সিডনী বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামের ইতিহাসে মহীয়সী নারী হযরত হাওয়া আ. (২য় পর্ব) : আফরোজা অদিতি


প্রকাশিত:
৩১ জানুয়ারী ২০২০ ১১:১৪

আপডেট:
১৪ এপ্রিল ২০২০ ০১:২১

 

আলেমুল গায়েব আল্লাহতা’লা হযরত আদম (আ.) এর মনের ভাব জানতে পেরে তাঁর মনের অশান্তি দূর করার জন্য সচেষ্ট হলেন। বেহেস্তে ঘুমের কোন প্রয়োজন ছিল না কিন্তু সেই সময় হযরত আদম (আ.) এর চোখে আল্লাহর নির্দেশে ঘুম নেমে এলো। হযরত আদম (আ.) জন্মের পর কখনো নিদ্রা যাননি কিন্তু সেই দিন তার শরীর ক্লান্তিতে অবশ হয়ে আসতে শুরু করলে তিনি বেহেস্তের এক স্থানে বসে পড়লেন এবং বসে থাকতে না পেরে শুয়ে পড়লেন, তারপর ঘুমে অচেতন হয়ে গেলেন; এই ঘুমই মানব জাতির প্রথম ঘুম।

হযরত আদম (আ.) এর ঘুমের মধ্যেই আল্লাহতা’লার নির্দেশে জিবরাঈল (আ.) বাম পাজড়ের একটা হাড় বের করে মানব জাতির আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ.) এর সৃষ্টি করলেন।

হযরত আদম (আ.) কিছুই জানতে পারলেন না। জিবরাঈল ফেরেস্তার নির্দেশে হযরত হাওয়া (আ.) হযরত আদমের পাশে বসে তাঁর মাথা ও শরীরে ধীরে ধীরে হাত বুলাতে শুরু করেন। হযরত হাওয়া (আ.) এর হাতের স্পর্শে হযরত আদম (আ.) এর ঘুম ভেঙে গেলে সামনে হযরত হাওয়া (আ.) কে দেখতে পেয়ে বিস্মিত ও আনন্দিত হলেন। হযরত হাওয়া (আ.) কে দেখে হযরত আদম (আ.) এতোই আনন্দ পেলেন যে তিনি জন্ম গ্রহণ করার পর থেকে এই পর্যন্ত অন্য কোন কিছুতেই এতো আনন্দ পাননি। তাই আনন্দ পেতেই তাঁর মনে হলো তিনি বোধহয় এই নারীর বা সঙ্গিনীর অভাবই অনুভব করছিলেন।

হযরত হাওয়া (আ.) ছিলেন অপরূপ দেহ সৌষ্ঠবের অধিকারিণী, অতুলনীয়া সুন্দরী এবং তরুণী। হযরত আদম (আ.) এবং হযরত হাওয়া (আ.) তরুণী অবস্থাতেই জন্মগ্রহণ করেন। তাদের শৈশব এবং কৈশোর বলতে কিছু নেই। হযরত হাওয়া (আ.), আদম (আ.) অপেক্ষা কিছুটা খাটো এবং পাতলা ছিলেন। তিনি বিশ্বের সর্বপ্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী।

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, “হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, পরম করুণাময় আল্লাহতা’লা এই পৃথিবীতে দুইজন নারীকে সর্বপেক্ষা নিখুঁত এবং সর্বাপেক্ষা অধিক সুন্দরী করে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মতো সুন্দরী নারী এই পৃথিবীতে কখনও সৃষ্টি হয়নি, আর হবেও না। তাদের একজন মানব জাতির আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ.) এবং অপরজন হইলেন আমার কন্যা ফাতেমা জোহরা।”
ঘুম ভেঙে হযরত আদম (আ.) হযরত হাওয়া (আ.) কেই দেখতে পেলেন। তিন বেহেস্তে অসামান্য রূপবতী অসংখ্য হুর দেখেছেন কিন্তু এমন অপরূপ, অতুলনীয় সুন্দরী তিনি কখনও দেখেননি। হযরত হাওয়া (আ.) কে দেখার আগে কোন কিছুই তাঁর মনকে এমনভাবে আকর্ষণ করেত সমর্থ হয়নি। তিনি বিস্মিত অপলক চোখে হযরত হাওয়া (আ.)-এর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন এবং তাকিয়ে থাকতে তাঁর ভাল লাগলো। কী জানি কেন হযরত হাওয়া (আ.) কে তাঁর ভাল লাগলো। তিনি আনন্দ অনুভব করলেন।

