সিডনী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

নিদ্রাহীন রাত :  সাঈদা নাঈম


প্রকাশিত:
৪ অক্টোবর ২০১৯ ২১:২২

আপডেট:
৪ মে ২০২০ ১৩:৩৫

 

ছুটির দিন, রাজেশ লিখতে বসেছে। প্রকাশককে পান্ডুলিপি দেয়ার কথা আগামীকাল। কিন্তু লেখা এগোচ্ছেই না। ছুটির দিন বলেই দুপুরে খাওয়ার পর একটু রেস্ট নিলো। তাও ঠিকমতো নিতে পারলো না। উপন্যাসের বাকি অংশের শব্দগুলো, চরিত্রগুলো মাথার ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাজেশ বসে গেল কাগজ নিয়ে। শব্দগুলো সব বন্দি করলো সুন্দর সব বাক্যে। লিখতে লিখতে চরিত্রগুলো যেন আরোও চোখের সামনে ভাসতা থাকে। লেখার উদ্দীপনা বেড়ে যায়। লিখতে থাকে একটানে। একটানে না লিখলে লেখার ধারাবাহিকতা হারিয়ে যায়। মনে হচ্ছে আজই লেখাটা শেষ করতে পারবে। লেখাটা শেষ করে কয়েকদিন বিরতি। আবার কোনো নতুন বিষয় নিয়ে ভাববে।

লিখতে লিখতে কখন যে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে টের পায়নি। ও লেখার রুমে ঢুকলে ওর স্ত্রী কখনই দরজায় নক করবে না। ও জানে এতে লেখার ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু রাত নয়টা বেজে গেছে, খাবে তো? এরপরও ডাকছে না। থাক লিখুক। লেখক হিসেবে রাজেশের সাথে সাথে ওরও তো সম্মান বাড়ে। ওর স্ত্রী হিসেবে। ও গর্ব বোধ করে স্বামীকে নিয়ে। স্বামী বেশ জনপ্রিয় তার লেখার মাধ্যমে। বইমেলায় লাইন ধরে মানুষ বই কিনে আর অটোগ্রাফ নেয়, সেলফি তুলে। আর এক মেলা শেষ হতে না হতেই প্রকাশকদের আবদার শুরু হয়ে যায়। রাজেশ প্রায়ই বলে,

বই শুধু বইমেলার জন্য কেন? মেলা ছাড়াওতো বই প্রকাশ করতে পারেন।

প্রকাশক সাহেব তখন মিষ্টি হেসে বলেন, স্যার, মেলার সময় প্রকাশিত হলে প্রচুর পাবলিসিটি আপনার সাথে আমারও হয়। এরপর বিক্রি হয় মেলার পরও। তবে কম। স্যার আপনি বলে কথা। বইপ্রেমীরা আপনার একটা উপন্যাসের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে।

মেনে নেয় রাজেশ এ কথা। কারন মানুষ আজকাল বই কেনে কম, খাওয়ার পেছনে তাদের অবাধ টাকা খরচ।

যাক, ও লেখার আজ সময় পেয়েছে। লেখাটা আজ শেষ করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে। রাত দশটার দিকে বের হয়ে ভাত খেয়ে আবার রুমে ঢুকে পড়লো। পাতার পর পাতা লিখে যাচ্ছে। এ উপন্যাসটা একটু অন্যরকম হবে। পাহাড়ে সদ্য বিবাহিত দম্পতি স্ত্রীকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে। এদিকে স্ত্রী সেটি টের পেয়ে এর আগেই পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রাজেশকে। এরপর থানা পুলিশ। কিছু আইনের ভাষা। এরজন্য আবার আইনের বই খুলে বসেছে। সবকিছু ঠিক তথ্য দিতে হবে তো। পাঠককে ভুল তথ্য দিলেই এটিই মেসেজ হয়ে থাকবে। তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সব ঠিক তথ্য দিতে।

লিখতে লিখতে উপন্যাসের প্রায় শেষ দিকে এসে পড়েছে। এখনও রাজেশ আনন্দ পাচ্ছে না। পাঠক যদি ঠিকমতো গ্রহন না করে! আসলে লেখকের তৃপ্তি মেটে না। পাঠককে ভালো কিছু দেয়ার জন্য সবসময় ব্যাকুল থাকে। না, লিখতে পারছে ঠিকমতো। লেখা এগোচ্ছে। রহস্যের জট খুলে দিয়েছে। এবার পাঠকের কৌতুহল মিটবে। রাজেশ নায়িকার কাছে কিছু প্রমাণ রেখে দিয়েছিল যা বিচারকার্যে কাজে লেগেছে। নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে স্বামীকে মেরেছে। জেনেশুনে তো কেউ মরতে চায় না? ও ধাক্কা দিয়েছিল যেন পড়ে গিয়ে হাত পা ভেঙে যায়। একেবারে মরেই যাবে ও ভাবেনি। পরের জন্য গর্ত করলে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়। আর মেরেই যখন ফেলবে তাহলে বিয়ে কেন করছিল?

তদন্ত করতে গিয়ে বের হয়ে গেল, গল্পের এই নায়ক আরো বিয়ে করেছিল এবং বিয়ের পর বেড়াতে যাওয়ার নাম করে তাদের এমনভাবে খুন করে যে কোনো প্রমাণই থাকে না। এটি তার রোগ নয়, ক্ষোভ। একটি মেয়ের সাথে ওর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি ওর সাথে প্রতারণা করার পর থেকেই ওর ভেতরে এই পশুত্বের জন্ম নেয়।

উপন্যাসের শেষ পাতা লিখে যখন একটা সিগারেট ধারালো তখন রাত তিনটা বাজে। আরো কিছু সংযোজন বিয়োজন করবে কিনা অনেক ভেবে টেবিল ল্যাম্প বন্ধ করলো। উপন্যাসটি অবশেষে শেষ হলো। সকালে প্রকাশককে দিয়ে দিবে। এই আনন্দে আর সারারাত ঘুম এলো না। নিদ্রাহীন কাটিয়ে দিলো বাকি।রাতটুকু। শুধু শেষ হলো এক প্যাকেট সিগারেট।

 

সাঈদা নাঈম
(লেখক ও প্রকাশক, সংগঠক)

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top