সিডনী বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামের ইতিহাসে মহীয়সী নারী হযরত হাওয়া আ. (১ম পর্ব) : আফরোজা অদিতি


প্রকাশিত:
২৪ জানুয়ারী ২০২০ ১১:০৯

আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২০ ১৩:২২

 

হযরত হাওয়া (আ.) বিশ্বের প্রথম নারী। তার জন্ম কথা বলার আগে মানব সৃষ্টির ইতিহাস বলা প্রয়োজন (ধর্মীয় আলোকে)। মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এবং আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ.)। হযরত আদম (আ.) এবং হযরত হাওয়া (আ.)ই মানব জাতির প্রথম পুরুষ এবং নারী। সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লা মানুষ সৃষ্টির লক্ষ কোটি বছর আগে এই বিশ্বের বুকে তাঁর ইবাদতের জন্য জ্বীন জাতির সৃষ্টি করেন। কিন্তু জ্বীনদের দ্বারা আল্লাহতা’লার উদ্দেশ্য সফল না হওয়ায় মানবজাতি সৃষ্টি করে বিশ্বে প্রেরণ করার ইচ্ছা ধারণ করেন।

মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই তিনি একদিন তাঁর ফেরেস্তাদের ডেকে বলেন, “হে ফেরেস্তাগণ আমি মাটি হইতে আমার একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করে দুনিয়ায় প্রেরণ করব।”

আল্লাহতা’লার এই কথা শুনে ফেরেস্তাদের ওস্তাদ “মুয়াল্লিমুল মালাকুত” আজাজীল সব ফেরেস্তাদের পক্ষ থেকে বললেন, “আপনি আমাদের প্রতিপালক যাবতীয় প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনার আদেশ ও ইচ্ছা আমাদের সকলের শিরোধার্য তবুও আমাদের একটা বক্তব্য আছে। আপনি মাটি দিয়ে প্রস্তুত করে যে প্রতিনিধি দুনিয়ায় পাঠাবেন, আপনার মতো মহিমান্বিত প্রতিপালকের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা তার থাকবে না। জ্বীনদের মতো এরাও দুনিয়া শাসন করতে রক্তপাত ঘটাবে। সম্পদ উপভোগ করতে অন্যের উপর জুলুম করবে। সৌন্দর্য উপভোগে অন্যের পথে বিঘ্ন ঘটাবে। এক কথায় কাম, ক্রোধ, মোহ, মদ, মাৎসর্যের টানাপোড়নে দুনিয়ার বুকে অনর্থ সৃষ্টি করবে। এর চেয়ে এমন প্রতিনিধি প্রেরণ করেন যে  আপনার প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে আপনার মর্যাদা হানি ঘটাবে না এবং আপনাকেও লজ্জিত ও দুঃখিত হতে হবে না।”

আল্লাহতা’লা আজাজীলের বক্তব্য বিশেষ ধৈর্যের সঙ্গে শুনলেন এবং বললেন, “হে মুয়াল্লিমুল মালাকুত, তোমাদের বক্তব্য যথার্থই যুক্তিযুক্ত এবং সুনিশ্চিত। তোমরা ফেরেস্তারা দিব্য দৃষ্টির অধিকারী, দিব্যজ্ঞানও তোমাদের করায়ত্ব কিন্তু তোমাদের সে দৃষ্টি ও জ্ঞানের সীমা আছে। আমার জ্ঞান অনন্ত-অসীম। আমার বর্তমান ইচ্ছা সেই অসীম জ্ঞানের ফল।”

এরপর পৃথিবী থেকে মাটি নিয়ে আজরাঈল (আ.)-এর দ্বারাই আরব দেশে সযত্নে রাখার ব্যবস্থা করেন। জিবরাঈল (আ.) এবং মাকাইল (আ.) মাটির কান্নায় পৃথিবী থেকে মাটি আনতে ব্যর্থ হওয়ায় আজরাঈল (আ.) ই পৃথিবী থেকে মানব সষ্টির মাটি সংগ্রহ করেন। সেই মাটির উপর চল্লিশ বছর রহমতের পানি বর্ষণ করেন এবং পরবর্তীতে বেহেস্তের “রাহীকে” ও “সলছাবীল” নামে দুটি নহরের পানি দিয়ে আল্লাহ স্বহস্তে আদম (আ.) এর দেহ তৈরি করেন এবং চল্লিশ বছর বেহেস্তে ফেলে রাখেন।

আজরাঈল (আ.) মাটি আনতে ব্যর্থ হননি দেখে আল্লাহতা’লা তাকে আদম সন্তানের জীবন কবজ করবার ভার দিলেন এবং উপাধি দিলেন “মালাকুল মউত”।

এদিকে আদম (আ.) এর  দেহ পড়ে থাকতে দেখে ফেরেস্তাদের কথা মতো আজাজীল এই দেহ দেখতে যায় এবং আদম (আ.) এর পেটের ভেতর ঢুকে ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাহিরে এসে ফেরেস্তাদের বলেন, “আমি এই দেহের মধ্যে ঢুকে সব ভালো করে তদন্ত করে দেখেছি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে তার সম্পূর্ণ জ্ঞান এই দেহের ভেতর আছে তবে দেহের ভেতরে এক জায়গাকে এমনভাবে সুরক্ষিত করা হয়েছে যে শত চেষ্টা করেও ঢুকতে পারলাম না। কাজেই ওই জায়গায় কী আছে তা জানতে বা বুঝতে পারিনি। তবে সন্দেহ এই যে আল্লাহতা’লা যে খলিফা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন সম্ভবত এই সেই খলিফা। তবে বিশেষ সুখের বিষয় এই দেহ অধিকাংশ সময় পেটের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে। অর্থাৎ ক্ষুধা পিপাসায় অস্থির হবে। আর এই কারণেই একে দিয়ে আল্লাহর বন্দেগী বিশেষ হবে বলে মনে হয় না।”

এদিকে আল্লাহতা’লা হযরত আদম (আ.) এর দেহকে জীবন্ত করার উদ্দেশ্যে রুহকে দেহের ভিতরে এবং আদম (আ.) সৃষ্টি করার কোটি কোটি বছর আগে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পবিত্র নূর সৃষ্টি করে রেখেছিলেন তা হযরত আদম (আ.) এর কপাল সংলগ্ন করেন এবং ফেরেস্তাদের সেজদা করতে বলেন।

সকল ফেরেস্তা তাঁকে সেজদা করলেন। এই সেজদায় তারা একশত বছর কাটিয়ে যখন মাথা উঠালেন তখন দেখতে পেলেন তাদের ওস্তাদ আজাজীল ঘাড় ফিরিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার সুন্দর জ্যোতির্ময় চেহারা কালো এবং কুশ্রী হয়ে গেছে। কারণ ফেরেস্তাগণ সেজদা করলেও আজাজীল সেজদা করেননি।

এদিকে ফেরেস্তাগণ আজাজীলের কুশ্রী চেহারা দেখে আল্লাহতা’লার শুকরিয়া আদায় করার জন্য আবার সেজদা দিলেন। এজন্য নামাজের মধ্যে প্রতি রাকা’তে দুটি করে সেজদা দেওয়ার বিধান চালু হয়েছে। সেজদা দুটি একটি আল্লাহতা’লার আদেশ পালন, অন্যটি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়।

হযরত আদম (আ.) কে জীবন দান করার পর আল্লাহ সকল ফেরেস্তাগণকে সেজদা করতে বললে সকল ফেরেস্তাগণ সেজদা করলেও আজাজীল সেজদা করেননি; কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমি আদম হতে শ্রেষ্ঠ, আমি সেজদা করবো না। আজাজীলের উত্তর অহংকারে এবং গর্বে পূর্ণ ছিল। এর প্রতিফল স্বরূপ আল্লাহতা’লা তাকে বেহেস্ত হতে বিতারিত করলেন এবং সেসময় থেকে তাঁর নাম হলো ইবলিস।

ইবলিস বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আদম (আ.) সুখে থাকতে শুরু করে। বেহেস্ত সুখের স্থান। এখানে কোনরূপ দুঃখ-কষ্ট, ভাবনা-চিন্তা, অভাব-অভিযোগ, রোগ-শোক-জরা-মৃত্যু কিছুই নেই, তবুও আদম (আ.) এর মনে শান্তি ছিল না। কিসের এক অভাব মনে মনে তিনি অনুভব করেছিলেন।

 

আফরোজা অদিতি
কবি ও কথা সাহিত্যিক

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top