হযরত আদম (আ.) কে ঘুমন্ত অবস্থায় হযরত হাওয়া (আ.) তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন আর ঘুম ভাঙার পর হযরত আদম (আ.) হযরত হাওয়া (আ.) এর দিকে তাকালেন। দুজন দ’জনাকে দেখলেন। উভয়েই আনন্দিত হলেন, হযরত হাওয়া (আ.) আনন্দিত হলেও একটু শঙ্কিত, লজ্জিত, একটু সঙ্কুচিত হয়ে উঠলেন। এই তাঁদের প্রথম দেখা, তবুও মনে হল দুজন যেন দুজনের অনেক আপন।

হযরত হাওয়া (আ.) লজ্জিত, সঙ্কুচিত ভাব হযরত আদম (আ,) কে আরও আকৃষ্ট করলো। অনেকক্ষণ দুজনের একজনও কোন কথা বলতে পারলেন না। শুধু উভয় উভয়কে দেখতে লাগলেন এবং কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। অনেকক্ষণ পর হযরত আদম (আ.) কথা বললেন। তিনি হযরত হাওয়া (আ.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কে, কোথা হইতে এইখানে আসিলে”।
হযরত হাওয়া (আ.) লজ্জা জড়িত অথচ বিনয় ও নম্র স্বরে উত্তর দিলেন “আমি কে এবং কোথা হইতে আসিলাম তাহা আমি নিজেও বুঝিতে পারিতেছিনা। আমি তো ইহার আগে অন্য কোথাও ছিলাম না। বোধ হয় এইখানেই আমার জন্ম হইয়াছে। সম্ভবত পরম করুণাময় আল্লাহতা’লা আপনার জন্যই আমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন।

হযরত হাওয়া (আ.)-এর কথা শুনিয়া হযরত আদম (আ.) আরও বিস্মিত হলেন এবং প্রকৃত পরিচয় জানার জন্য আল্লাহতা’লার নিকট প্রার্থনা করলেন। তখন আল্লাহতা’লা তাঁকে বললেন, “হে আদম আমি তোমারই মনের শান্তির জন্য হাওয়াকে সৃষ্টি করেছি। হাওয়া তোমার সঙ্গিনী এবং একান্ত আপনজন।”

হযরত আদম (আ.) আল্লাহতা’লার কথা শুনে খুব আনন্দিত হলেন এবং হযরত হাওয়া (আ.) কে নিজের দিকে আকর্ষণ করার জন্য হাত বাড়ালেন। তখন দয়াময় আল্লাহতা’লার পক্ষ থেকে সর্তকতার বাণী ভেসে এলো “হে আদম, ক্ষান্ত হও। যদিও হাওয়াকে তোমারই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে; তবুও সে এখনই তোমার জন্য হালাল নয়। তাকে হালাল করতে হলে বিবাহ করতে হবে। আর বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।” সতর্ক বাণী শুনে হযরত আদম (আ.) সঙ্কুচিত হলেন।
তারপর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন “হে আল্লাহ এখন আমি কি করবো।” আল্লাহতা’লা তাঁর প্রার্থনার জবাবে বললেন, “হে আদম, তুমি হাওয়াকে একান্ত করে পাওয়ার জন্য আমার নিকট প্রার্থনা কর।”

হযরত আদম (আ.) তাই করলেন। দুই হাত তুলে বললেন, “হে আমার সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক তুমি যখন সর্বপ্রথম আমাকে সৃষ্টি করেছিলে তখন আমার হাঁচি হয়েছিল। ওই হাঁচির ফলে আমি শান্তি পেয়েছিলাম। এবং বলেছিলাম “আলহামদুলিল্লাহ”। আজ হাওয়াকে দেখে সত্যই আমার প্রাণে এতো আনন্দ অনুভব ও শান্তি লাভ করেছি যে আমি ওই কালামের দ্বারা তোমার কাছে লক্ষ লক্ষ শোকরিয়া আদায় করেছি। এখন দয়া করে তুমি নির্দেশ দাওÑ কিভাবে কী কাজ করলে আমি হাওয়াকে একান্ত কাছের করে পাবো।”
আল্লাহতা’লা জানালেন, “আমার ফেরেশতাগণ বিবি হাওয়ার সঙ্গে তোমার বিবাহ দিবে তার জন্য তোমাকে তিনটি কাজ করতে হবে।

১. তোমাকে পরহেজগার ও নেক আমল করতে হবে।
২. হাওয়াকে পরহেজগার ও নেক আমল শিক্ষা দিতে হবে।
৩. আমার প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা.)এর প্রতি তোমাদের দুজনকেই দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।

 

আফরোজা অদিতি
কবি ও কথা সাহিত্যিক

 

এই লেখকের অন্যান্য লেখা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Developed with by
Top