..
এমন সময় রাস্তার অপর পাশ থেকে একজন টুপি দাড়িওয়ালা মাঝ বয়সী লোক এসে বলেন,আপা কোন সমস্যা হয়ছে নাকি আপনার। অনেকক্ষণ এখানে থেমে আছেন তো তাই জিজ্ঞেস করছি!
মিসেস ফরিদা সব ঘটনা খুলে বলেন।
"ইস রে। কি বলছেন? কিছুক্ষণ আগেই তো এক মহিলা অনেক কান্না কাটি করছিল আর বলছিল, তার সোনা হারায়ে গেছে"
"কোথায়! কোথায়!"
"রাস্তার ওপারে ঐ বিল্ডিং টার নীচে।"
রাস্তার ওপারের একটা বিল্ডিং দেখিয়ে লোকটা বলে।
কতক্ষণ আগে?
এইতো মিনিট দশেক আগে।
তাহলে চলেন ওখানে যেয়ে মহিলার খোঁজ করি হয়তো থাকতেও পারে।
না না। এতক্ষণ কি আর আছে?
মিসেস ফরিদা নাছোড়বান্দা। রিকশাওয়ালাকে বলে, চলো ঐ বিল্ডিং টার কাছে। সঙ্গের লোকটা তখন ওখান থেকে চলে যায়।
রিকশাওয়ালা বলে, খালাম্মা চলেন চইলা যায়। যাইতে যাইতে আপনার সাথে আলাপ করি। আমাকে আপনি যা ইনসাফ হয় দিয়েন। আমি গরীব মানুষ এই সোনা দিয়ে কি করমু..
"এই থামো।"
মিসেস ফরিদা রিকশা থেকে নেমে সেই বিল্ডিং এর কাছে যান। অল্প বয়সী দুজন দাড়োয়ান বসা।
এই শোন!. কিছুক্ষণ আগে কি কোন মহিলা তার সোনা হারিয়েছে বলে কান্নাকাটি করছিল এখানে?
কই না তো ম্যাডাম!
সংক্ষেপে ঘটনা বলে রিকশার কাছে এসে দেখেন সেই রিকশাওয়ালা সেখানে নাই। অন্য একটা রিকশা ধরে তিনি বাসার পথ ধরেন।
মিসেস ফরিদা কিন্তু তখনো বুঝতে পারেননি যে, তিনি একটা প্রতারণার ফাঁদে পড়েছিলেন। শুধু মাত্র চকচকে সোনার লোভে পড়েননি বলে এযাত্রা রক্ষা পেয়েছেন।
কারন হাসপাতালের স্বজনের জন্য দশহাজার টাকা ব্যাগে রাখা ছিল। কিন্তু সেদিন টাকাটা লাগেনি বলে ফেরত নিয়ে যাচ্ছিলেন।
বাসায় ফিরে ফোনে একজনকে সব ঘটনা খুলে বলেন।
সে ই তখন বলে যে, আপনি তো বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন! এরা তো প্রতারক চক্র। রাস্তা ঘাটে এভাবে চকচকে সোনার বারের লোভ দেখিয়ে সহজ সরল মহিলাদের কাছ থেকে সোনা দানা টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়। ইউটিউবে এধরণের কাহিনির খবর দেখা যায় এখন।
দেরি না করে তিনি ইউটিউবে সার্চ দিতেই দেখেন, তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার হুবহু কাহিনি।
মিসেস ফরিদা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানান। এবং শুধু মাত্র লোভ না করার দরুন বড় একটা বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন তিনি।
(উপরোক্ত ঘটনা আমার খুব কাছের এক স্বজনের সাথে ঘটেছে ক'দিন আগে। ব্যস্ত সড়কের মধ্যে দিনে দুপুরে রিকশা ওয়ালার ছদ্মবেশে প্রতারক চক্র ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের আশেপাশে। সবাই কে সতর্ক থাকতে হবে।।এধরণের ঘটনার মুখোমুখি হলে কৌশলে পুলিশে ধরিয়ে দিতে হবে।)
শাহানারা পারভীন শিখা
কবি এবং লেখক
বিষয়: শাহানারা পারভীন শিখা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: